রক্তচাপ

রক্ত সরবরাহের জন্য রক্তনালীর গায়ে সৃষ্ট চাপ

রক্তচাপ (ইংরেজি: blood pressure) হল রক্তনালীর গাত্রের উপর রক্ত কর্তৃক প্রযুক্ত চাপ। যা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রোগনির্ণায়ক লক্ষণ। এই চাপের অধিকাংশ হৃৎপিন্ডের রক্ত সংবহনতন্ত্রের মধ্য দিয়ে রক্ত সরবরাহ করার জন্য তৈরি হয়। সচরাচর রক্তচাপ বলতে বড় রক্তনালীতে রক্ত সঁচরণ প্রনালীর চাপকে নির্দেশ করে। সাধারণত রক্তচাপ বলতে সিস্টেমিক প্রবাহ-এর ধমনিক প্রবাহ ইংরেজিতে-(arterial pressure) কে বোঝায়। সাধারণত প্রতিটি হৃৎস্পন্দনের সময় একবার সর্বোচ্চ সংকোচন চাপ (সিস্টোলিক) এবং দুটি হৃদস্পন্দনের মাঝে সর্বনিম্ন প্রসারন চাপ (ডায়াস্টলিক) চাপ হয়।[১] হৃৎপিন্ডের সংকোচন প্রবণতাই রক্তচাপের প্রধান কারণ।[২] এটি সাধারণত উর্ধ্ববাহুর ব্রাকিয়াল ধমনীতে দেখা হয়। রক্তচাপ সবসময় সংকোচন(systolic) চাপকে (একটি হৃদস্পন্দনের সময় সর্বোচ্চ) উপরে এবং প্রসারক(diastolic) চাপ (দুটি হৃদস্পন্দনের মাঝে সর্বনিম্ন) নিচে লিখে প্রকাশ করা হয়। যেমন ১২০/৮০। এর পরিমাপের একক mmHg

রক্তচাপ
রোগনির্ণয়
একটি স্ফিগমোম্যানোমিটার, ধমনীর রক্তচাপ পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত একটি ডিভাইস
MeSHD001795

হৃৎস্পন্দনের হার, হৃদ কম্পন,অক্সিজেনের সমপৃক্তি, এবং শরীরের তাপমাত্রারর মত রক্তচাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষনপ্রাপ্তবয়স্ক লোকের সাধারণ স্থির রক্তচাপ প্রায় ১২০ মিলিমিটার পারদচাপ সংকোচক এবং ৮০ মিলিমিটার পারদচাপ প্রসারক। সংক্ষেপে ১২০/৮০ মিমিপারদ। বিশ্বব্যাপী গড় রক্তচাপ, বয়সের সাথে সংগতিপূর্ণ করা, ১৯৭৫ থেকে এখন পর্যন্ত এক, প্রায়। পুরুষদের ১২৭/৭৯ মিমিপারদ নারীদের ১২২/৭৭ মিমিপারদ।

ঐতিহ্যগতভাবে বন্ধ (না খোলা) অবস্থায় পারদ নল স্ফিগমোম্যানোমিটার ব্যবহার করে কানের সাহায্যে হৃদপিন্ডের শব্দ শুনে রক্তচাপ পরিমাপ করা হত। এখনও সাধারনভাবে চিকিৎসালয়ে কানের সাহায্যে বন্ধ (না খোলা) অবস্থায় হৃৎপিন্ডের শব্দ শুনে স্বর্ণমানের নির্ভুল বিবেচনা করে রক্তচাপ নেয়া হয়। যাহোক, আধা সয়ংক্রিয় পদ্ধতি সুলভ হয়েছে, মূলত পারদের সম্ভব্য বিষক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতার কারণে, যদিও খরচ, সহজ ব্যবহার ও ভ্রমনশীল রক্তচাপে প্রযোজ্যতা অথবা বাড়িতে রক্তচাপ পরিমাপও এই প্রবণতা বাড়াতে সাহায্য করেছে। পারদ-নল স্ফিগমোম্যানোমিটারেরর প্রথম দিকের সয়ংক্রিয় বিকল্পগুলো প্রায় মারাত্নক ত্রুটিযুক্ত ছিল। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রগুলো প্রমাণ করে দুটি প্রমাণ পাঠ পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য ৫ মিমিপারদ বা কম এবং আদর্শ বিচ্যুতি ৮ মিমিপারদের কম। অধিকাংশ আধা-সয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অসিলোমিটার (দোলন পরিমাপক) ব্যবহারেরর মধ্যমে রক্তচাপ পরিমাপ করে।

হৃদপিন্ডের ক্রিয়া, সমগ্র রক্তনালীর সহ্য ক্ষমতা ও ধমনিক দৃড়তা দ্বারা রক্তচাপ প্রভাবিত হয় এবং নির্ভর করে বিভিন্ন অবস্থার উপর, আবেগি অবস্থা, সক্রিয়তা ও তুলনামূলক স্বাস্থ্য/রোগের অবস্থার উপর। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয় ব্যাররিসিপটর(মস্তিষ্কের সংবেদী অংশ) দ্বারা যা কাজ করে স্নায়বিক এবং (এন্ডোক্রেইন) আন্তঃস্রাবী তন্ত্র/প্রনালীকে প্রভাবিত করতে।

কোন অসুখে রক্তচাপ বেড়ে গেলে তাকে হাইপার টেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ এবং কমে গেলে হাইপো টেনশন বা নিম্ন রক্তচাপ বলে।

অনেক কারণে উচ্চ রক্তচাপ ও নিন্ন রক্তচাপ হতে পারে এবং উভই হটাৎ সূত্রপাত হতে পারে অথবা দীর্ঘদিন ধরে হতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ, স্ট্রোক, বৃক্ক(কিডনি) অকার্যকর সহ অনেক রোগের জন্য একটি ঝুকিপূর্ণ অবস্থা। দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘমেয়াদী নিম্নরক্তচাপের চেয়ে সুলভ, যা সাধারণত নির্ণয় করা হয় যখন এটা উপসর্গ তৈরি করে।

রক্তচাপের ধরন সম্পাদনা

আদর্শ রক্তচাপ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Normal Blood Pressure Range Adults"। Health and Life। ১৮ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  2. Caro, Colin G. (১৯৭৮)। The Mechanics of The Circulation। Oxford [Oxfordshire]: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-263323-6