লিথিয়াম

মৌলিক পদার্থ যার পারমাণবিক সংখ্যা ৩

লিথিয়াম একটি রাসায়নিক মৌল যার প্রতীক Li এবং পারমাণবিক সংখ্যা । গ্রিক শব্দ λιθoς লিথোস্ "পাথর" থেকে লিথিয়াম ধাতুর নাম হয়েছে।লিথিয়াম হলো নরম, রূপালি-সাদা ক্ষার ধাতুপর্যায় সারণীতে এর অবস্থান ১ নং গ্রুপে। আদর্শ তাপমাত্রা ও চাপে লিথিয়াম সবচেয়ে হালকা কঠিন পদার্থ ও সবচেয়ে হালকা ধাতু। অন্যান্য ক্ষার ধাতুর মতো লিথিয়াম হলো অত্যন্ত সক্রিয় ও দাহ্য পদার্থ, তাই একে অবশ্যই খনিজ তেলে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত। যখন একে কাটা হয় এটি ধাতব দীপ্তি প্রদর্শন করে, তবে আর্দ্র বায়ুর প্রভাবে জারিত হয়ে হালকা রূপালি ধূসর বর্ণে পরিণত হয়। এর আয়ন হিসেবে দ্রাব্যতার জন্য সমুদ্রের পানিতে এর উপস্থিতি আছে এবং সাধারণত ব্রাইন থেকে পাওয়া যায়। লিথিয়াম ক্লোরাইডপটাশিয়াম ক্লোরাইড এর মিশ্রণের তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে লিথিয়াম ধাতু আলাদা করা হয়।

লিথিয়াম   Li
লিথিয়াম
উচ্চারণ/ˈlɪθiəm/ (LITH-ee-əm)
নাম, প্রতীকলিথিয়াম, Li
উপস্থিতিরূপালী-সাদা (তেলের উপর ভাসমান অবস্থায় দেখা যাচ্ছে)
পর্যায় সারণিতে লিথিয়াম
হাইড্রোজেন হিলিয়াম
লিথিয়াম বেরিলিয়াম বোরন কার্বন নাইট্রোজেন অক্সিজেন ফ্লোরিন নিয়ন
সোডিয়াম ম্যাগনেসিয়াম অ্যালুমিনিয়াম সিলিকন ফসফরাস সালফার ক্লোরিন আর্গন
পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম স্ক্যান্ডিয়াম টাইটেনিয়াম ভ্যানাডিয়াম ক্রোমিয়াম ম্যাঙ্গানিজ আয়রন Cobalt Nickel Copper Zinc Gallium Germanium Arsenic Selenium Bromine Krypton
Rubidium Strontium Yttrium Zirconium Niobium Molybdenum Technetium Ruthenium Rhodium Palladium Silver Cadmium Indium Tin Antimony Tellurium Iodine Xenon
Caesium Barium Lanthanum Cerium Praseodymium Neodymium Promethium Samarium Europium Gadolinium Terbium Dysprosium Holmium Erbium Thulium Ytterbium Lutetium Hafnium Tantalum Tungsten Rhenium Osmium Iridium Platinum Gold Mercury (element) Thallium Lead Bismuth Polonium Astatine Radon
Francium Radium Actinium Thorium Protactinium Uranium Neptunium Plutonium Americium Curium Berkelium Californium Einsteinium Fermium Mendelevium Nobelium Lawrencium Rutherfordium Dubnium Seaborgium Bohrium Hassium Meitnerium Darmstadtium Roentgenium Copernicium Nihonium Flerovium Moscovium Livermorium Tennessine Oganesson
H

Li

Na
হিলিয়ামলিথিয়ামবেরিলিয়াম
পারমাণবিক সংখ্যা
আদর্শ পারমাণবিক ভর৬.৯৪১(২)
মৌলের শ্রেণীক্ষার ধাতু
গ্রুপগ্রুপ ১: হাইড্রোজেন এবং ক্ষার ধাতু
পর্যায়পর্যায় ২
ব্লক  s-block
ইলেকট্রন বিন্যাস[He] 2s1
প্রতিটি কক্ষপথে ইলেকট্রন সংখ্যা2, 1
ভৌত বৈশিষ্ট্য
দশাকঠিন
গলনাঙ্ক৪৫৩.৬৯ কে ​(১৮০.৫৪ °সে, ​৩৫৬.৯৭ °ফা)
স্ফুটনাঙ্ক১৬১৫ K ​(১৩৪২ °সে, ​২৪৪৮ °ফা)
ঘনত্ব (ক.তা.-র কাছে)০.৫৩৪ g·cm−৩ (০ °সে-এ, ১০১.৩২৫ kPa)
তরলের ঘনত্বm.p.: ০.৫১২ g·cm−৩
পরম বিন্দু(extrapolated)
৩২২৩ কে, ৬৭ MPa
ফিউশনের এনথালপি৩.০০ kJ·mol−১
বাষ্পীভবনের এনথালপি১৪৭.১ kJ·mol−১
তাপ ধারকত্ব২৪.৮৬০ J·mol−১·K−১
বাষ্প চাপ
P (Pa) ১০ ১০০ ১ k ১০ k ১০ k
at T (K) ৭৯৭ ৮৮৫ ৯৯৫ ১১৪৪ ১৩৩৭ ১৬১০
পারমাণবিক বৈশিষ্ট্য
জারণ অবস্থা+১, -১ ​strongly basic oxide
তড়িৎ-চুম্বকত্ব০.৯৮ (পলিং স্কেল)
পারমাণবিক ব্যাসার্ধempirical: ১৫২ pm
সমযোজী ব্যাসার্ধ১২৮±৭ pm
ভ্যান ডার ওয়ালস ব্যাসার্ধ১৮২ pm
বিবিধ
কেলাসের গঠনbody-centered cubic (bcc)
Body-centered cubic জন্য কেলাসের গঠন{{{name}}}
তাপীয় প্রসারাঙ্ক৪৬ µm·m−১·K−১ (২৫ °সে-এ)
তাপীয় পরিবাহিতা৮৪.৮ W·m−১·K−১
চুম্বকত্বparamagnetic
ইয়ংয়ের গুণাঙ্ক৪.৯ GPa
কৃন্তন গুণাঙ্ক৪.২ GPa
আয়তন গুণাঙ্ক১১ GPa
(মোজ) কাঠিন্য০.৬
ক্যাস নিবন্ধন সংখ্যা৭৪৩৯-৯৩-২
লিথিয়ামের আইসোটোপ
টেমপ্লেট:তথ্যছক লিথিয়াম আইসোটোপ এর অস্তিত্ব নেই
iso NA অর্ধায়ু DM DE (MeV) DP
Li ৭.৫% Li ৩টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়
Li ৯২.৫% Li ৪টি নিউট্রন নিয়ে স্থিত হয়
· তথ্যসূত্র

আবিষ্কার সম্পাদনা

১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাজিলিয়ান রসায়নবিদ জোস বনিফেকো ডি অ্যান্ড্রাডা ই সিলভা সুইডেনে প্রাপ্ত একটি মাইনে পেটালাইট আবিষ্কার করেন। ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে জোহান অগাস্টা আর্ফওয়েডসনইয়নস জ্যাকব বার্জেলিয়াস পেটালাইট আকরিক বিশ্লেষণের সময় একটি নতুন মৌলেন অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন যা ছিল সোডিয়ামপটাশিয়াম এর সমগোত্রীয়। বার্জেলিয়াস মৌলটির নাম দেন Lithium (Greek lithos= পাথর)। আর্ফওয়েড পরবর্তীতে স্পডুমিনলেপিডোলাইটেও এর উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ন মেলিন দেখেন যে লিথিয়াম ক্লোরাইড পোড়ালে উজ্জ্বল লাল বর্ণ প্রদর্শন করে। তিনি ও আর্ফওয়েডসন বিশুদ্ধ লিথিয়াম পৃথক করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা ব্যার্থ হন। পরবর্তীতে ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দে উইলিয়াম থমাস ব্র্যান্ডে লিথিয়াম অক্সাইডকে তড়িৎবিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ লিথিয়াম পৃথক করতে সমর্থ হলেও তা পরিমাপ করার মতো যথেষ্ট ছিল না। ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান রসায়নবিদ রবার্ট বুনসেন ও ব্রিটিশ রসায়নবিদ অগাস্টাস মেটিসা লিথিয়াম ক্লোরাইডকে তড়িৎবিশ্লেষণ করে বিশুদ্ধ লিথিয়াম এর আয়তন নিরূপন করেন।

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

অন্যান্য ক্ষারীয় ধাতুর মতো, লিথিয়ামে একটি একক ভ্যালেন্স ইলেকট্রন থাকে- যা সহজেই একটি কেশন গঠনের জন্য দেওয়া হয়। এ কারণে লিথিয়াম তাপ এবং বিদ্যুৎএর একটি ভালো পরিবাহী; পাশাপাশি একটি উচ্চ প্রতিক্রিয়াশীল উপাদান, যদিও এটি ক্ষারীয় ধাতুগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন প্রতিক্রিয়াশীল।

রসায়ন এবং যৌগিক বৈশিষ্ট্য : লিথিয়াম সহজে জল দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়, তবে অন্যান্য ক্ষারীয় ধাতুর তুলনায় লক্ষণীয়ভাবে কম শক্তি দ্বারা প্রতিক্রিয়ায় জলীয় দ্রব্যে হাইড্রোজেন গ্যাস এবং লিথিয়াম হাইড্রোক্সাইড গঠন করে। জলের সঙ্গে তার প্রতিক্রিয়াশীলতার কারণে, লিথিয়াম সাধারণত একটি হাইড্রোকার্বন সিল্যান্টে জমা হয়, প্রায়ই পেট্রোলিয়াম জেলি। যদিও ভারী ক্ষারীয় ধাতুগুলো খনিজ তেলজাতীয় ঘন পদার্থগুলোতে সংরক্ষণ করা যেতে পারে তবে লিথিয়াম এ তরলগুলোতে নিজেকে পুরোপুরি নিমজ্জিত করার মতো যথেষ্ট ঘন নয়।

যখন একটি শিখার উপরে স্থাপন করা হয়, লিথিয়াম যৌগগুলো একটি মারাত্মক ক্রিমসন রঙ দেয়, তবে যখন ধাতুটি পোড়ায়, শিখাটি একটি উজ্জ্বল রুপাতে পরিণত হয়। জল বা জলীয় বাষ্পের সংস্পর্শে এলে লিথিয়াম অক্সিজেনে জ্বলবে। লিথিয়াম জ্বলনীয় এবং অন্যান্য ক্ষারীয় ধাতুর চেয়ে কম হলেও বায়ু এবং বিশেষত জলের সংস্পর্শে এলে এটি সম্ভাব্য বিস্ফোরক। সাধারণ তাপমাত্রায় লিথিয়াম-জলের প্রতিক্রিয়া তীব্র; তবে অহিংস কারণ উৎপাদিত হাইড্রোজেন নিজেই জ্বলতে পারে না। সব ক্ষারীয় ধাতুর মতো, লিথিয়াম আগুন নিভানো কঠিন, শুকনো গুঁড়ো অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম প্রয়োজন। লিথিয়াম এমন কয়েকটি ধাতবগুলোর মধ্যে একটি- যা সাধারণ পরিস্থিতিতে নাইট্রোজেনের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখায়।

ব্যবহার : সবচেয়ে বেশি পরিমাণে লিথিয়াম ব্যবহার করা হয় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডিজিটাল ও ইলেকট্রিক ডিভাইসের রিচার্জেবল ব্যাটারিতে। এ ছাড়া হার্ট পেসমেকার, খেলনা, ঘড়ি ইত্যাদিতে নন-রিচার্জেবল ব্যাটারি হিসেবে লিথিয়াম ব্যবহৃত হয়। লিথিয়ামকে অ্যালুমিনিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের সঙ্গে সংকর ধাতু হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ম্যাগনেসিয়াম- লিথিয়াম সংকর ধাতু আর্মার পেস্নটিং হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

অ্যালুমিনিয়াম-লিথিয়াম সংকর ধাতু বিমানপোতে, সাইকেলের ফ্রেমে এবং দ্রম্নতগতির ট্রেনে ব্যবহার করা হয়।

কাঁচশিল্পে লিথিয়াম অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। লিথিয়াম ক্লোরাইড একটি তীব্রমাত্রার জলাকর্ষী পদার্থ এবং এটি এয়ারকন্ডিশনিং ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ড্রাইং সিস্টেমে বহুল প্রচলিত। লিথিয়াম স্টিয়ারেটকে উচ্চ তাপমাত্রার লুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লিথিয়াম কার্বনেট ম্যানিক ডিপ্রেশনের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

হাইড্রোজেন ফুয়েল সংরক্ষণেও ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম হাইড্রাইড।

যৌগসমূহ সম্পাদনা

রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পাদনা

লিথিয়াম সহজেই জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে, তবে অন্যান্য ক্ষারীয় ধাতুর তুলনায় লক্ষণীয়ভাবে কম সক্রিয়। জলের সঙ্গে বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন গ্যাস এবং লিথিয়াম হাইড্রোক্সাইডের জলীয় দ্রবণ উৎপন্ন হয়।[১]

ব্যবহার সম্পাদনা

 
লিথিয়াম এর ব্যবহার
লিথিয়াম ব্যাটারির কার্যকারিতা মডেল

সবচেয়ে বেশি পরিমাণে লিথিয়াম ব্যবহার করা হয় মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডিজিটালইলেকট্রিক ডিভাইসের রিচার্জেবল ব্যাটারীতে। এছাড়াও হার্ট পেসমেকার, খেলনা, ঘড়ি ইত্যাদিতে নন-রিচার্জেবল ব্যাটারী হিসেবে লিথিয়াম ব্যবহৃত হয়। লিথিয়ামকে অ্যালুমিনিয়ামম্যাগনেসিয়াম এর সাথে সংকর ধাতু হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ম্যাগনেসিয়াম-লিথিয়াম সংকর ধাতু আর্মার প্লেটিং হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অ্যালুমিনিয়াম-লিথিয়াম সংকর ধাতু বিমানপোতে, সাইকেলের ফ্রেমে এবং দ্রুতগতির ট্রেনে ব্যবহার করা হয়। কাঁচ শিল্পে লিথিয়াম অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। লিথিয়াম ক্লোরাইড একটি তীব্রমাত্রার জলাকর্ষী পদার্থ এবং এটি এয়ার কন্ডিশনিংইন্ডাস্ট্রিয়াল ড্রাইং সিস্টেমে বহুল প্রচলিত। লিথিয়াম স্টিয়ারেটকে উচ্চ তাপমাত্রার লুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। লিথিয়াম কার্বনেট ম্যানিক ডিপ্রেশন এর ওষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। হাইড্রোজেন ফুয়েল সংরক্ষণেও ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম হাইড্রাইড

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Krebs, Robert E. (2006). The History and Use of Our Earth's Chemical Elements: A Reference Guide. Westport, Conn.: Greenwood Press. ISBN 978-0-313-33438-2.

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা