লি না

চীনা টেনিস খেলোয়াড়

লি না (জন্ম: ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২) পেশাদারী টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি ৫ বার ডব্লিউটিএ এবং ১৯ বার আইটিএফ (আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন) এককের শিরোপা অর্জন করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১ তারিখে প্রমিলা টেনিস সংস্থা প্রদত্ত সর্বশেষ প্রমিলা টেনিস র‌্যাংকিংয়ে বিশ্বের ৫নং খেলোয়াড়ের মর্যাদায় আসীন ছিলেন লি না।[১]

লি না
李娜
দেশ গণচীন
বাসস্থানউহান, হুপেই, চীন
জন্ম (1982-02-26) ফেব্রুয়ারি ২৬, ১৯৮২ (বয়স ৪২)
উহান, হুপেই, চীন
উচ্চতা১.৭২ মিটার (৫ ফুট + ইঞ্চি)
পেশাদারিত্ব অর্জন১৯৯৯
অবসর গ্রহণএপ্রিল ২০০২ - মে ২০০৪; ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪
খেলার ধরনডানহাতি (দ্ই হাতে ব্যাকহ্যান্ড)
কলেজহুয়াঝং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (এইচইউএসটি)
প্রশিক্ষকজিয়াং শান (২০০৬-২০১১)
থমাস হজস্টেট (২০০৯-২০১০)
মাইকেল মর্টেনসেন (২০১১-২০১২)
কার্লোস রদ্রিগুয়েজ (২০১২-২০১৪)
পুরস্কারUSD$ ১৬,৭০৯,০৭৪
একক
পরিসংখ্যান৫০৩-১৮৮ (৭২.৭৯%)
শিরোপা৯ ডব্লিউটিএ, ১৯ আইটিএফ
সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিং২নং (১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪)
গ্র্যান্ড স্ল্যাম এককের ফলাফল
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন (২০১৪)
ফ্রেঞ্চ ওপেন (২০১১)
উইম্বলডনকো.ফা. (২০০৬, ২০১০, ২০১৩)
ইউএস ওপেনসে.ফা. (২০১৩)
অন্যান্য প্রতিযোগিতা
ট্যুর ফাইনালফ (২০১৩)
অলিম্পিক গেমসসে.ফা. - ৪র্থ (২০০৮)
দ্বৈত
পরিসংখ্যান১২১-৫০
শিরোপা২ ডব্লিউটিএ, ১৬ আইটিএফ
সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিং৫৪নং (২৮ আগস্ট, ২০০৬)
গ্র্যান্ড স্ল্যাম দ্বৈতের ফলাফল
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন২রা. (২০০৬, ২০০৭)
ফ্রেঞ্চ ওপেন২রা. (২০০৬, ২০০৭)
উইম্বলডন২রা. (২০০৬)
ইউএস ওপেন৩রা. (২০০৫)
অন্যান্য দ্বৈত প্রতিযোগিতা
অলিম্পিক গেমস২রা. (২০১২)
পদকের তথ্য
 চীন -এর প্রতিনিধিত্বকারী
মহিলাদের টেনিস
বিশ্ববিদ্যালয় দল
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান ২০০১ বেইজিং একক
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান ২০০১ বেইজিং দ্বৈত
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান ২০০১ বেইজিং মিশ্র দ্বৈত
এশিয়ান গেমস
স্বর্ণ পদক - প্রথম স্থান ২০১০ গুয়াংজু দলগত
ব্রোঞ্জ পদক - তৃতীয় স্থান ২০০৬ দোহা একক
লি না
চীনা 李娜

২০১১ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেন এককে শিরোপা লাভ করে লি না চীন তথা এশিয়ার ১ম খেলোয়াড় হিসেবে যে-কোন গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ের বিরল সম্মান অর্জন করেন।[২] এছাড়াও তিনি ২০১১ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে উন্নীত হয়ে প্রথম চীনা তথা এশিয়ার প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বৃহৎ কোন একক ফাইনালে অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড় ছিলেন।

মাঠের বাইরে সম্পাদনা

লি না ১৯৮২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি চীনের হুবাই প্রদেশের ওহান এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা লি শেংপেং ছিলেন একজন শৌখিন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। কিন্তু চীনের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নিয়ম-নীতির কারণে পেশাদারী খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নিতে পারেননি শেংপেং।[৩]

 
২০০৯ সালের ইউএস ওপেন

৬ বছর বয়সে লি ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হিসেবে খেলাধূলায় আবির্ভূত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার কোচ লক্ষ্য করেছেন যে ব্যাডমিন্টনের চেয়ে লন টেনিসেই তাকে বেশি মানাবে। ৮ বছর বয়সে কোচ লি'র পিতা-মাতাকে জানান যে তাকে টেনিসে স্থানান্তরিত করা যাবে যা লি না নয় বছর বয়সে স্থানান্তরিত হয়েছিল।[৪] লি পরবর্তীতে চীনের জাতীয় টেনিস দলে ১৯৯৭ এবং ১৯৯৯ সালে যোগ দিয়েছিলেন।

শিক্ষা ও সংসার সম্পাদনা

২০০২ সালের শেষ দিকে লি না জাতীয় টেনিস দল থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করেন। হুয়াঝং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সাংবাদিকতায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন ২০০৯ সালে। নাম প্রত্যাহারের ফলে চীনের গণমাধ্যমগুলো প্রায়শঃই লি না এবং জাতীয় দলের মধ্যে সাংঘর্ষিক অবস্থার কথা তুলে ধরতো। কোন কোন প্রতিবেদনে তাকেসহ দলীয় খেলোয়াড় জিয়াং শানের মধ্যেকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে জড়িয়ে জাতীয় দল থেকে তার নাম প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ করে।[৫] কোন প্রতিবেদনে আবার তার জাতীয় কোচ য়ু লিকিআওয়ের তাদের মেলামেশা নিয়ে কঠোর পদক্ষেপের ফলে লি নিজেকে সড়িয়ে নেবার দাবী করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।[৬] অন্য এক প্রতিবেদনে জানা যায়, লি ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে আলাপ করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন।[৭]

২০০৪ সালে লি পুনরায় জাতীয় টেনিস দলে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণাধীন খেলাধুলা পদ্ধতির প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সালে টেনিস খেলোয়াড়দেরকে পরীক্ষামূলকভাবে পুণর্গঠন নীতির আওতায় এনে পুনরায় জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়া হয় লি না-কে। এ পরিবর্তনকে চীনের গণমাধ্যমগুলো একলা চলো নীতি হিসেবে উল্লেখ করে সরকারের গৃহীত পদ্ধতির ব্যাপক সমালোচনা করে। এরফলে লি স্বাধীনভাবে নিজ কোচ মনোনয়ন করেন এবং আরো জয়ের ধারায় নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এখন তার অর্জিত জয়ের ৮-১২% অর্থ সরকারি কোষাগারে যুক্ত হয় যা পূর্বে ছিল ৬৫%।

খেলায় অংশগ্রহণ ও শিরোপা লাভ সম্পাদনা

১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে লি ২০ বার মহিলাদের এককের শিরোপা জয় করেন। ১৯ বার আইটিএফ এবং একবার ডব্লিউটিএ ট্যুরে যা চীনের ইতিহাসে মহিলাদের মধ্যে ছিল প্রথম।

জানুয়ারি, ২০০৮ সালে তিনি সোয়া তিন বছরের মধ্যে ২য় বারের মতো ডব্লিউটিএ ট্যুর শিরোপা জিতেন। লি ১৯৯৯ সালে পেশাদারী টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন। ঐ বছর তিনি চারটি একক প্রতিযোগিতার মধ্যে তিনটিতেই জয়ী হন। তন্মধ্যে, আইটিএফের পরিচালনায়শেনঝেনে ২টি এবং বেলজিয়ামের ওয়েস্টেণ্ডে একটি জিতেন।

মে, ২০০৪ সালে লি র‌্যাংকবিহীন অবস্থায় পুনরায় মাঠে প্রত্যাবর্তন করেন। ঐ মৌসুমে প্রথম ২৬টি খেলায় জয়ী হন তিনি। তিনটি ২৫ হাজার ডলারের এবং একটি ৫০ হাজার ডলারের প্রতিযোগিতার শিরোপা লাভে সক্ষম হন। এর মাধ্যমে তিনি খেলোয়াড়ী জীবনে ১৮তম একক শিরোপা লাভ করেন। আগস্টে ৫০ হাজার ডলারের ব্রঙ্কস্‌ প্রতিযোগিতায় এভজেনিয়া লিনেটস্কায়া'র কাছে সেমি-ফাইনালে হেরে বিদায় নেন লি। কিন্তু দ্বৈত খেলায় লি না তার খেলোয়াড়ী জীবনের ষোড়শ আইটিএফ দ্বৈত প্রতিযোগিতা এবং সর্বসাকুল্যে ১৭ বার জয় করেন।

খেলোয়াড়ী জীবন সম্পাদনা

লি না প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জয়লাভ করেন। এর মাধ্যমেই তিনি এশিয়ার দেশগুলোতে জন্মগ্রহণকারী নাগরিক হিসেবে ২০১১ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেন প্রতিযোগিতার একক জয়ী প্রথম ব্যক্তি হলেন। লি ৬ষ্ঠ বাছাই বারবোরা জালাভোভা-স্ট্রাইকোভা, সিলভিয়া সোলার এসপিনোসা, সোরানা সিরস্টিয়া, ৯ম বাছাই পেত্রা কেভিতোভা, ৪র্থ বাছাই ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা, ৭ম বাছাই মারিয়া শারাপোভাকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছেন।[৮] অতঃপর ফাইনালে ৫ম বাছাই ও পূর্বতন চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সেস্কা স্কিয়াভোনকে হারিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা লাভ করেন তিনি।

 
লি না:২০০৮ সালে উম্বলডেন প্রতিযোগিতায়

খেলা শেষে লি না'কে চীনের গণমাধ্যম ও প্রচারমাধ্যমগুলো অজস্র ধন্যবাদ জানায়।[৯] সমগ্র চীনে তার জনপ্রিয়তা অসম্ভব রকম ও দ্রুত লয়ে বৃদ্ধি পায় যখন লি গ্র্যান্ড স্ল্যামের শিরোপা লাভ করেন।[২] ফ্রেঞ্চ ওপেনের পর লি না তার খেলোয়াড়ী জীবনের সর্বোচ্চ ও বিশ্বের ৪র্থ স্থানধারী প্রমিলা খেলোয়াড়ের মর্যাদায় অভিষিক্ত হন।

গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল সম্পাদনা

লি না এ পর্যন্ত দুইবার গ্র্যান্ড স্ল্যাম এককের ফাইনালে অংশগ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে একবার শিরোপা অর্জন ও আরেকবার রানার-আপ হয়েছেন।

ফলাফল সাল চ্যাম্পিয়নশীপ ফাইনালে প্রতিপক্ষ স্কোর
রানার-আপ ২০১১ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন   কিম ক্লাইস্টার্স ৬ - ৩, ৩ - ৬, ৩ - ৬
বিজয়ী ২০১১ ফ্রেঞ্চ ওপেন   ফ্রান্সিস্কা স্কাইয়াভোন ৬ - ৪, ৭ - ৬ (০)

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা