মাংসাশী উদ্ভিদ

পতঙ্গভুক উদ্ভিদ

মাংসাশী উদ্ভিদ সংগত কারণেই প্রকৃতির সবচেয়ে অদ্ভুত উদ্ভিদগুলোর মধ্যে একটি। এসব উদ্ভিদ সাধারণত পোকামাকড়, মাকড়সা ইত্যাদি প্রাণীকে ফাঁদে ফেলে। তবে কোনো কোনো সময় ইঁদুর বা ব্যাঙ জাতীয় ছোট ছোট প্রাণীরাও এদের শিকারে পরিণত হয়।

একটি মাংসাশী উদ্ভিদ

সংখ্যা সম্পাদনা

পৃথিবীতে প্রায় ৪৫০ প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদ রয়েছে। যেমনঃ

মাংসাশী হওয়ার কারণ সম্পাদনা

বেঁচে থাকা জন্য আর নির্দিষ্ট কোন পরিবেশে বৃদ্ধির কারণে এ ধরনের উদ্ভিদ মাংসাশী হয়ে থাকে। বেঁচে থাকার জন্য সব উদ্ভিদকেই মাটি থেকে জল এবং বিভিন্ন রকম খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করতে হয়। সূর্যের উপস্থিতিতে এসব উপাদানের সঙ্গে কার্বন ডাই অক্সাইড মিলিত হয়ে গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য প্রস্তুত করে।গাছের বৃদ্ধির জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো নাইট্রোজেন। এজন্য নাইট্রোজেনসমৃদ্ধ মাটিতে অধিকাংশ উদ্ভিদ সবচেয়ে ভালো জন্মে, কিন্তু মাংসাশী উদ্ভিদ জন্মে ভেজা আর স্যাঁতস্যাঁতে নিচু জলাভূমিতে। এখানকার আর্দ্র মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ খুব অল্প থাকে। যেসব গাছ মূল দিয়ে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে তারা এ পরিবেশের মাটিতে জন্মাতে পারেনা। বেঁচে থাকার জন্য মাংসাশী উদ্ভিদরা অন্য একটি পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে থাকে। তারা বিভিন্ন প্রাণীকে ফাঁদে আটকে ফেলে। এসব প্রাণী মারা যাওয়ার পর তাদের মৃতদেহ থেকে খনিজ উপাদান সংগ্রহ করে।

শিকারের পদ্ধতি সম্পাদনা

প্রথমত এসব উদ্ভিদ প্রাণীদের বিভিন্ন পদ্ধতিতে আকর্ষণ করে। অন্যান্য প্রাণীর মতো এসব উদ্ভিদ কাছে গিয়ে কোনো কিছু শিকার করতে পারেনা। বরং শিকার কখন কাছে আসবে এজন্য তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এজন্য পোকামাকড় এবং অন্য প্রাণীদের আকর্ষণ করতে তাদের বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। কোনো কোনো মাংসাশী উদ্ভিদ বাতাসে একধরনের গন্ধ ছড়ায় যা মাছি, মৌমাছি কিংবা পিঁপড়ার মতো পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে। আবার কোনো কোনো উদ্ভিদ মাছি কিংবা অন্য পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করতে একধরনের পঁচা গন্ধ ছড়ায়। অনেক মাংসাশী উদ্ভিদের দেহে উজ্জ্বল রঙের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়, যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করার টোপ হিসেবে কাজ করে। কোনো কোনো উদ্ভিদের পাতার চারদিকে ছোট্ট মুক্তোদানার মতো চকচকে কিছু জিনিসের আবরণে ঢাকা থাকে। এগুলো উজ্জ্বল রঙ এবং সুমিষ্ট গন্ধের সাহায্যে পোকামাকড়কে প্রলুব্ধ করে। সুকৌশলে সৃষ্ট এসব ফাঁদে প্রাণীরা আটকা পড়ে।

ফাঁদ সম্পাদনা

মাংসাশী উদ্ভিদে সাধারণত দুই ধরনের ফাঁদ দেখা যায়। নড়াচড়া করতে পারে এমন ফাঁদকে প্রত্যক্ষ (Active Trap) বলে। আর নড়াচড়া করতে পারেনা এমন ফাঁদের নাম পরোক্ষ ফাঁদ (Passive Trap)। ফাঁদ যে ধরনেরই হোক না কেন, সব ফাঁদই মাংসাশী উদ্ভিদকে পোকামাকড় ধরে খেতে সাহায্য করে। সাধারণত একটি উদ্ভিদে অনেকগুলো ফাঁদ থাকে। সব ফাঁদই পোকামাকড় ধরা, পরিপাক করা আর পুষ্টি সংগ্রহের জন্য একযোগে কাজ করে।

প্রত্যক্ষ ফাঁদ সম্পাদনা

ভেনাস ফাইট্র্যাপ, ওয়াটারহুইল ইত্যাদি উদ্ভিদের প্রত্যক্ষ ফাঁদ আছে। তাদের উপর কোন পোকামাকড় বসামাত্রই ওরা কোনো অঙ্গকে নাড়াচাড়া করে পোকামাকড়কে ফাঁদে ফেলে দেয়। দ্রুতবেগে নড়তে সক্ষম এসব অঙ্গগুলো একসঙ্গে দাঁতওয়ালা চোয়ালের মতো কাজ করে। কোনো কোনো উদ্ভিদের ফাঁদ দরজার মতো, যা শিকার প্রবেশ করলে তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়।

ভেনাস ফাইট্র্যাপ সম্পাদনা

এ বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য ভেনাস ফাইট্র্যাপ ( উদ্ভিদ ) নিবন্ধটি দেখুন।

ওয়াটারহুইল সম্পাদনা

এ বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য ওয়াটারহুইল ( উদ্ভিদ ) নিবন্ধটি দেখুন।

পরোক্ষ ফাঁদ সম্পাদনা

পরোক্ষ ফাঁদগুলো শিকার ধরার জন্য কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করার উপর নির্ভরশীল নয়। সূর্যশিশিরের মত কিছু পরোক্ষ ফাঁদওয়ালা উদ্ভিদে থাকে আঠালো ফাঁদ। কোন কোন পরোক্ষ ফাঁদে পোকামাকড় ধরা পড়ার পর সামান্য নাড়াচাড়া করে। পাতার উপরে থাকা আঠালো বস্তুগুলোই পোকামাকড় ধরার ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। আন্যান্য পরোক্ষ ফাঁদগুলো মাটিতে লুকানো ফাঁদ হিসেবে কাজ করে। কলসী উদ্ভিদে এ ধরনের ফাঁদ দেখা যায়। পোকামাকড়কে মিষ্টি মধুর লোভ দেখিয়ে এসব উদ্ভিদের পাতায় থাকা একমুখী সুড়ঙ্গের মত পথে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সুড়ঙ্গের মধ্যে একবার ঢুকে পড়লে পোকামাকড় আর কখনো ফিরে আসতে পারেনা। এ ধরনের ফাঁদ যেসব উদ্ভিদ ব্যবহার করে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো সূর্যশিশির।

সূর্যশিশির সম্পাদনা

এ বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য সূর্যশিশির ( উদ্ভিদ ) নিবন্ধটি দেখুন।

কলসী উদ্ভিদ সম্পাদনা

এ বিষয়ে মূল নিবন্ধের জন্য কলসী উদ্ভিদ নিবন্ধটি দেখুন।