যশোর সরকারি মহিলা কলেজ

বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের যশোর জেলা একটি স্নাতকোত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

যশোর সরকারি মহিলা কলেজ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা বিভাগের যশোর জেলা শহরে অবস্থিত একটি স্নাতকোত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

যশোর সরকারি মহিলা কলেজ
নীতিবাক্যপ্রভু আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর
ধরনসরকারি কলেজ
স্থাপিত১৯৬৫
অধ্যক্ষপ্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব (অধ্যক্ষ)
শিক্ষার্থী৫,৯৭৪ (প্রায়)
ঠিকানা
বুরহান শাহ সড়ক
, , ,
২৩°১০′০১″ উত্তর ৮৯°১১′৫৬″ পূর্ব / ২৩.১৬৬৮২৯° উত্তর ৮৯.১৯৮৯২৮° পূর্ব / 23.166829; 89.198928
শিক্ষাঙ্গনশহর
ওয়েবসাইটwww.jgmc.gov.bd
মানচিত্র

ইতিহাস সম্পাদনা

দক্ষিণ বাংলায় নারী শিক্ষার প্রসারে যশোরের বিদ্যোৎসাহীদের প্রচেষ্টায় ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যশোর মহিলা কলেজ। ১৯৮০ সালে কলেজটি 'যশোর সরকারি মহিলা কলেজ' নামে জাতীয়করণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কলেজটি এই এলাকার নারী শিক্ষায় এবং সার্বিকভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। উচ্চমাধ্যমিক, ডিগ্রি (পাস), ডিগ্রি (অনার্স) এবং মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান করা হয়। বর্তমানে কলেজে ৯টি বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স চালু আছে।[১]

প্রাক-ইতিহাস এবং পরিচালনা কমিটি সম্পাদনা

ঐতিহ্যের ধারক-বাহক, নারী শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত এই কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাসও ঘটনাবহুল। যশোরে অনেক আগে থেকেই নারী শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলেও কার্যকর এবং সফল উদ্যোগ গৃহীত হয় বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম দিকে। এই জেলায় ১৯৪১ সালে ‘যশোর কলেজ, (পরবর্তীকালে মাইকেল মধুসূদন কলেজ) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এখানে সহশিক্ষা প্রচলিত থাকায় মেয়েরাও অধ্যয়নের সুযোগ পেতেন। কিন্তু এই অঞ্চলের রক্ষণশীল সমাজের সভ্যগণ তাঁদের কন্যা সন্তানদেরকে উক্ত কলেজে (যশোর কলেজ) প্রেরণ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন না। ফলে এখানে একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে।

এই কাজটি সম্পাদনের লক্ষ্যে ২৮ আগস্ট, ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখে যশোরের জেলা প্রশাসক জনাব এ.বি.এম.গোলাম মোস্তফা (সি.এস.পি.)-এর সভাপতিত্বে যশোরে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় যশোরে একটি মহিলাকলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সভায় মোট ৩৩ জন উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন সর্বজনাব এ.বি.এম. গোলাম মোস্তফা, ডি.সি যশোর; জেড.এ চৌধুরী, এ.ডি.সি যশোর; আহম্মদ আলী সরদার,এম.এন.এ; শরাফতুল্লাহ; এস.এইচ. রহমান, এস. ডি. ও, যশোর সদর; আব্দুল হাসিব; এস.এ আলিম খান; ডা: আহাদ আলী খান; এস. গোলাম মোস্তফা; এম.এ. ওহাব; অ্যাডভোকেট আল-হুসেন; ম্যানেজার, ইউনাইটেড ব্যাংক, যশোর; খন্দকার জহুরুল হক; মো: বশির; ম্যানেজার, বেঙ্গল টেক্সটাইল মিলস, যশোর; এন.এন. ঘোষ, ভাইস চেয়ারম্যান, মিউনিসিপ্যাল কমিটি; সুধীর কুমার ঘোষ; ই.এ নোমানী; শামসুল হুদা; এম. রওশন আলী; সৈয়দ গোলাম নকীব;বেগম আয়েশা সরদার; এম. হাসান, প্রেসিডেন্ট, এসোসিয়েশন অব ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ; সাবির আহম্মদ; ডা: কাজী ওবাইদুল হক, এম.বি.বি.এস; মো. মশিউর রহমান, অ্যাডভোকেট; মো. নুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট; মো. বি.সিকদার; মোবারক আলী; সৈয়দ শামসুর রহমান, অ্যাডভোকেট; ফজলুর রহমান, অধ্যক্ষ এম.এম. কলেজ; এ.এম.বদরুল আলী, এল.এল.বি; বেগম আর.বি নূরজাহান, প্রধান শিক্ষিকা, এম.এস. টি.পি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়; এম.এ.সামাদ এবং তোফাজ্জেল হোসেন।

১৯৬৫ সনের সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৪৭ জন ছাত্রী নিয়ে যশোর মহিলা কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। স্থানীয় মাইকেল মধুসূদন কলেজ ভবনের একটি অংশ প্রথমে কলেজটি চালু হয়। সেখানে ১৯৬৬ সনের ২০ জুলাই, পর্যন্ত ক্লাস চলার পর কলেজটিতে নিজস্ব নবনির্মিত দ্বিতল ভবনে স্থানান্তরিত করা হয়। কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় প্রধানত জনসাধারণের প্রদত্ত চাঁদা ও স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে। অতঃপর সরকার কলেজটির উন্নয়নকল্পে ১৯৬৫ সনে ৩,২০০ টাকা এবং ১৯৬৭-৬৮ সনে ৭০,০০০ টাকা প্রদান করেন। ১৯৬৬-৬৭ সনে কলেজের আবর্তক ব্যয় নির্বাহের জন্য ১৮,০০০ টাকা প্রদান করেন। ১৯৬৭ সনে স্নাতক শ্রেণিতে ‘মানবিক’ এবং পরবর্তী বৎসরে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ‘বিজ্ঞান’ পাঠ্যক্রম প্রবর্তিত হওয়ায় কলেজটি প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা লাভ করে। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ড এবং স্নাতক শ্রেণীর জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কলেজটি অনুমোদিত হয়।[২]

শিক্ষাকার্যক্রম সম্পাদনা

উচ্চমাধ্যমিক, ডিগ্রি (পাস), ডিগ্রি (অনার্স) এবং মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান করা হয়। বর্তমানে কলেজে ৯টি বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স চালু আছে।[১]

বিভাগ সমূহ: সম্পাদনা

স্নাতক (সম্মান) কোর্স সম্পাদনা

  • বাংলা
  • ইংরেজী
  • অর্থনীতি
  • রাষ্টবিজ্ঞান
  • দর্শন
  • ইতিহাস
  • ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
  • ইসলামীশিক্ষা এবং
  • ভূগোল ও পরিবেশ[৩]

মাস্টার্স কোর্স সম্পাদনা

  • বাংলা
  • ইংরেজী
  • অর্থনীতি
  • রাষ্টবিজ্ঞান,দর্শন
  • ইতিহাস
  • ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
  • ভূগোল ও পরিবেশ[৩]

বর্তমান শিক্ষার্থী ও পরিকাঠামো সম্পাদনা

বর্তমানে কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫,৯৭৪ জন শিক্ষাথী রয়েছে। কলেজটিতে ৩টি ছাত্রী নিবাসে ৪৯০ টি ছিট আছে। ৫টি ভবনে ২৫টি শ্রেনিকক্ষ রয়েছে। ১টি কম্পিউটার ল্যাব আছে। কলেজ পরিবহন ব্যবস্থা ১টি বাস আছে। কলেজটিতে ক্যান্টিন, ফুলের বাগান, শহীদ মিনার[৪], প্রাণি মিউজিয়াম, ছাত্রী কমন রুম কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি রয়েছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা ১৩,১৪২। এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১০,০০০। সাহিত্য পত্রিকা, দেওয়াল পত্রিকা ও কলেজ ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় [১]

উৎসব, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদনা

উৎসবমুখর পরিবেশে যশোর সরকারি মহিলা কলেজে পিঠা উৎসব হয়। এ উৎসবে ছাত্রীরা ভাবা, চিতই, নকশী, রসমালাই, কুলি সহ হরেক রকমের পিঠা পুলি প্রদর্শন করেন।[৫]

বহি: ক্রীড়া ব্যবস্থা সম্পাদনা

  • ভলিভল
  • হ্যান্ডবল
  • ব্যাডমিন্টন

অন্ত: ক্রীড়া ব্যবস্থা সম্পাদনা

  • কেরাম
  • টেবিলটেনিস
  • দাবা

সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা সম্পাদনা

  • গান
  • নৃত্য
  • কবিতা আবৃতি
  • কৌতুক
  • নাটক

বর্তমান শিক্ষক ও কর্মচারীদের সংখ্যা সম্পাদনা

কলেজটিতে বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা প্রায় ৫২ জন।[৬] এবং অফিস কর্মকর্তার সংখ্যা ৯ জন।[৭]

সহকার্যক্রম সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

যশোর সরকারি মহিলা কলেজ প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ মে ২০২১ তারিখে

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "অধ্যক্ষের বার্তা" [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. Dhakatimes24.com। "ঐতিহ্যে-অবদানে যশোর সরকারি মহিলা কলেজ"Dhakatimes News। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২১ 
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৩ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২১ 
  4. "যশোর সরকারি মহিলা কলেজে শহীদ মিনারের উদ্বোধন"ALOKITO UKHIYA (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০২-২১। ২০২১-১১-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২১ 
  5. Alo, যশোরের আলো :: Jashorer। "যশোর সরকারি মহিলা কলেজে পিঠা উৎসব"Jashorer Alo (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-২১ 
  6. "বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষিকা"। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২১ 
  7. "অফিস স্টাফ"। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০২১