লিওপোল্ড ইনফেল্ড

পোলীয় পদার্থবিজ্ঞানী

লিওপোল্ড ইনফেল্ড (২০ আগস্ট ১৯৯৮ - ১৫ জানুয়ারি ১৯৬৮) ছিলেন দীর্ঘ সময় পোল্যান্ড এবং কানাডায় কর্মরত (১৯৩৮-১৯৫০) একজন পোলিশ পদার্থবিদ। তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রকফেলার ফেলো (১৯৩৩-১৯৩৪) এবং পোলিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেসের সদস্য ছিলেন।[১]

লিওপোল্ড ইনফেল্ড
ইংরেজি: Leopold Infeld
১৯৬০ সালে লিওপোল্ড ইনফেল্ড
জন্ম২০ আগস্ট ১৮৯৮ (1898-08-20)
মৃত্যু১৫ জানুয়ারি ১৯৬৮ (1968-01-16) (বয়স ৬৯)
নাগরিকত্বঅস্ট্রীয় (১৮৯৮–১৯১৮)
পোলিশ (1918–1968)
কানাডীয় (১৯৩৯–৫০)
মাতৃশিক্ষায়তনজাগিলোনিয়ান ইউনিভার্সিটি
পরিচিতির কারণইনফেল্ড–ভ্যান ডার ওয়ার্ডেন প্রতীক
বোর্ন–ইনফেল্ড থিওরি
আইনস্টাইন–ইনফেল্ড–হফমান সমীকরণ
ইনফেল্ড–হাল উৎপাদকে বিশ্লেষণ পদ্ধতি
সন্তানএরিক ইনফেল্ড [pl]
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রপদার্থবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানসমূহকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
জাগিলোনিয়ান ইউনিভার্সিটি
ইউনিভার্সিটি অব লভোভ
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়
ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো
ডক্টরেট শিক্ষার্থীআলফ্রেড শিল্ড
আন্দ্রেজ ট্রটম্যান
পি. আর. ওয়ালেস

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

লিওপোল্ড ইনফেল্ডের জন্ম পোল্যান্ডের, ক্রাকোফের একটি ইহুদি পরিবারে। যা তৎকালে অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের অংশ ছিল (এবং ১৯১৮ সালে স্বাধীন পোল্যান্ডের অন্তর্গত হয়)। তিনি ক্রাকোফ-এ অবস্থিত জাগিলোনিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। ১৯২০ সাল থেকে তিনি বার্লিনে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য অ্যালবার্ট আইনস্টাইন এর শরণাপন্ন হয়েছিলেন।[২] তিনি ১৯২১ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করবন। ১৯৩৩ সালে তিনি ইংল্যান্ড এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে এবং তার দ্বিতীয় স্ত্রী হ্যালিনার মৃত্যুর পর তিনি কানাডায় চলে যান।

কর্মজীবন সম্পাদনা

 
১৯৩৮ এ লিওপোল্ড ইনফেল্ড

ইনফেল্ড আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তাকে ১৯২১ সালে জাগিলোনিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট প্রদান কিরা হয়। ইউনিভার্সিটি অব লভোভ-এ একজন সহকারী ও ডোসেন্ট (অধ্যাপক) হিসেবে ১৯৩০ থেকে ১৯৩৩-এ এবং ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোতে একজন অধ্যাপক হিসেবে ১৯৩৯ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৮ সালে আলবার্ট আইনস্টাইন এর সহযোগী ছিলেন। তারা উভয়ে তারকার গতিপথ বর্ণনার সমীকরণ তৈরি করেন। এছাড়াও যৌথভাবে একটি বই লিখেছিলেন যার নাম ছিল দ্য এভোল্যুশন অব ফিজিক্স

১৯৪৫ সালে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রথম ব্যবহারের পর, ইনফেল্ড আইনস্টাইনের মতো একজন শান্তিকর্মী হয়ে ওঠেন। তার কর্মকাণ্ডের কারণে কমিউনিস্ট ভাবাপন্নতার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ১৯৫০ সালে তিনি কানাডা ছেড়ে কমিউনিস্ট পোল্যান্ডে ফিরে আসেন। সে সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে পারেননি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার সময় তিনি রোজেনবার্গদের মতো সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার সম্ভাব্য বিপদে ছিলেন।

তিনি অনুভব করতেন যে পোল্যান্ডকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে পুনর্গঠনের জন্য বিজ্ঞানের প্রসারে সাহায্য করা তার একটি দায়বদ্ধতা। তিনি ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে পোলিশ ফিজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময়ের কট্টর কমিউনিস্ট-বিরোধী প্রেক্ষাপটে, কানাডিয়ান সরকার এবং মিডিয়ার অনেকেই ভয় পেয়েছিলেন যে একটি কমিউনিস্ট দেশে কাজ করার ফলে তিনি হয়তো পারমাণবিক অস্ত্রের গোপনীয়তার প্রশ্নে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন। তার কানাডিয়ান নাগরিকত্ব বাতিল করা হয় এবং দেশদ্রোহী হিসাবে ব্যাপকভাবে নিন্দা করা হয়। বাস্তবে, ইনফেল্ডের গবেষণা ক্ষেত্রটি ছিল আপেক্ষিকতার তত্ত্ব যা সরাসরিভাবে পারমাণবিক অস্ত্র গবেষণার সাথে যুক্ত নয়। ইনফেল্ডের পোল্যান্ডে ফিরে আসার পর, তিনি টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়, এবং ইনফেল্ড তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী জারি করে এবং ইনফেল্ডকে মরণোত্তর ইমেরিটাস অধ্যাপক উপাধি দেয়। পোল্যান্ডে ফিরে আসার পর, ইনফেল্ড ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক হন, এই পদে তিনি আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন।

ম্যাক্স বর্ন এবং লিওপোল্ড ইনফেল্ডের নামে বর্ন-ইনফেল্ড মডেলের নামকরণ করা হয়েছিল, যা তারাই প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন। ইনফেল্ড-হাল উৎপাদকে বিশ্লেষণ পদ্ধতি শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণের সমাধানগুলোর সাধারণ সেটগুলিকে বর্ণনা করে।

ইনফেল্ড ১৯৫৫ সালের রাসেল-আইনস্টাইন ম্যানিফেস্টোর ১১ জন স্বাক্ষরকারীর মধ্যে একজন এবং তিনিই একমাত্র স্বাক্ষরকারী যিনি নোবেল পুরস্কার পাননি। প্রধানমন্ত্রী ইউজেফ সিরাঙ্কিয়েভিচ এর নিকট সংস্কৃতির স্বাধীনতা সম্পর্কিত ১৯৬৪ সালে প্রেরিত পত্র, তথাকথিত লেটার অব থার্টি ফোর এর ৩৪ জন স্বাক্ষরকারীদের একজন ছিলেন তিনি।

ইনফেল্ড কোয়েস্ট: অ্যান অটোবায়োগ্রাফি এবং জীবনীগ্রন্থ হুম দ্য গডস লাভ: দ্য স্টোরি অব এভারিস্ত গ্যালোয়া-র রচয়িতা।

১৯৩৯ সালে তিনি আমেরিকান গণিতবিদ হেলেন শ্লাউচকে বিয়ে করেন।[৩]

প্রকাশনা সম্পাদনা

  • ইনফেল্ড, লিওপোল্ড (১৯৫০)। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন: হিজ ওয়ার্ক অ্যান্ড ইটস ইনফ্লুয়েন্স অন আওয়ার ওয়ার্ল্ড। চার্লস স্ক্রিবনারস সনস। 
  • Infeld, L.; Hull, T. E. (১৯৫৩)। "Factorization Method"। Rev. Mod. Phys.23 (1): 21। ডিওআই:10.1103/RevModPhys.23.21বিবকোড:1951RvMP...23...21I 
  • ইনফেল্ড, লিওপোল্ড (২০০৬) [১৯৬৫]। কোয়েস্ট: অ্যান অটোবায়োগ্রাফি (পুনর্মুদ্রিত সংস্করণ)। আমেরিকান ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি। আইএসবিএন 0-8218-4073-8 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Bergmann, Peter G. (মার্চ ১৯৬৮)। "Obituary: Leopold Infeld, Authority on Field Theory and Relativity": 113। ডিওআই:10.1063/1.3034808  
  2. Current BiographyH.W. Wilson Company। ১৯৪১। 
  3. Green, Judy; LaDuke, Jeanne (২০০৮)। Pioneering Women in American Mathematics — The Pre-1940 PhD's। History of Mathematics। 34 (1st সংস্করণ)। American Mathematical Society, The London Mathematical Societyআইএসবিএন 978-0-8218-4376-5  Helen Schlauch biography on p.309-312 of the Supplementary Material at AMS

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  উইকিউক্তিতে লিওপোল্ড ইনফেল্ড সম্পর্কিত উক্তি পড়ুন।