আসির প্রদেশ
আসির প্রদেশ বা আছির প্রদেশ (আরবি: عَسِيرٌ) সৌদি আরবের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রদেশ যা আছির গোত্রের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এর আয়তন ৭৬,৬৯৩ বর্গকিলোমিটার (২৯,৬১১ মা২) এবং আনুমানিক জনসংখ্যা ২,২১১,৮৭৫ (২০১৭)।[১] এটি ইয়েমেনের সাদা গভর্নোরেটের সাথে সংক্ষিপ্ত সীমানা ভাগাভাগি করে।
আসির عَسِيرٌ | |
---|---|
প্রদেশ | |
আসির প্রদেশ | |
সৌদি আরবের মানচিত্রে আছির প্রদেশ | |
দেশ | সৌদি আরব |
রাজধানী | আবহা |
বরোসমূহ | ১৩ |
সরকার | |
• গভর্নর | প্রিন্স তুর্কি বিন তালাল বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ |
আয়তন | |
• মোট | ৭৬,৬৯৩ বর্গকিমি (২৯,৬১১ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১৭) | |
• মোট | ২২,১১,৮৭৫ |
আইএসও 3166-2 | ১৪ |
ওয়েবসাইট | https://ars.gov.sa/ |
আবহা আসির প্রদেশের রাজধানী। অন্যান্য শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে খামিস মুশাইত, বিশাহ এবং বারেক। আঞ্চলিক গভর্নর হলেন তুর্কি বিন তালাল বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ (নিযুক্ত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮), যুবরাজ তালাল বিন আব্দুলাজিজ আল সৌদের পুত্র। একই দিনে তিনি তার চাচাতো ভাই, ফয়সাল বিন খালিদ বিন আব্দুলাজিজ আল সৌদের স্থলাভিষিক্ত হন।[২]
ইতিহাস
সম্পাদনা২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইলিয়াস গ্যালাস ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং বর্তমানে ইয়েমেনের হাথরামৌতের মধ্যবর্তী প্রাচীন স্থল বাণিজ্য রুটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য মিশর থেকে দক্ষিণে তার সৈন্যবাহিনীসহ ১৩৩০ মাইল যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন। রোমানরা এই রুটের নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলো কারণ তারা অর্থের জন্য মরিয়া ছিল এবং সাবার রাজধানী মারিব দখল, ধূপের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য মূল্যবান সুগন্ধী দ্বারা কিছু সংগ্রহ করার আশা করেছিলো। যেহেতু, এই অভিযানটি ছিল একটি বিপর্যয় এবং তাই 'আছির সম্পর্কে অল্প তথ্য প্রকাশ পেয়েছিলো।
তবে ১৯২০ সাল নাগাদ সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে সৌদ, সৌদ হাউসের ক্ষয়ক্ষতি পুনরুদ্ধার এবং তার শাসনের অধীনে বেশিরভাগ উপদ্বীপকে একত্রিত করতে শুরু করেন। এই অভিযানের অংশ হিসাবে, তিনি তার বেদুইন যোদ্ধাদের (ইখওয়ান নামে পরিচিত) 'আছির দখল করার জন্য পাঠিয়েছিলেন এবং তখন থেকেই 'আছির সৌদি হাউস কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। ১৯৩৪ সালে সৌদি আরব ও ইয়েমেনের মধ্যে তায়েফ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এমনকি তারপরেও এই অঞ্চলটি পশ্চিমের কাছে অজানা ছিল। ১৯৩২ সালে, জন ফিলবি প্রথম ইউরোপীয়দের মধ্যে অন্যতম যিনি উপদ্বীপটি অন্বেষণ এবং মানচিত্রে 'আছির যোগ করেছিলেন, কিন্তু তিনি ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তার পর্যবেক্ষণ প্রকাশ না করায় এলাকাটি বিশ্বের মানচিত্রে একটি ফাঁকা জায়গা হিসেবে থেকে যায়।
ভূগোল
সম্পাদনা'আছির অঞ্চলটি একটি উঁচু মালভূমিতে অবস্থিত যেখানে দেশের অন্যান্য অংশের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং আবহার নিকটে দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জাবাল সাওদা অবস্থিত, যা প্রায় ৩,০০০ মিটার (৯,৮০০ ফু) উঁচু। তথ্য অবিশ্বাস্য হলেও উঁচু ভূমিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত সম্ভবত ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিমিটার (১২ থেকে ২০ ইঞ্চি)। এই বৃষ্টিপাত দুই বর্ষাকালে হয়, যার প্রধানটি মার্চ ও এপ্রিল মাসে এবং গ্রীষ্মে কিছুটা বৃষ্টি হয়। সাধারণত বিকেলে তাপমাত্রা ৩০ °সে (৮৬ °ফা) বেশি হয়, তবুও সকালে অত্যন্ত ঠান্ডা থাকতে পারে এবং কুয়াশা, দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্য শতাংশে কমিয়ে আনতে পারে। ফলস্বরূপ, সৌদি আরবের অন্য যে কোনও অঞ্চলের চেয়ে 'আছির অঞ্চলে অনেক বেশি প্রাকৃতিক উদ্ভিদ রয়েছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এমনকি ঘন সরলবর্গীয় বনাঞ্চলও রয়েছে, যদিও আরও উন্মুক্ত অংশগুলো এখনও খুব শুষ্ক।
'আছির এমন অনেক কৃষকের আবাস যারা প্রধানত গম এবং ফলমূলের ফসল উৎপাদন করেন। সেচ আধুনিক সময়ে উৎপাদন ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেছে।
জনসংখ্যা
সম্পাদনাবছর | জন. | ব.প্র. ±% |
---|---|---|
১৯৯২ | ১৩,৪০,১৬৮ | — |
২০০৪ | ১৬,৮৭,৯৩৯ | +১.৯৪% |
২০১০ | ১৯,২৭,০৮৭ | +২.২৩% |
২০১৮ | ২২,৬১,৬১৮ | +২.০২% |
উৎস:[৩] |
গভর্নোরেট
সম্পাদনাএই প্রদেশ ১৬ টি গভর্নোরেটে বিভক্ত (সাথে ২০১০ সালে অনুযায়ী জনসংখ্যা[৪]):
- আবহা (+৩,৬৬,৫৫১)
- মুহাইল (+২,২৮,৯৭৯)
- আল-নামাস (+৫৪,১১৯)
- বিল্লাসমার (+৩৪,০৮০)
- বিল্লাহমার (+২৫,৭০৯)
- বালকার্ন
- বারেক (+৭৪,৩৯১)
- বিশাহ (+২,০৫,৩৪৬)
- খামিস মুশাইত (+৫,১২,৫৯৯)
- তানোমাহ (+৬৫,৪০৬)
- জাহরান আল-জানুব (+৬৩,১১৯)
- তাথলিথ (+৫৯,১৮৮)
- সারাত আবিদাহ (+৬৭,১২০)
- আহাদ রিফায়দাহ (+১,১৩,০৪৩)
- আল-মাজারদাহ (+১,০৩,৫৩১)
- আল-হারাজাহ
অর্থনীতি
সম্পাদনাঐতিহাসিকভাবে, 'আছির কফি, গম, আলফালফা, বার্লি, গুল্ম এবং লোবান উৎপাদন জন্য পরিচিত।[৫][৬][৭] গ্রীষ্মে এই অঞ্চলে গম জন্মায় এবং জলাবদ্ধ এলাকায় তিল জন্মায়।[৬][৮] মাদুর, টুপি এবং ঝুড়ি তৈরিতে খড় ব্যবহৃত হয়। এলাকার উপজাতিরাও খড় থেকে তাঁবু বোনে।[৯]
উন্নয়ন প্রকল্প
সম্পাদনা২০১৯ সালে, সৌদি সরকার 'আছির প্রদেশে একটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প চালু করে। প্রকল্পটির প্রত্যাশিত ব্যয় ১ বিলিয়ন সৌদি রিয়ালেরও বেশি। প্রকল্পটিতে স্বাস্থ্যসেবা, পরিবহন ব্যবস্থা এবং পৌর সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।[১০] অ-পেট্রোলিয়াম আয়ের বৈচিত্র্য আনতে এবং সৌদি আরবে নতুন কর্মসংস্থান সক্রিয় করতে প্রকল্পটি সৌদি ভিশন ২০৩০ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।[১০]
গভর্নরের তালিকা
সম্পাদনা- খালিদ বিন ফয়সাল (১৯৭১–২০০৭)
- ফয়সাল বিন খালিদ (২০০৭–২০১৮)
- তুর্কি বিন তালাল বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ (২০১৮–বর্তমান)
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Population Characteristics surveys" (পিডিএফ)। General Authority for Statistics। ২৮ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ "A number of Royal Orders Issued 9 Riyadh The official Saudi Press Agency"। www.spa.gov.sa। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-১৬।
- ↑ "Saudi Arabia: Regions and Cities"। City Population। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ "Asir Governorates Population"। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জানুয়ারি ২০২১।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Prothero, G.W. (১৯২০)। Arabia। London: H.M. Stationery Office। পৃষ্ঠা ৮৩। ২০১৬-১২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-১৫।
- ↑ ক খ Prothero, G.W. (১৯২০)। Arabia। London: H.M. Stationery Office। পৃষ্ঠা ৮৪। ২০১৬-১২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-১৫।
- ↑ Prothero, G.W. (১৯২০)। Arabia। London: H.M. Stationery Office। পৃষ্ঠা ৮৬। ২০১৬-১২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-১৫।
- ↑ Prothero, G.W. (১৯২০)। Arabia। London: H.M. Stationery Office। পৃষ্ঠা 85। ২০১৬-১১-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-১৫।
- ↑ Prothero, G.W. (১৯২০)। Arabia। London: H.M. Stationery Office। পৃষ্ঠা ৯৯। ২০১৬-০৮-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৮-১৫।
- ↑ ক খ "Saudi Arabia to launch plan for multibillion infrastructure projects in Asir"। Arab News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৩-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-১৬।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- "আছির"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। ১৯১১। পৃষ্ঠা ৪৪৩। অজানা প্যারামিটার
|খন্ড=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - আছির জাতীয় উদ্যান