লেগ বিফোর উইকেট

ক্রিকেটের আইন

ক্রিকেট খেলায় লেগ বিফোর উইকেট বা এল.বি.ডব্লিউ - একটি উপায় যার ফলে ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যায়। একজন আম্পায়ার এই সিদ্ধান্ত নেন, তবে ফিল্ডিং এ থাকা খেলোয়ারদের অবশ্যই আম্পায়ারের কাছে আবেদন (অ্যাপিল) করতে হয় ।[১] আম্পায়ার যদি মনে করেন, স্ট্যাম্পে লাগার পথে বল ব্যাট ও গ্লাভসে না লেগে শরীরের অন্য কোন অংশে (সাধারণত প্যাডেই লাগে) লেগে, উইকেটে যাবার পথে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, তবে তিনি এল.বি.ডব্লিউ আউট ঘোষণা করতে পারেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তটি বিভিন্ন মানদণ্ডের উপর নির্ভর করে, যেমন বলটি কোথায় পড়েছিল, উইকেটের সামনা সামনি বল আঘাত করেছিল কিনা, এবং ব্যাটসম্যান বলটি মারার চেষ্টা করেছে কিনা।

ব্যাটসম্যানরা যখন বল দিয়ে তাদের উইকেটে আঘাত করা রোধ করতে তাদের প্যাড ব্যবহার করতে শুরু করেছিল তখন এই ধরনের একটি আইন আনার কথা ভাবা হয় এবং ১৭৭৪ সালে, প্রথম, ক্রিকেটের আইনে লেগ বিফোর উইকেটে আউট হওয়া অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে, বল কোথায় পড়া উচিত এবং বলটি নিয়ে ব্যাটসম্যানের উদ্দেশ্য কি, সে বিষয়ে অনেক পরিমার্জন করা হয়। আইনটির ১৮৩৯ সালের সংস্করণে এমন কিছু শব্দ ব্যবহৃত হয়েছিল যা প্রায় ১০০ বছর ধরে চালু ছিল। তবে, উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে, ব্যাটসম্যানরা তাদের আউট হবার ঝুঁকি কমাতে "প্যাডে খেলা" -তে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছিল। সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রস্তাবের পর, ১৯৩৫ সালে আইনটির সীমা প্রসারিত করা হয়েছিল, এরপর থেকে, এমনকি, বলটি অফ স্টাম্পের লাইনের বাইরে ফেললেও ব্যাটসম্যান এলবিডব্লিউ আউট হতে পারে। সমালোচকদের মতে এই পরিবর্তনের ফলে খেলাটি আকর্ষণ হারিয়েছিল, কারণ এরফলে লেগ স্পিন বোলিংয়ের মাধ্যমে নেতিবাচক কৌশলের প্রয়োগ বেড়ে গিয়েছিল। যথেষ্ট বিতর্ক এবং বিভিন্ন পরীক্ষার পরে, ১৯৭২ সালে এই আইনে আবার পরিবর্তন আনা হয়েছিল। নতুন সংস্করণে, প্যাডে খেলা হ্রাস করার প্রয়াসে, ব্যাটসম্যানরা তাদের ব্যাট দিয়ে বলকে না মারলে, কিছু পরিস্থিতিতে এল.বি.ডব্লিউ আউট হয়ে যাবে। ১৯৯০ এর দশক থেকে দূরদর্শনে পুনঃপ্রদর্শনের (রিপ্লে) সহজলভ্যতা এবং পরবর্তীকালে আম্পায়ারদের সহায়তা করার জন্য বলকে অনুসরণকরণ (ট্র্যাকিং) প্রযুক্তি, বড় ম্যাচগুলিতে এল.বি.ডব্লিউয়ের শতাংশ বাড়িয়েছে। তবে প্রযুক্তির যথার্থতা এবং এর ব্যবহারের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক থেকে গেছে।

১৯৯৫ সালের ক্রিকেট আইন সমীক্ষায় জেরাল্ড ব্রডরিব বলেছেন: "এল.বি.ডব্লিউয়ের মত বিতর্ক কোনও আউটের ক্ষেত্রেই হয়না; শুরু থেকেই একে নিয়ে সমস্যা হয়ে আসছে"।[২] জটিলতার কারণে আইনটি সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপকভাবে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে এবং এটি দর্শক, প্রশাসক ও ধারাভাষ্যকারীদের কাছে বিতর্কিত প্রমাণিত হয়েছে; এল.বি.ডব্লিউ সিদ্ধান্তের কারণে কখনও কখনও খেলায় দর্শকদের ঝামেলা হয়েছে। আইন প্রবর্তনের পর থেকে এল.বি.ডব্লিউ আউটের অনুপাত নিশ্চিতভাবে বেড়েছে।[৩]

সংজ্ঞা সম্পাদনা

 
নীল রঙের ছায়াযুক্ত অঞ্চলটি কোনও ক্রিকেট পিচের উইকেটের লাইনে আছে বলা হয়।

লেগ বিফোর উইকেটের (এল.বি.ডব্লিউ) সংজ্ঞাটি বর্তমানে মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) লেখা ক্রিকেটের আইনের ৩৬ নং ধারায় আছে।[৪] কোনও ব্যাটসম্যানকে এল.বি.ডব্লিউ আউট করার জন্য ফিল্ডিং দলকে আম্পায়ারের কাছে অবশ্যই আবেদন করতে হবে।[৫] যদি বোলার একটি নো বল করে - যেটি একটি অবৈধ বল - ব্যাটসম্যান কোনও পরিস্থিতিতেই এল.বি.ডব্লিউ আউট হবে না।[৪] অন্যথায়, ব্যাটসম্যানকে এল.বি.ডব্লিউ আউট করার জন্য, বলটি যদি বাউন্স করে, অবশ্যই সেটিকে উইকেটের লাইনে বা উইকেটের অফসাইডে পড়তে হবে।[টীকা ১][টীকা ২] তারপরে বলটি প্রথমে ব্যাটসম্যানের ব্যাট স্পর্শ না করে তার শরীরের কোন অংশকে আঘাত করতে হবে,[টীকা ৩] যে অংশটিকে উইকেটের লাইনে থাকতে হবে এবং সেটি না থাকলে বল স্টাম্পে আঘাত করতে পারত কিনা সেটি দেখতে হবে। উইকেটে লাগবে এমন কোন বল অফ স্টাম্পের লাইনের বাইরে পড়লেও, ব্যাটসম্যান যদি তার ব্যাট দিয়ে বলটিকে মারার চেষ্টা না করে তবেও সে এল.বি.ডব্লিউ আউট হয়ে যেতে পারে। আম্পায়ারকে অবশ্যই ধরে নিতে হবে যে বলটি ব্যাটসম্যানকে আঘাত করার পরে একই পথে যাবে, এমনকি যদি স্টাম্পে লাগার আগে সেটি বাউন্সও করে তাহলেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।

একজন ব্যাটসম্যান, তার পায়ে বল না লাগলেও এল.বি.ডব্লিউ আউট হতে পারে: উদাহরণ স্বরূপ, মাথায় বল লাগলে একজন ব্যাটসম্যান এল.বি.ডব্লিউ আউট হতে পারে, যদিও এই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিরল। তবে, স্টাম্পের লেগ সাইডে বলটি পড়লে ব্যাটসম্যান এল.বি.ডব্লিউ হবে না ("লেগ স্টাম্পের বাইরে"),[টীকা ৪] বলটি উইকেটে লাগতে পারত, এমন সম্ভাবনাতেও সে আউট হবেনা।[৯] একইভাবে, যে ব্যাটসম্যান তার ব্যাট দিয়ে বলটি মারার চেষ্টা করেছে তাকে এল.বি.ডব্লিউ করা যায় না, যদি বল স্টাম্পের লাইনের বাইরে তাকে আঘাত করে।[১০] অবশ্য, ক্রিকেটের কিছু শট, যেমন সুইচ হিট বা রিভার্স সুইপ, ব্যাটসম্যানের ডান এবং বাম হাতি অবস্থানের মধ্যে পরিবর্তন ঘটায়; এর ফলে স্টাম্পের অফ এবং লেগ সাইডের অবস্থানও পরিবর্তিত হয়, যেটি আসলে ব্যাটসম্যান ডান হাতি না বাম হাতি তার দ্বারা নির্ধারিত হয়। আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে বোলার তার রান আপ শুরু করার সময় ব্যাটসম্যানের অবস্থান দ্বারা অফ সাইডটি নির্ধারিত হয়।[৪][১১][১২]

বহিঃস্থ চিত্র
  এল.বি.ডব্লিউ আইনকে চিত্রিত করে বিবিসির স্লাইড শো

আম্পায়ারদের জন্য এমসিসির নির্দেশিকা অনুসারে, এলবিডব্লিউ সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় যে বিষয়গুলি বিবেচনা করা উচিত সেগুলির মধ্যে হল, বলটির কৌণিক অভিমুখ দেখা এবং বলটি হাওয়ায় বেঁকেছিল কিনা তা দেখা। গায়ে লাগার সময় আম্পায়ারকে বলের উচ্চতা এবং ব্যাটসম্যান উইকেট থেকে কতটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাও দেখতে হবে; এই তথ্য থেকে তাঁকে অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে যে বলটি স্টাম্পের উপর দিয়ে যাবে না তাকে আঘাত করবে।[১৩] এমসিসির নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে বলটি মাটিতে না পড়ে যখন ব্যাটসম্যানের গায়ে লাগে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ, কিন্তু বলটি মাটিতে পড়ার পরে ব্যাটসম্যানের গায়ে লাগলে অসুবিধা আরও বেড়ে যায় এবং সমস্যা আরও বেড়ে যায়, যখন বলের মাটিতে পড়া এবং ব্যাটসম্যানের গায়ে লাগার মধ্যে সময় কম থাকে।[১৩]

টীকা সম্পাদনা

  1. On a cricket pitch, there is a set of stumps at each end. The ball pitches in line with the wickets if, when bowled, it lands in the area directly between these stumps.[৬]
  2. For a right-handed batsman, the off side is the right-hand side of the pitch when viewed from his perspective. For a left-handed batsman, the off side is the left-hand side.[৭]
  3. In the Laws of Cricket, the batsman's bat is considered to include the hand or hands holding it.[৮]
  4. For a right-handed batsman, the leg side is the left-hand side of the pitch when viewed from his perspective. For a left-handed batsman, the leg side is the right-hand side.[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Law 36 of the Laws of Cricket"। ৩১ আগস্ট ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১০ 
  2. Wikitext:Brodribb, p. 241.
  3. Miller, p. 1.
  4. "Law 36 – Leg before wicket"। MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  5. "Law 31 – Appeals"। MCC। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  6. "LBW: Batsman is out"। BBC Sport। ৮ নভেম্বর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৩ 
  7. Williamson, Martin। "A glossary of cricket terms"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১২ 
  8. "Law 6 (The bat)"। Marylebone Cricket Club। ২০১০। ৩০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১৩ 
  9. "Ways of getting out: Leg before wicket"। BBC Sport। ২৬ আগস্ট ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১২ 
  10. "Not out LBW: Outside line of off stump"। BBC Sport। ৮ নভেম্বর ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ৫ মার্চ ২০১২ 
  11. Bull, Andy (১৭ জুন ২০০৮)। "MCC endorses Pietersen's switch-hitting"। London: The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১৩ 
  12. "MCC looking at switch hit options"। MCC। ১০ মে ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১৩ 
  13. "Law 36 in Action"। Marylebone Cricket Club। ২০১০। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মে ২০১৩ 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা