মাহমুদ আহমাদিনেজাদ

মাহমুদ আহমাদি নেজাদ (ফার্সি: محمود احمدی‌نژاد Mahmūd Ahmadinezhād [mæhˈmuːd(-e) æhmædiːneˈʒɒːd],[৮][৯][১০] ইংরেজি: /ɑːməˈdɪnɨʒɒd/ ah-mə-DIN-i-zhod;জন্ম ২৮ অক্টোবর ১৯৫৬,[১১][১২]) ১৯৫৬ সালে তেহরানের পাশে গার্মসার নামে একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি খুব সাধারণ জীবন যাপন করে চলেছেন[১৩] এবং সবসময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তিনি তেহরান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ট্রাফিক অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট বিষয় এর উপর পি এইচ ডি করেছেন। আহমাদিনেজাদ- ১৯৭০ সালের শেষের দিকে “সারকর্ড” শহরের মেয়রের উপদেষ্টা হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। ১৯৮০ সালে তিনি আর্মিতে যোগদান করেন। এরপর তিনি তুর্কী বর্ডারের কাছে “মাকু” শহরের মেয়র পদে নিযুক্ত হন। ১৯৯০ এর শেষের দিকে তিনি “আরদাবিল” শহরের গভর্নর পদে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি হার্ডলাইন রেভুলেশনারি গার্ডের বিশেষ বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০৩ সালে আহমাদিনেজাদ তেহরানের মেয়র পদে নির্বাচিত হন।[১৪]

মাহমুদ আহমাদিনেজাদ
محمود احمدی‌نژاد
৬ষ্ঠ ইরানের রাষ্ট্রপতি
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
৩রা আগস্ট ২০০৫
উপরাষ্ট্রপতিপারভেজ দাউদি
এস্ফান্দিয়ার রহিম মাশায়ী
মোহাম্মাদ রেজা রাহিমি
পূর্বসূরীমোহাম্মাদ খাতামি
খনিজ মন্ত্রণালয়
ভারপ্রাপ্ত[১]
কাজের মেয়াদ
১৬ মে ২০১১ – ২ জুন ২০১১
রাষ্ট্রপতিনিজে
পূর্বসূরীমাসউদ মীর খামেনি
উত্তরসূরীমাহমুদ আলিয়াবাদি (ভারপ্রাপ্ত)
গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়
ভারপ্রাপ্ত[২]
কাজের মেয়াদ
২৬ জুলাই ২০০৯ – ৫ আগস্ট ২০০৯
রাষ্ট্রপতিনিজে
পূর্বসূরীGholam-Hossein Eje'i
উত্তরসূরীHeydar Moslehi
তেহরানের মেয়র
কাজের মেয়াদ
২০শে জুন ২০০৩ – ৩রা আগস্ট ২০০৫
পূর্বসূরীহাসান মালেকমাদানি
উত্তরসূরীমোহাম্মাদ বাগের গালিবাফ
Governor of Ardabil Province
কাজের মেয়াদ
১লা মে ১৯৯৩ – ২৮শে জুন ১৯৯৭
পূর্বসূরীহসেইন তেহেরি
(পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর)
উত্তরসূরীজাভাদ নাগারান্দেহ
জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন এর মহাসচিব
কাজের মেয়াদ
৩০ আগস্ট ২০১২ – ৩ আগস্ট ২০১৩
পূর্বসূরীমুহাম্মাদ মুরসি
উত্তরসূরীহাসান রুহানি
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মমাহমুদ সাব্বাহিয়ান[৩]
(1956-10-28) ২৮ অক্টোবর ১৯৫৬ (বয়স ৬৭)
আরাদান, ইম্পেরিয়াল স্টেট অব ইরান
রাজনৈতিক দলঅ্যালায়েন্স অব বিল্ডারস অব ইসলামিক ইরান(২০০৩-বর্তমান)
ইসলামিক সোসাইটি অব ইঞ্জিনিয়ার্স (১৯৯০-বর্তমান)
দাম্পত্য সঙ্গীআযাম ফারাহি (১৯৭৭-বর্তমান)[৪]
প্রাক্তন শিক্ষার্থীইরান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
জীবিকাপুরঃপ্রকৌশলী
ধর্মশিয়া ইসলাম
স্বাক্ষরমাহমুদ আহমাদিনেজাদ
ওয়েবসাইটhttp://www.president.ir
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্যইরান ইরান
শাখাRevolutionary Guards
কাজের মেয়াদ১৯৮৬–১৯৮৮[৫][৬]
পদনেই[ক]
ইউনিটহামজা হেডকোয়ার্টাস[৫]
কমান্ডকমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট, ৬ নং স্পেশাল ডিভিশন[৬]
যুদ্ধIran–Iraq War

জন্ম সম্পাদনা

মাহমুদ আহমেদিনেজাদ ১৯৫৬ সালের ২৮ অক্টোবর সেমনান প্রদেশের গারমশার নামক এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। খুব গরিব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।তার বাবা ছিলেন পেশায় একজন কামার আর মায়ের নাম খানম। মায়ের উপাধি ছিল সাইয়েদা যা শুধু মাত্র মুহাম্মদ (সা ) এর বংশধর হলেই এই উপাধিতে ডাকা হয়।

শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

আহমেদিনেজাদের বয়স যখন চার বছর তখন তার বাবা জীবিকার সন্ধানে পরিবারসহ তেহরানে চলে আসেন। সেখানেই আহমেদিনেজাদের স্কুল জীবন শুরু। ১৯৭৬ সালে আহমেদিনেজাদ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন এবং তিনি ৪০০,০০০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৩২তম স্থান দখল করেন। তিনি ইরান ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড টেকনোলোজিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হন এবং ১৯৯৭ সালে তিনি ট্রান্সপর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্লানিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

জীবনযাপন সম্পাদনা

প্রেসিডেন্ট হবার আগে তার জীবনযাপন যেমনটি ছিল এখনও ঠিক তেমনটিই রয়েছে। আভিজাত্য তাকে কখনও স্পর্শ করতে পারে নি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বিলাসবহুল এক বাড়ি তার জন্য অপেক্ষা করছিল কিন্তু সেই বাড়িকে তুচ্ছজ্ঞান করে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বস্তির সেই দুই রুমের ছোট্ট বাড়িতেই বসবাস করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে সরকারের কর্মকর্তাগণের অনুরোধে তিনি প্রেসিডেন্ট ভবনেই বসবাস করেন তিনি। তার নিজের বাড়িতে যে আসবাবপত্র রয়েছে তা আমাদের দেশের অনেক কেরানির বাড়িতেও এর চাইতে ভালো আসবাবপত্র রয়েছে। তার বাসায় কয়েকটি কাঠের চেয়ার ছাড়া আর কোনও আসবাবপত্র নেই। প্রেসিডেন্ট ভবনেও তিনি ফ্লোরে কার্পেটের উপর ঘুমাতেন।

ব্যক্তিগত সম্পত্তি সম্পাদনা

ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে তার আছে তেহরানের বস্তিতে অবস্থিত ছোট্ট একটি বাড়ি, যা ৪০ বছর আগে তিনি তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। বাড়িটির নাম Peugeot 504. বেতন হিসেবে তিনি তেহরান ইউনিভার্সিটি থেকে মাত্র ২৫০ ইউ এস ডলার পান। তিনি রাষ্ট্রের প্রধান অথচ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্র থেকে তিনি কোনও টাকা নেন না। তিনি ইউনিভার্সিটি থেকে প্রাপ্ত বেতনের টাকা দিয়ে সংসার পরিচালনা করেন।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

আহমেদিনেজাদ রাজনীতিতে আসেন ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পরপরই। ২০০৩ সালে মেয়র নির্বাচিত হন তেহরানের। এরপর ক্রমশ এগিয়ে যান তিনি। দুই বছর তেহরানের মেয়র থাকার পর ২০০৫ সালে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে আহমাদিনেজাদ ক্ষমতায় আসেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই তিনি তার অফিসে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন। প্রেসিডেন্ট ভবনের দরজা-জানালা খুলে দেয়া হয় সাধারণের জন্য। প্রেসিডেন্ট অফিসে সপ্তায় পাঁচ দিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সাধারণ ইরানিদের চিঠি গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই প্রেসিডেন্ট ভবনের দামি কার্পেটগুলো তেহরাণের মসজিদে দান করে দেন। এর পরিবর্তে সাধারণ মানের কার্পেট বিছানো হয় প্রেসিডেন্ট ভবনে। প্রেসিডেন্ট ভবনের ভি.আই.পি অতিথিশালা ও বন্ধ করে দেয়া হয়। একটি সাধারণ ঘরেই ভি.আই.পি দের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা রাখা হয়।

প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় গ্রহণ সম্পাদনা

৩ আগস্ট ২০১৩ ইরানের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেয়ার আগেও ইতিহাস তৈরি করে গেলেন আহমেদি নেজাদ। ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান আয়াতুল্লাহ সাদেক লারিজানির কাছে লেখা এক চিঠিতে আট বছরে অর্জিত সম্পদের হিসাব দিয়ে যান তিনি। যে হিসাবে দেখা যায়, ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তার সম্পদে যে পরিবর্তন এসেছে, তা হলো- তিনি তার পুরোনো বাড়িটি পুনর্নিমাণ করেছেন। তবে বাড়িটি পুন র্নিমাণের জন্য তিনি ব্যাংক ও প্রেসিডেন্ট দপ্তরের ফান্ড থেকে ঋণ নেন। প্রেসিডেন্টের দপ্তরের ফান্ড ও ব্যাংক থেকে বাড়ি নির্মাণের জন্য অসংখ্য মানুষ ঋণ নিয়েছেন। প্রেসিডেন্টও সাধারণ একজন নাগরিক হিসেবে সেই ঋণ নিয়েছেন। ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোন ধরনের প্রভাব খাটাননি। একইসঙ্গে বাড়ি পুনর্নিমাণের ক্ষেত্রে তার স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনরাও সহযোগিতা করেছেন। পুনর্নিমিত দুই তলা ভবনে চারটি ফ্লাট রয়েছে। ওই ভবনেই তিনি ও তার স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করবেন। যে জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে, সেটার আয়তন মাত্র ১৭৫ বর্গমিটার। জমিটুকু বাবার কাছ থেকে পাওয়া।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Smith, Matt (১৬ মে ২০১১)। "Ahmadinejad losing ground in Iran power struggle, analysts say"CNN। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৬ 
  2. Milani, Abbas (৩ আগস্ট ২০০৯)। "Inside The Civil War That's Threatening The Iranian Regime"The New Republic। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১৬ 
  3. "داستان داوود و محمود: داوود احمدی‌نژاد چرا عليه محمود احمدس‌نژاد سخنرانی می‌كند؟" [The Story of Davoud and Mahmoud: Why Davoud Ahmadinejad Speaks Against Mahmoud Ahmadinejad?]। Aseman Weekly (Persian ভাষায়)। ১৯ নভেম্বর ২০১১। ২০ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুলাই ২০১৬ 
  4. "Iran's first lady makes rare speech at Rome summit"Google News। Associated Press। ২০০৯-১১-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১২-০৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. Peterson, Scott (২০১০)। Let the Swords Encircle Me: Iran: A Journey Behind the Headlines। Simon and Schuster। পৃষ্ঠা 279–280। আইএসবিএন 1416597395 
  6. Ehteshami, Anoushiravan; Zweiri, Mahjoob (২০০৭), Iran and the Rise of Its Neoconservatives: The Politics of Tehran's Silent Revolution, I.B.Tauris, পৃষ্ঠা 55, আইএসবিএন 0857713671 
  7. Afshon Ostovar (২০১৬)। Vanguard of the Imam: Religion, Politics, and Iran's Revolutionary Guards। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 124–124। আইএসবিএন 0190491701 
  8. The -[e] is the Izāfa, which is a grammatical marker linking two words together. It is not indicated in writing, and is not part of the name itself, but is used when a first and last name are used together.
  9. Pronunciations for محمود احمدی‌نژاد
  10. Persian Grammar, p. 145: . . . stress is word-final in simple, derived, and compound nouns and adjectives . . .
  11. "Ahmedinejad: Rose and Thorn"The Diplomatic Observer। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০০৯ [অকার্যকর সংযোগ]
  12. "Mahmoud Ahmedinejad on Facebook"Facebook। ২৪ জুলাই ২০০১। ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০০৯ 
  13. Biography of H.E. Dr. Ahmadi Nejad, Honourable President of Islamic Republic of Iran. Retrieved 27 January 2008. ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ জানুয়ারি ২০০৮[তারিখসময়ের দৈর্ঘ্য] তারিখে
  14. Pike, John। "President Mahmoud Ahmadinejad"। Global Security। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১১ 

নোট সম্পাদনা

  1. At the time, Revolutionary Guards rejected official ranks for its members and commanders were simply referred to with honorifics such as "brother" or "pasdar" (guard).[৭]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা