ভীমরাও রামজি আম্বেদকর

ভারভীয় সংবিধান রচয়িতা, সমাজ সংস্কারক, রাজনীতিবিদ, হরিজনবন্ধু, লেখক, বৌদ্ধধর্ম সংস্কারক, ভারভী
(ভীমরাও রামজি আম্বেডকর থেকে পুনর্নির্দেশিত)

ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (মারাঠি: डॉ. भीमराव रामजी आंबेडकर) (১৪ এপ্রিল ১৮৯১ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৫৬), যিনি বাবাসাহেব আম্বেদকর নামেও পরিচিত, তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় ব্যবহারশাস্ত্রজ্ঞ (জ্যুরিস্ট), রাজনৈতিক নেতা, বৌদ্ধ আন্দোলনকারী, দার্শনিক, চিন্তাবিদ, নৃতত্ত্ববিদ, ঐতিহাসিক, সুবক্তা, বিশিষ্ট লেখক, অর্থনীতিবিদ, পণ্ডিত, সম্পাদক, রাষ্ট্রবিপ্লবীবৌদ্ধ পুনর্জাগরণবাদী। তিনি বাবাসাহেব নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি ভারতের সংবিধানের[১] খসড়া কার্যনির্বাহক সমিতির সভাপতিও ছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয়তাবাদী এবং ভারতের দলিত আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। ইনি ভারতের সংবিধানের মুখ্য রচয়িতা । ২০১২ সালে হিস্ট্রি টি. ভি.১৮ আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ভারতীয়দের ভোটের দ্বারা তিনি "শ্রেষ্ঠ ভারতীয়"ও নির্বাচিত হন।

ভীমরাও রামজি আম্বেদকর
১৪ এপ্রিল ১৮৯১ – ৬ ডিসেম্বর ১৯৫৬

১৯৫০-এর দশকে আম্বেদকর
ডাক নাম বাবা, বাবা সাহেব, বোধিসত্ত্ব, ভীমা, মুখ্যনায়ক, আধুনিক বুদ্ধ
জন্ম তারিখ (১৮৯১-০৪-১৪)১৪ এপ্রিল ১৮৯১
জন্মস্থান মহোও, কেন্দ্রীয় প্রদেশ (এখন মধ্যপ্রদেশ), ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু তারিখ ৬ ডিসেম্বর ১৯৫৬(1956-12-06) (বয়স ৬৫)
মৃত্যুস্থান দিল্লি, ভারত
জাতীয়তা ভারতীয়
উপাধি ভারতের আইন-মন্ত্রী,
চেয়ারম্যান অব দ্যা কন্‌স্টিটিউশন ড্রাফটিং কমিটি।
আন্দোলন দলিত বৌদ্ধ আন্দোলন
প্রধান সংগঠন সমথ সৈনিক দল,
তফসীল সম্প্রদায়,
স্বনির্ভর শ্রমিক দল (ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি),
পূর্বেকার অস্পৃশ্য জাতি সিডিউল কাস্টেস ফেডারেশন,
Republican Party of India,
বুডিস্ট সোসাইটি অব ইন্ডিয়া (ভারতীয় বৌদ্ধ সংঘ)
রাজনৈতিক দল প্রজাতান্ত্রিক দল (ভারত)
ধর্ম বৌদ্ধধর্ম
দাম্পত্য সঙ্গী রামাবাই (বিয়ে ১৯০৬ সাল) ও সবিতা (১৯৪৮ সাল)
শিক্ষা এম.এ. (M. A.);
পি.এইচ.ডি. (PhD.);
ডি.এস.সি. (D.Sc.);
এল.এল.ডি. (L.L.D.);
ডি.লিট. (D.Lit.),
ব্যরিস্টার (আইন)
শিক্ষাক্ষেত্র ইউনিভার্সিটি অব মুম্বাই,
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি,
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়
স্বাক্ষর Dr. Ambedkar Signature

পরিচিতি সম্পাদনা

ভীমরাও রামজি আম্বেদকর ভারতের গরিব মাহার পরিবারে (তখন অস্পৃশ্য জাতি হিসেবে গণ্য হত) জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রামজি সকপাল ও মাতার নাম ভীমাবাঈ। আম্বেদকর সারাজীবন সামাজিক বৈষম্যের, “চতুর্বর্ণ পদ্ধতি”-হিন্দু সমাজের চারটি বর্ণ এবং ভারতবর্ষের অস্পৃশ্যতা প্রথার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছেন। তিনি বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং হাজারো অস্পৃশ্যদের থেরবাদী বৌদ্ধ ধর্মে (Theravada Buddhism) স্ফুলিঙ্গের মতো রূপান্তরিত করে খ্যাত হয়েছিলেন। আম্বেদকরকে ১৯৯০ সালে মরণোত্তর (Posthumous) “ভারতরত্ন” - ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় উপাধি'তে ভূষিত করা হয়। বহু সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে, ভারতে কলেজ শিক্ষা অর্জনে আম্বেদকর প্রথম “দলিত ব্যক্তি” (Outcast) হিসেবে স্বীকৃতি পান । অবশেষে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং লন্ডন অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয় (লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স) থেকে আইনে ডিগ্রি (বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ উপাধি) লাভ করার পর, আম্বেদকর বিদ্বান ব্যক্তি হিসেবে সুনাম অর্জন করেন এবং কিছু বছর তিনি আইন চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন । পরে তিনি ভারতের অস্পৃশ্যদের সামাজিক অধিকার ও সামাজিক স্বাধীনতার উপর ওকালতির সময় সমসাময়িক সংবাদপত্র প্রকাশ করেছিলেন। কিছু ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা তিনি বোধিসত্ত্ব (বুদ্ধত্ব লাভে যিনি পারমী পূরণ করছেন) উপাধিতে সম্মানিত হয়েছিলেন, যদিও তিনি নিজেকে বোধিসত্ত্ব হিসেবে কখনো দাবি করেননি।[২]

প্রথম জীবন এবং শিক্ষা সম্পাদনা

 
ভীমরাও রামজী শাকপাল যুবক থাকাকালীন[৩]

'মোহ' (Mhow) অঞ্চলের (বর্তমান মধ্য প্রদেশ) এবং কেন্দ্রীয় সামরিক সেনানিবাসে ব্রিটিশ কর্তৃক স্থাপিত শহরে আম্বেদকর জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[৪] তিনি ছিলেন রামজী মালোজী শাকপাল (Ramji Maloji Sakpal) এবং ভীমাবাইের (Bhimabai) ১৪তম তথা সর্বকনিষ্ঠ পুত্র।[৫] তার পরিবার ছিলেন মারাঠী অধ্যুষিত বর্তমান কালের “মহারাষ্ট্র”-এর রত্নগিরি জেলার “আম্বোভাদ” (Ambavade) শহরে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিভুক্ত ছিল (মহর জাতি), যারা অস্পৃশ্য জাতি হিসেবে এবং প্রচণ্ড আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের শিকার হত। আম্বেদকরের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট – ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনা এবং তার পিতা “রামজী শাকপাল” মোহ সেনানিবাসের ভারতীয় সেনা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন, তিনি সেকালের গৎবাঁধা শিক্ষাপদ্ধতিতে মারাঠী এবং ইংরেজিতে ডিগ্রি লাভ করেছিলেন এবং সেইসাথে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা লাভে কঠোর পরিশ্রমে সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করেন। কবির পান্থের মতে, রামজী শাকপাল তার সন্তানদের হিন্দু সংস্কৃতি সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। যদিও আম্বেদকর বিদ্যালয়ে যেতেন, তাকে অন্যান্য অস্পৃশ্য শিশুর ন্যায় আলাদা করে দেয়া হত। শিক্ষকগণ তাদের প্রতি অমনোযোগী ছিলেন এবং কোনোরূপ সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করতেন না। তাদের শ্রেণিকক্ষের ভেতরে বসার অনুমতি ছিলো না, এমনকি তাদের যদি তৃষ্ণা পেতো উচ্চবর্ণের কোনো একজন এমন উচ্চতা হতে সেই পানি ঢেলে পান করাতো, যাতে নিচুজাতের শিক্ষার্থীরা বা পানি বা পানির পাত্র স্পর্শ না করতে পারে । এই কাজটি সাধারণত আম্বেদকরের জন্য করতো বিদ্যালয়ের চাপরাসী (Peon) এবং যদি পিওন না থাকত বা না আসত, তখন সারাদিন পানি ছাড়াই কাটাতে হতো, আম্বেদকর এই অবস্থাকে এভাবে আখ্যায়িত করেছেন - “পিওন নাই,পানি নাই”(নো পিওন, নো ওয়াটার)।[৬]

রামজী শাকপাল ১৮৯৪ সালে অবসর নেন ও দুই বছর পরে তার পরিবার “সতর”-এ (Satara) চলে আসে। জায়গা বদলের অল্পদিনের পরে, শিশু আম্বেদকরের মাতা মারা যান। তারা (সন্তানরা) মাসির সান্নিধ্যে কষ্টের পরিবেশে লালিত হন। তিন ছেলে বালারাম, আনান্দ্রা ও ভীমরাও এবং দুই মেয়ে মঞ্জুলা ও তুলাসাদের মধ্যে একমাত্র আম্বেদকরই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে সমর্থ হন এবং কলেজের স্নাতক ডিগ্রি লাভে সক্ষম হন। ভীমরাও শাকপাল আম্বেদকরের বংশপরিচয়সূচক নামটি (বর্ণনামূলক অতিরিক্ত নাম) এসেছে “রত্নগিরি”জেলায় অবস্থিত তার নিজ গ্রাম আম্বভাদ (Ambavade) থেকে।[৭] তার ব্রাহ্মণ শিক্ষক মহাদেব আম্বেদকর, যিনি তার (আম্বেদকরের) প্রতি অত্যন্ত স্নেহ পরায়ণ ছিলেন,প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তালিকায় তিনি নিজ গ্রাম আম্বোভাদকর (Ambavadekar) থেকে পরিবর্তন করে আম্বেদকর রাখেন।[৭]

আম্বেদকর প্রথম ভারতীয় যিনি বিদেশ থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের প্রথম পিএইচডি ডিগ্রিধারী, এবং দুবার তিনি এ ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকানুযায়ী, পৃথিবীর সেরা ১০০ পণ্ডিতের মধ্যে তিনি একজন। আম্বেদকর সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে প্রথম এবং একমাত্র ব্যক্তি যে অর্জন করেছে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস থেকে সমস্ত বিজ্ঞান বিষয়ের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

উচ্চতর শিক্ষা সম্পাদনা

আম্বেদকর ১৯০৩ সালে (মাত্র ১২ বছর বয়সে) বিয়ে করেন এবং পরিবারসহ তিনি মুম্বাইয়ে (তারপর বোম্বে) চলে আসেন, যেখানে আম্বেদকরই হয়ে উঠেন এলফিন্‌স্টোন র সরকারি বিদ্যালয়ের প্রথম অস্পৃশ্য ছাত্র।[৮] যদিও আম্বেদজর শিক্ষাদীক্ষায় সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন, তথাপি তিনি যে বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছিলেন তাতে তিনি ক্রমশ বিরক্ত হয়ে উঠছিলেন। ১৯০৭ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম অস্পৃশ্য হিসেবে ভারতের বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এই সাফল্য তার সম্প্রদায়কে উদ্দীপ্ত করে তুলে আশা যোগায় । একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি তার শিক্ষক কৃষ্ণজী অর্জুন বেলুস্কর (অন্য নাম দাদা কেলুষ্কর), যিনি ছিলেন মারাঠী জাতির একজন বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র, তার পরামর্শে “গৌতম বুদ্ধের জীবনী”র জীবনচরিত উপহার পান । অবশ্য আম্বেদকরের বিয়ে যথারীতি হিন্দু রীতিতেই ৯ বৎসরের দাপোলির মেয়ে “রামাবাই”এর সাথে হয়।[৮] ১৯০৮ সালে তিনি এলিফিন্‌স্টোন কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানে থাকাকালীন তিনি বারোদা'র রাজা “গয়াকওয়াদ সায়াজী রাও ৩য়” (Maharaja Sayajirao Gaekwad III, Ruler of Baroda, Sahyaji Rao III) কর্তৃক মাসিক ২৫ রুপির বৃত্তি অর্জন করেন। ১৯১২ সালে, তিনি বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক বিজ্ঞানে ডিগ্রি লাভ করেন এবং বারোদা রাজ্যে সরকারি চাকরি গ্রহণ করেন। সেই বছরেই তার প্রথম সন্তান, ইশান্ত জন্ম গ্রহণ করেন। আম্বেদকর তার নতুন পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে আসেন, পরে অবশ্য তার অসুস্থ পিতাকে দেখভাল করতে মুম্বাই চলে আসেন। তার বাবা ১৯১৩ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ১৯১৩ সালে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র হিসেবে তিন বছর মেয়াদী মাসিক সাড়ে এগারো ব্রিটিশ পাউন্ডের বৃত্তি গ্রহণ করেন।

নিউইয়র্কে তিনি তার পারসী বন্ধু “নাভাল ভাতেনা”র সাথে লিভিংস্টোন হলে বসবাস করেন। তিনি প্রত্যহ “লো” লাইব্রেরিতে চার ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন। জুন ১৯১৩ সালে তিনি এম. এ. পরীক্ষায়, অধীত মূল বিষয় অর্থনীতি উত্তীর্ণ হন, এছাড়াও তিনি অন্য বিষয় গুলোতে- যেমন সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শনশাস্ত্র এবং নৃতত্ত্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি গবেষণা লব্ধ প্রবন্ধ “প্রাচীন ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য” (Ancient Indian Commerce) প্রকাশ করেন। ১৯১৬ সালে তিনি অন্য আরেকটি এম. এ. গবেষণা প্রবন্ধ “ভারতের জাতীয় কারাগারের লভ্যাংশ – একটি ঐতিহাসিক ও বিশ্লেষণিক গবেষণা” (National Dividend of India-A Historic and Analytical Study)। ৯ই মে, নৃতত্ত্ববিদ প্রফেসর আলেকজান্ডার গোল্ডেনউইজার কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারের আগে তিনি “ভারতীয় জাতিঃ তাদের পদ্ধতি, উৎপত্তি বং উন্নয়ন” বিষয়ক অভিসন্দর্ভ পাঠ করেন। ১৯১৬ সালের অক্টোবর মাসে তিনি ভর্তি হন “গ্রেস ইন্‌ন ফর ল” (Gray's Inn for Law) এবং লন্ডনের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতি বিজ্ঞান (London School of Economics and Political Science for Economics) স্কুলে যেখানে তিনি ডক্টরাল থিসিসের কাজ শুরু করেন। ১৯১৭ সালে জুন মাসে বারোদা বৃত্তির শেষান্তে তিনি ভারতে যেতে বাধ্য হন, অপরদিকে তার গবেষণামূলক প্রবন্ধ জমা দেয়ার জন্য ৪ বছরের মধ্যে জমা দেয়া ও ফিরে আসার অনুমতি পান। তিনি তার অতি মূল্যবান এবং অধিক পছন্দের গ্রন্থগুলো জাহাজযোগে (স্টিমার) পাঠানোর সময় একটি জার্মান ডুবোজাহাজ দ্বারা নিমজ্জিত হয়ে যায়।

 
১৯২২ সালে আম্বেডকর ব্যারিস্টার হিসেবে।

ভারতের শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত (leading Indian Scholar) হিসেবে আম্বেদকরকে সাউথবোরো কমিটিতে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো, ১৯১৯ সালে যেটি ছিলো ভারতের সরকারি আইন, ১৯১৯ এর প্রস্তুতিমূলক (কমিটি)। এটি শুনতেই, আম্বেদকর পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী এবং অন্ত্যজদের জন্য কোটা সংরক্ষণ (তার অনেকদিনের অন্তর্নিহিত বাসনা ) এবং অন্য সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অধিকারের সপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। ১৯২০ সালে, তিনি মুম্বাইয়ের একটি সাপ্তাহিক “মুকনায়ক – মৌনদের নেতা” [Mooknayak (Leader of the Silent)] প্রকাশ করেন, কোলহপুরের মহারাজা, শাহু ১ম (Shahu I) (১৮৮৪-১৯২২ সাল) আম্বেদকর এই পত্রিকাটিতে হিন্দু মৌলবাদী (Arthodox) রাজনীতিবিদদের কঠোর সমালোচনা করেন এবং ভারতের রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের বিতৃষ্ণা উপলব্ধিকরত জাতিবৈষম্যের (Caste Discrimination) প্রতি যুদ্ধ করেছিলেন। কোলহপুরে তার বক্তব্য অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের বৈঠকে আঞ্চলিক রাজ্যের রাজা শাহু ৪র্থ'কে মোহিত করে, যিনি আম্বেদকরকে “ভবিষ্যতের জাতীয় নেতা” বলে গণ্য করেন এবং পরবর্তীতে গোঁড়া হিন্দু সম্প্রদায় সবাইকে অবাক করে দিয়ে আম্বেদকরের সাথে নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। নিজের জমানো কিছু অর্থের সাথে কলহপুরের মহারাজা ও তার বন্ধু নাভাল বাহেনার কাছ থেকে লোনকৃত কিছু অর্থ দিয়ে জুলাই মাসে তিনি শিক্ষক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করে লন্ডনে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি “লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স”“গ্রে ইন্‌ন” -এ (Bar) পড়ার জন্য ফিরে এসে দরিদ্র জীবনযাপন শুরু করেন ও ব্রিটিশ জাদুঘরে নিয়মিত অধ্যয়ন করেন। ১৯২২ সালে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে আরো একবার আম্বেদকর সকলের প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম হনঃ লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স তিনি এম এস সি (অর্থনীতি)-র জন্য গবেষণা লব্ধ প্রবন্ধ সম্পূর্ণ করেন ও তাকে আইনজীবী সম্প্রদায়ে যোগদানের জন্য আহবান করা হয়। আম্বেদকর তার পিএইচডি প্রবন্ধটি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেন। আম্বেদকর সফল আইনি চর্চা শুরু করেন। আইনি চর্চার শুরুর দিকে, আম্বেদকর কিছু ব্রাহ্মণ কর্তৃক তিন অ-ব্রাহ্মণ নেতা কে বি বাগদে, কেশাভরাও জেদহে এবং দিনকোরাও জাভালকরের বিরুদ্ধে আনীত মকদ্দমায় বিবাদীপক্ষে লড়েন । ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তারা মানহানির মামলায় জড়িয়ে পড়েন । বাদীপক্ষে ছিলেন পুনার বিখ্যাত উকিল এল বি বোপাটকর। আম্বেদকর তার মামলা যুক্তিপূর্ণ তথ্য ও দক্ষতার সাথে উপস্থাপনা করে বাকপটুতার দ্বারা ১৯২৬ সালের অক্টোবর মাসে বিজয়ী হন। এই বিজয়ের সুনাম চারদিকে অনেক বিস্তার লাভ করেন।

স্বপ্নদর্শী আম্বেদকর সম্পাদনা

আম্বেদকর ছিলেন স্বপ্নদর্শী ও কল্পনা প্রবণ। শ্রেষ্ঠতর প্রশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ওকালতি পেশায় তিনি কম সময় দেন ।  তিনি বিহার এবং মধ্যপ্রদেশ কে ভাগ করার প্রস্তাব দেন, যার প্রতিফলন ঘটেছে এইভাবে ২০০০ সালে বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড ও মধ্যপ্রদেশ ভেঙে ছত্তিশগড় গঠন করাহয় । তিনি ভারতবর্ষের জল ও বিদ্যুতনীতির প্রবর্তক । কেন্দ্র ও রাজ্য স্তরের সেচ প্রকল্প গুলির উন্নতির জন্য তিলি কেন্দ্রীয় জল কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কেন্দ্রীয় প্রযুক্তিগত বল পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় বিদ্যুত কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একটি শক্তিশালী পদ্ধতির উপর জোর দিয়েছিলেন, ( যেটা ভারতবর্ষ আজও বিশ্বাস করে)।

লক্ষ্যসমূহ সম্পাদনা

বোম্বে হাইকোর্টে চর্চারত অবস্থায় আম্বেদকর অস্পৃশ্যদের শিক্ষিত করে তুলতে অবিবেচকের মত দৌড়েছিলেন। এই লক্ষ্যগুলো অর্জনে তার প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক চেষ্টা ছিলো “বহিষ্কৃত্ হিতকারিণী সভা”। এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং গৃহহীন ও অন্ত্যজ জাতির (Outcast) উন্নতির জন্য কাজ করে । ১৯২৭ সালে আম্বেদকর অস্পৃশ্যতা'র বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি গণ আন্দোলন শুরু করেন এবং সুপেয় পানির উৎস দানে সংগ্রাম চালিয়ে যান (উল্লেখ্য সে সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে নিম্নবর্ণের প্রবেশের অধিকার ছিলো না)। মহদে সত্যগ্রহ নামের অস্পৃশ্যদের (অন্ত্যজ জাতির) জন্য সংগ্রাম করে সুপেয় পানি পানের অধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তাকে ১৯২৫ সালে বোম্বে প্রেসিডেন্সি কমিটিতে নিয়োগ করা হয়েছিলো যাতে করে তিনি সকল ইউরোপীয় সীমন কমিশনের সাথে কাজ করতে পারেন। সমগ্র ভারতজুড়ে স্ফুলিঙ্গের আকারে ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং যখন এই তালিকাটি অধিকাংশ ভারতীয় কর্তৃক উপেক্ষিত হয় , আম্বেদকর নিজে ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার জন্য একটি পৃথক সুপারিশনামা প্রণয়ন করেন ।

পুনে চুক্তি সম্পাদনা

আম্বেদকরের প্রসিদ্ধি এবং অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সমর্থনের কারণে, তাকে ১৯৩২ সালে লন্ডনে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে (Second Round Table Conference) আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] মহাত্মা গান্ধী অস্পৃশ্যদের জন্য গঠিত পৃথক নির্বাচকমণ্ডলির প্রচণ্ডভাবে বিরোধিতা করেন, যদিও তিনি অন্য সকল সংখ্যা লঘুদের যেমন মুসলমানদের ও শিখদের পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী (Separate Electorate) বিনা দ্বিধায় মেনে নেন এই বলে যে, তিনি অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের গঠনকৃত নির্বাচকমন্ডলী হিন্দু সমাজকে ভবিষ্যতে বিভক্ত করবে এবং উচ্চশ্রেণীর ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। ১৯৩২ সালে যখন ব্রিটিশরা আম্বেদকরের সাথে একমত হন এবং পৃথক নির্বাচকমণ্ডলীর ঘোষণা করেন, তখন মহাত্মা গান্ধী পুনের এরোদা কেন্দ্রীয় কারাগারে (Yerwada central jail) উপবাস শুরু করেন।

মহাত্মা গান্ধীর এই উপবাস (fast) ভারতজুড়ে জনগণের মাঝে প্রবল বিক্ষোভের উদ্দীপনা জোগায় এবং ধর্মীয় কট্টরপন্থী নেতারা (Orthodox Politicians), কংগ্রেস নেতাকর্মীদের মধ্যে মদন মোহন মালব্য ও পালঙ্কর বালো ও তার সমর্থকরা আম্বেদকরের সঙ্গে এরাভাদে (Yeravada) যৌথ বৈঠক করেন। গান্ধীবাদীদের প্রবল চাপের মুখে (Massive coercion) এবং সাম্প্রদায়িক প্রতিশোধ (Communal reprisal) ও অস্পৃশ্য সম্প্রদায়কে নির্মূলীকরণের আশঙ্কায় আম্বেদকর পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী বাতিল করতে সম্মত হন। এই চুক্তির পরে গান্ধী উপবাস পরিত্যাগ করেন, ইতিহাসে এটি পুনে চুক্তি নামে পরিচিত। চুক্তির ফলশ্রুতিতে, আম্বেদকর পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী গঠনের দাবি ছেড়ে দেন যা আম্বেদকর গান্ধীর সাথে বৈঠকের আগে ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই করে প্রতিশ্রুতি পান যে, একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন অস্পৃশ্যদের জন্য সংরক্ষিত হয়।

রাজনৈতিক অবদান সম্পাদনা

আম্বেদকর ১৯৩৫ সালে মুম্বাইয়ের সরকারি আইন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। উক্ত পদে তিনি দু'বছর অধিষ্ঠিত ছিলেন। মুম্বাইয়ে বসবাসের বাসনায় তিনি একটি বাড়ি নির্মাণ করেন এবং সেখানে তিনি ৫০,০০০ হাজারেরও বেশি বই সমৃদ্ধ একটি ব্যক্তিগত পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন।.[৯] তার প্রথম স্ত্রী রামাবাই দীর্ঘ অসুস্থতার পরে একই বছর মৃত্যুবরণ করেন। অসুস্থ অবস্থায় তার স্ত্রী রামাবাইয়ের পান্দরপুর তীর্থে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন, কিন্তু আম্বেদকর তাকে যেতে দিতে অস্বীকৃতি জানান এই বলে যে, তিনি তাকে বরং একটি নতুন পান্দরপুর বানিয়ে দিবেন হিন্দু পান্দরপুরের পরিবর্তে - যেটা কিনা তাদের অস্পৃশ্য বলে গণ্য করে। ১৩ই অক্টোবর নাসিকের কাছে ঈওলার বৈঠকে বক্তব্যে আম্বেদকর তার ভিন্ন ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার অভিপ্রায় ঘোষণা করেন এবং তার অনুগতদেরও হিন্দু ধর্ম ত্যাগে প্রণোদিত করেন।[৯] সমগ্র ভারতের অনেকগুলো জনসভায় তিনি তার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন। ১৯৩৬ সালে আম্বেদকর স্বনির্ভর শ্রমিক দল (ইন্ডিপেন্ডেন্ট ল্যাবর পার্টি) প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি ১৯৩৭ সালের কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়ন পরিষদ বা বিধানসভার (Central Legislative Assembly) নির্বাচনে ১৫টি আসন লাভ করে। নিউইওর্কে লিখিত গবেষণালব্ধ উপাত্তের ভিত্তিতে একই বছর তিনি তার বই দ্য এন্‌নিহিলেশন অব কাস্ট প্রকাশ করেন। আম্বেদকর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা সমিতিরএবং রাজপ্রতিনিধির নির্বাহী সভায় শ্রমমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। কংগ্রেস ও গান্ধীর অস্পৃশ্যদের প্রতি আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে আম্বেদকর তীব্রভাবে গান্ধী ও কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন।[১০] “কারা শূদ্র ছিল?”তে (Who were Shudras?) বর্ণনা করতে চেষ্টা করেন শূদ্র বর্ণ কীভাবে গঠিত হয় অর্থাৎ হিন্দু বর্ণপ্রথার (Hierarchy of Hindu Caste System) নিম্নবর্ণ সৃষ্টির ইতিহাসের উপর আলোকপাত করেন। তিনি এও উল্লেখ করেন, শূদ্র কীভাবে অস্পৃশ্য হতে আলাদা। তিনি রাজনৈতিক দল সারা ভারতের "সিডিউল কাস্টেস ফেডারেশনে" রূপান্তরিত করেন , যদিও তা ১৯৪৬-এ ভারতের সংবিধান পরিষদের নির্বাচনে ভালো করেনি। পরিশিষ্ট লিখতে গিয়ে ১৯৪৮ সালে আম্বেদকর হিন্দুবাদকে কর্কশ ভাষায় সমালোচনা করেন তাঁর “দ্য আন্‌টাচেব্যলসঃ এ থিসিস অন দ্য অরিজিনস অব আন্‌টাচেব্যলিটি” তে এভাবেঃ

The Hindu Civilisation.... is a diabolical contrivance to suppress and enslave humanity. Its proper name would be infamy. What else can be said of a civilisation which has produced a mass of people.... who are treated as an entity beyond human intercourse and whose mere touch is enough to cause pollution?

“হিন্দু সভ্যতা.... হচ্ছে মানবতাকে দমন এবং পরাভূত করতে একটি পৈশাচিক কৌশল। এর প্রকৃত নাম হবে সামাজিক কুখ্যাতি। কাকে সভ্যতা বলে ডাকা যায়, যার একগাদা মানুষ...., যাদের সত্তা মানবসত্তার নিচে বলে গণ্য হয় ও শুধু যাদের ছোঁয়াই দূষণ উদ্রেকের জন্য যথেষ্ট?”[১০]

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক গঠনের রূপরেখা ও নীতি সম্পাদনা

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক বা আরবিআই এর রূপরেখা ও নীতি নির্দেশিকা হিল্টন ইয়ং কমিশনে তাঁর দেওয়া প্রস্তাবনা থেকে তৈরি হয়।[১১]

পাকিস্তান বা ভারতের সীমানা সম্পাদনা

১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে, তিনি বহুসংখ্যক বই, ক্ষুদ্র পুস্তিকা প্রকাশ করেন, যেমন- থটস্‌ অন পাকিস্তান[১২]
উপরের বইটিতে আম্বেদকর একটি উপাধ্যায়ে লিখেছিলেন যদি মুসলমানেরা সত্যিই পাকিস্তান চায়, তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া উচিত। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, যদি তারা পাকিস্তানের বশ্যতা স্বীকার করে, তবে তাদের অবশ্যই সে অধিকার দেয়া হবে। ভারতের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত মুসলমানদের বিশ্বাস করা যায় কিনা তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। মুসলমানরা যদি ভারত আক্রমণ করে অথবা মুসলমান বিদ্রোহ হয়, তবে ভারতীয় মুসলিম সেনারা কার পক্ষ নেবে? ভারতের সুরক্ষাজনিত কারণে, মুসলমানরা যেভাবে চায় সেভাবে পাকিস্তানকে মেনে নেয়া উচিত। আম্বেদকরের মতে, হিন্দুদের ধারণা যে, যদিও হিন্দু ও মুসলমান দুটি ভিন্ন জাতি, তারা একটি রাষ্ট্রে একত্রে সহাবস্থান করতে পারে। তার মতে এটি ছিল একটি বিকৃত পরিকল্পনা, কোনো সুস্থ ব্যক্তি এতে সম্মত হতে পারে না। [১২]
আম্বেদকর দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলাম চর্চারও সমালোচক ছিলেন। ভারত বিভক্তির সমর্থন করে, তিনি মুসলিম সমাজে বাল্যবিবাহ চর্চা এবংনারীদের ভুল পথে পরিচালিত করার নিন্দা জানান।

No words can adequately express the great and many evils of polygamy and concubinage, and especially as a source of misery to a Muslim woman. Take the caste system. Everybody infers that Islam must be free from slavery and caste.[While slavery existed], much of its support was derived from Islam and Islamic countries. While the prescriptions by the Prophet regarding the just and humane treatment of slaves contained in the Koran are praiseworthy, there is nothing whatever in Islam that lends support to the abolition of this curse. But if slavery has gone, caste among Musalmans [Muslims] has remained.
"কোনো শব্দই বহুবিবাহপ্রথা ও অবিবাহিত সহবাসের (Concubinage) ক্ষতি প্রকাশে পর্যাপ্ত নয়, যা বিশেষত মুসলিম নারীদের সীমাহীন দুর্ভাগ্যের কারণ। ইসলাম সমস্ত ক্রীতদাসত্ব ও বর্ণপ্রথা থেকে মুক্ত। ক্রীতদাসত্বের অনেক কিছুই ইসলাম ও ইসলামিক দেশগুলো থেকে এসেছে । নবী কর্তৃক এ দাসদের প্রতি মানুষের সুআচরণ করার নির্দেশনা থাকলেও কোরানে এই রকম কোনো কিছুই নেই যে ইসলামে যা এই অভিশাপ থেকে মুক্তির নির্দেশনা দেয়। ক্রীতদাসত্ব লুপ্ত হয়ে গেলেও , শ্রেণিপ্রথা মুসলিমে রয়ে যাবে।"[১২]

তিনি লিখেছিলেন যে, মুসলিম বিশ্ব হচ্ছে “হিন্দু সমাজের চেয়েও অনেকাংশে সামাজিক দুর্ভোগে ভরা” সমালোচনা করে তিনি বলেন, মুসলমানরা তাদের সাম্প্রদায়িক প্রথাকে (Sectarian Caste System) ভ্রাতৃত্বের শ্রুতিমধুর (Euphemisms) মোড়ক দ্বারা আবৃত করেছে।[১২] তিনি আরো বলেন, মুসলমানদের মধ্যে আযরাল শ্রেণীর (Azral Class) প্রতি বৈষম্যতা, যারা “পদানত” (Degraded) হিসেবে স্বীকৃত, এর সাথে মুসলিম সমাজে পীড়াদায়ক পর্দা প্রথার মাধ্যমে নারীদের উৎপীড়নেরও (Oppression) সমালোচনা করেন। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে অভিযোগ করেন যে, পর্দাপ্রথা হিন্দুদের মধ্যে চর্চিত হলেও মুসলমানরা ধর্মের মাধ্যমে তা অনুমোদন করে নেন। তার মতে, ইসলামের প্রতি তাদের ধর্মোম্মত্ততা (fanaticism) এতটাই উপরে উঠে যে, আক্ষরিক অর্থে ইসলামের বাণী তাদের সমাজকে করেছে খুব দৃঢ় এবং অপরিবর্তনীয়। তিনি আরো লিখেন যে, অন্য দেশের মুসলমানদের মতো যেমন তুরষ্কের-এর মতো ভারতীয় মুসলমানরাও নিজেদের সমাজকে পুনর্গঠনে ব্যর্থ হয়েছে।[১২]

ভারতের সংবিধান খসড়ায় অবদান সম্পাদনা

 
মহারাষ্ট্রের,আউরঙ্গবাদ-এডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর মারাথাদা বিশ্ববিদ্যালয়-এ অবস্থিত বাবা সাহেব আম্বেদকরের কেন্দ্রীয় মূর্তিতে কিছু মানুষের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।
 
আম্বেদকর বর্ষবিবরণী মানিমান্দাপাম, চেন্নাই

১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার দিন, নব্য গঠিত কংগ্রেসশাসিত সরকার আম্বেদকরকে জাতির প্রথম আইন মন্ত্রী পদ অর্পণ করেন, যা তিনি সানন্দে গ্রহণ করেছিলেন। ২৯ই আগস্ট, আম্বেদকরকে সংবিধান খসড়া সমিতির সভাপতি করা হয়, যা স্বাধীন ভারতের নতুন সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে বিধানসভা কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। আম্বেদকর তার সহকর্মী ও সমসাময়িক পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে প্রচুর প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। এই কাজে আম্বেদকর প্রাচীন বৌদ্ধ ধর্মে সঙ্ঘের-চর্চা নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থে অধিক পড়াশোনাই অনেক সহায়ক হিসেবে কাজ করেছিলো। ব্যালটের দ্বারা ভোট প্রদান, তর্ক-বিতর্কের ও অগ্রবর্তী নীতিমালা, করণীয় বিষয়সূচী, সভা-সমিতি ও ব্যবসায় সংক্রান্ত প্রস্তাবনা সমূহের ব্যবহার ইত্যাদি সংঘ চর্চা দ্বারা সমন্বয় সাধিত হয়। সংঘ চর্চা প্রাচীন ভারতের কিছু রাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক উপজাতিগোষ্ঠী যেমন শাক্যবংশ (Shakyas) ও লিচ্ছবিররা (Lichchavis) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। অতঃপর আম্বেদকর যদিও তার সাংবিধানিক অবয়ব তৈরিতে পশ্চিমা প্রণালীর ব্যবহার করেন, বস্তুত এর অনুপ্রেরণা ছিলো ভারতীয়, বাস্তবিকপক্ষে উপজাতীয়।
গ্রানভিলে অস্টিন আম্বেদকর কর্তৃক প্রণীত ভারতীয় সংবিধান খসড়াকে বর্ণনা দেন এভাবে “একনিষ্ঠ ও সর্বোত্তম সামাজিক নথি পত্র।”... 'অধিকাংশ ভারতের সংবিধানের অধিকাংশ অনুচ্ছেদ স সামাজিক বিপ্লব এবং সামাজিক বিপ্লব পরিপোষণের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। " আম্বেদকর কর্তৃক প্রণীত ভারতীয় সংবিধানে সর্বাধিক অধিকারসুরক্ষা জনসাধারণের প্রতি প্রদান করা হয়েছে -যেমন ধর্মীয় স্বাধীনতা, অস্পৃশ্যতা বিলোপ এবং সব ধরনের বৈষম্য বিধিবহির্ভূতকরণ। আম্বেদকর নারীদের অধিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের জন্য যুক্তি প্রদর্শন করেন। তিনি এতে বিধানসভার সমর্থন অর্জন করে সিডিউল কাস্টেসভুক্ত নারী সদস্যদের বা সিডিউল উপজাতীয়দের জন্য বেসরকারি খাতে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় কর্মক্ষেত্রে চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান করে কোটার ব্যবস্থা করেন। ভারতের আইন প্রণেতারা আশা করেন এর মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক বিভাজন দূর হবে ও ভারতীয় অস্পৃশ্যরা অধিক সুযোগ-সুবিধা পাবে।
১৯৪৯ সালের ২৬ই নভেম্বর গণ-পরিষদ কর্তৃক সংবিধানটি গৃহীত হয়। আম্বেদকর ১৯৫১ সালে হিন্দু কোড বিল খসড়াটি সংসদে পড়ে থাকার কারণে।(stalling in parliament) রাখার কারণে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। হিন্দু কোড পৈতৃক সম্পত্তি, বিবাহ ও অর্থনীতি আইনের আওতায় লিঙ্গসমতার নীতি প্রতিষ্ঠা করে। প্রধানমন্ত্রী নেহেরু, মন্ত্রিসভা ও অনেক কংগ্রেস নেতারা একে সমর্থন জানালেও বেশিরভাগ সাংসদ এর সমালোচনা করেন। আম্বেদকর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১৯৫২'র নির্বাচনে লোকসভায় (lower house of parliament) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, কিন্তু হেরে যান। তাকে পরে রাজ্যসভার সাংসদ পদে সমাসীন করা হয়। ১৯৫২ সালের মার্চ মাসে এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি এই সদস্যপদে বহাল ছিলেন।

বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ সম্পাদনা

নৃতত্ত্বের ছাত্র হিসেবে আম্বেদকর আবিষ্কার করেন মহরেরা আসলে প্রাচীন ভারতীয় বৌদ্ধ। বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাদেরকে গ্রামের বাইরে সমাজচ্যুতদের ন্যায় থাকতে বাধ্য করা হলো, অবশেষে তারাই অস্পৃশ্যতে পরিণত হয়েছিলো। তিনি এই ব্যাপারে তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ বই কারা শূদ্র ছিল? তে বর্ণনা দেন।

 
দীক্ষাভূমি, একটি স্তূপ যেখানে আম্বেদকর তাঁর অন্য অনুসারীদের সাথে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন


আম্বেদকর সারাজীবন ধরেই বৌদ্ধ ধর্ম অধ্যয়ন করেন, ১৯৫০ এর সময়ে তিনি এই ধর্মে তার সম্পূর্ণ মনোযোগ দেন এবং শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেন (তারপর শিলং) বৌদ্ধ পণ্ডিতদ ও ভিক্ষুদের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে। যখন তিনি পুনের কাছাকাছি একটি নতুন বৌদ্ধ মন্দির অর্পণ করেন, তখন আম্বেদকর ঘোষণা দেন যে, তিনি বৌদ্ধ ধর্মের উপর একটি বই লিখেছেন, যত শীঘ্রই তিনি বইটি শেষ করবেন, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই ধর্ম গ্রহণ করবেন।[১৩] আম্বেদকর ১৯৫৪ সালে দু'বার বার্মা সফর করেন, দ্বিতীয় সফরের উদ্দেশ্য ছিল রেঙ্গুনের বিশ্ব ৩য় বৌদ্ধ শিক্ষাবৃত্তি সম্মেলনে যোগদান করা । ১৯৫৫ সালে তিনি ভারতীয় বৌদ্ধ মহাসভা (দ্য বুড্ডিস্ট সোসাইটি অব ইন্ডিয়া) গঠন করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি তার সর্বশেষ বই বুদ্ধ ও তাঁর ধর্ম” (The Buddha and His Dhamma)-এর কাজ শেষ করেন, যেটি তার মৃত্যুর পর ছাপানো হয়।
শ্রীলঙ্কার জনৈক ভিক্ষু হামমালা সাদ্ধ্যতিষ্যের সাথে সাক্ষাতের পর,[১৪] আম্বেদকর নিজের ও অনুসারীদের জন্য নাগপুরে ১৪ই অক্টোবর ১৯৫৬ সালে একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। ঐতিহ্যবাহী প্রথায় বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছ থেকে ত্রিশরণ (Three Refuges) ও পঞ্চশীল (Five Precepts) গ্রহণের মাধ্যমে তিনি তার ধর্মান্তরিতের কাজ সম্পন্ন করেন। তারপর তিনি তার সহযোগীদের (সংখ্যায় ৫ লাখের মতো) যারা তার পাশে ছিলেন, সবাইকে তিনি ধর্মান্তরিত করান।[১৩] তারপর তিনি নেপালের কাঠমান্ডুতে ৪র্থ বিশ্ব বৌদ্ধ সম্মেলনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি “বুদ্ধকার্ল মার্ক্স” এবং “বিপ্লব ও বিপ্লব-বিরোধী প্রাচীন ভারত” সম্পর্কিত রচনা প্রকাশ করেন যা তার বই বুদ্ধ ও তাঁর ধর্ম বুঝতে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে, যা তিনি শেষ করে যেতে পারেন নি।

মৃত্যু সম্পাদনা

 
পুনের আম্বেদকর জাদুঘরে একটি আবক্ষ-প্রস্তর মূর্তি

১৯৪৮ সাল থেকে আম্বেদকর ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। শারীরিক অবনতির জন্য ১৯৫৪ সালে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন ও একপর্যায়ে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন ।[১৩] রাজনৈতিক কারণে তিনি ক্রমশ অনেক তিক্তবিরক্ত হয়ে উঠেন, যা তার স্বাস্থ্যের কাল হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৫৫ সালের পুরোটা জুড়ে তিনি প্রচুর কাজ করার ফলে তার শারীরিক অবস্থার অধিকতর অবনতি হয়। টানা তিন দিন “বুদ্ধ ও তাঁর ধর্ম” বইটির সর্বশেষ পাণ্ডুলিপি তৈরির পর তিনি ৬ই ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে তার দিল্লীর নিজ বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় চির নিদ্রায় শায়িত হন।

৭ই ডিসেম্বর তার জন্য বৌদ্ধ ধর্মীয় আদলে দাদারচৌপাট্টি সমুদ্র সৈকতে একটি শবদাহ নির্মিত হয়। হাজারো অনুসারী, কর্মীবৃন্দ ও শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হন। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে একটি ধর্মান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যারা শবদাহ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন তারা একই স্থানে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

আম্বেদকরের দ্বিতীয় স্ত্রী সভিতা আম্বেদকর (বিবাহ পূর্ব নামঃ সার্দা কবির। স্বামীর সাথে তিনিও বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ২০০২ সালে বৌদ্ধ হিসেবেই মারা যান। উনার পুত্র ইশান্ত (অন্য নাম ভাইয়াসাহেব আম্বেদকর) ও তার পুত্রবধূ মীরা তাই আম্বেদকর। আম্বেদকরের নাতি প্রকাশ যিনি ইন্ডিয়ান বুড্ডিস্ট অ্যাসোসিয়েশান এর জাতীয় সভাপতি। ভারতীয় "বাহুযান মহাসঙ্ঘ"এর নেতৃত্ব দানকারী এবং ভারতীয় লোকসভার উভয় কক্ষে দায়িত্ব পালনকারী ।

আম্বেদকরের ব্যক্তিগত মন্তব্য খাতায় ও কাগজে বহু অসমাপ্ত মুদ্রলিখন (টাইপস্ক্রিপ্টস) ও হাতে লেখা খসড়া পাওয়া যায়, পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে তা প্রকাশিত হয়েছিলো। যার মধ্যে ছিলো “ওয়েটিং ফর অ্যা ভিসা”, যার সম্ভাব্য লিখিত সময় ১৯৩৫ থেকে ১৯৩৬ এর মাঝামাঝি এবং একটি আত্মজীবনচরিত (Autobiographical work) ও “অস্পৃশ্য বা ভারতের ঘেটো শিশুরা” যেটি ১৯৫১'র আদমশুমার হিসেবে বিবেচিত।[১৩]

আম্বেদকরের জন্য তার দিল্লির ২৬ আলীপুর রােডের বাসভবনে একটি স্মারক স্থাপিত হয়। তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করে আম্বেদকর জয়ন্তী বা ভীম জয়ন্তী হিসেবে পালিত হয়। তাকে ১৯৯০ সালে মরণোত্তর পুরস্কার হিসেবে ভারতের সর্বোচ্চ উপাধি ভারত রত্ন দেয়া হয়েছিল। তার সম্মানে বহু সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়, যেম-ন হায়দ্রাবাদের ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর ওপেন ইউনিভার্সিটি, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম ডঃ বিআর আম্বেদকর ইউনিভার্সিটি, মুজাফ্‌ফরপুরের বি আর আম্বেদকর বিহার ইউনিভার্সিটি এবং জলন্ধরের বি আর আম্বেদকর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ও নাগপুরের ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শোনগাঁও বিমানবন্দর। ভারতের সংসদ ভবনে আম্বেদকরের একটি বিশাল প্রতিকৃতি প্রদর্শিত আছে।

নাগপুরে তার জন্ম (১৪ই এপ্রিল) ও মৃত্যুবার্ষিকীতে (৬ই ডিসেম্বর) ও ধর্মচক্র প্রবর্তন দিন (১৪ই অক্টোবর), মুম্বাইয়ে কমপক্ষে ৫লাখ অনুসারীরা তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন। হাজারো বইয়ের দোকান বসে, বিক্রি হয় এই দিন। তার অনুসারীদের প্রতি বার্তা ছিলঃ “শিক্ষিত হও!!! আন্দোলন কর!!! সংগঠিত হও!!!”

রচনাবলি ও বক্তব্যসমূহ সম্পাদনা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহারাষ্ট্র সরকার (বোম্বে) আম্বেদকরের সংকলিত রচনাবলি ও বক্তব্যসমূহ বিভিন্ন বই আকারে প্রকাশ করেন।[১৫]

ভলিউম নম্বর. বর্ণনা
ভলি. ১. ভারত জাতিঃ তাদের পদ্ধতি, উৎপত্তি এবং উন্নয়ন এবং ১১টি অন্যান্য প্রবন্ধ
ভলি. ২. ডঃ আম্বেদকর বোম্বে বিধানসভায়, সীমন কমিশনের সাথে এবং গোল টেবিল বৈঠকে, ১৯২৭-১৯৩৯
ভলি. ৩. হিন্দু দর্শনশাস্ত্র; ভারত এবং সাম্যবাদের পূর্বসর্তাবলী; রাষ্ট্রবিপ্লব ও বিপ্লব বিরোধী; বুদ্ধ বা কার্ল মার্ক্স
ভলি. ৪. হিন্দুদের প্রহেলিকা[১৬]
ভলি. ৫. অস্পৃশ্য ও অস্পৃশ্যতার উপর প্রবন্ধ
ভলি. ৬. ব্রিটিশ ভারতে আঞ্চলিক অর্থনীতির বিবর্তন
ভলি. ৭. কারা শুভ্র ছিলো? ; অস্পৃশ্য সম্প্রদায়
ভলি. ৮. পাকিস্তান বা ভারতের সীমানা
ভলি. ৯. কংগ্রেসগান্ধী অস্পৃশ্যদের প্রতি যা করেছিলো; জনাব গান্ধী এবং অস্পৃশ্যদের দাসত্ব মোচন
ভলি. ১০. ডঃ আম্বেদকর রাষ্ট্র প্রধান কার্যনির্বাহক সমিতির সদস্য হিসেবে, ১৯৪২-১৯৪৬
ভলি. ১১. বুদ্ধ ও তাঁর ধর্ম
ভলি. ১২. অপ্রকাশিত লেখা; প্রাচীন ভারতীয় ব্যবসা-বাণিজ্য; আইনের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসমূহ; ওয়েটিং ফর অ্যা ভিসা ; অন্যান্য টীকাসমূহ, ইত্যাদি।
ভলি. ১৩. ভারতের মুখ্য সংবিধান স্থপতি হিসেবে
ভলি. ১৪. (২ খণ্ডে) ডঃ আম্বেদকর এবং হিন্দু কোড বিল
ভলি. ১৫. ডঃ আম্বেদকর স্বাধীন ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী হিসেবে এবং সংসদের বিরোধী সদস্য হিসেবে (১৯৪৭-১৯৫৬)
ভলি. ১৬. ডঃ আম্বেদকরের পালি ব্যাকরণ
ভলি. ১৭ (১ম অংশ) ডঃ বি. আর. আম্বেদকর এবং তার Egalitarian রাষ্ট্র বিপ্লব – মানবাধিকার যুদ্ধ। Events starting from March 1927 to 17 November 1956 in the chronological order
(২য় অংশ) ডঃ বি. আর. আম্বেদকর এবং তার Egalitarian রাষ্ট্র বিপ্লব – সামাজিক-রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় কর্মকাণ্ড। Events starting from November 1929 to 8 May 1956 in the chronological order
(Part III) ডঃ বি. আর. আম্বেদকর এবং তার Egalitarian রাষ্ট্র বিপ্লব – বক্তব্যসমূহ. Events starting from 1 January to 20 November 1956 in the chronological order
ভলি. ১৮ (৩ খণ্ডে) ডঃ বি. আর. আম্বেদকরের রচনাবলী এবং বক্তব্যসমূহ (মারাঠী)
ভলি. ১৯ ডঃ বি. আর. আম্বেদকরের রচনাবলী এবং বক্তব্যসমূহ (মারাঠী)
ভলি. ২০ ডঃ বি. আর. আম্বেদকরের রচনাবলী এবং বক্তব্যসমূহ (মারাঠী)
ভলি. ২১ ডঃ বি. আর. আম্বেদকরের ছবিগুচ্ছ এবং চিঠি পত্র

মূল্যায়ন সম্পাদনা

একজন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারক হিসেবে আধুনিক ভারতে আম্বেদকরের প্রভাব লক্ষণীয় ছিলো। স্বাধীনতাত্তোর ভারতে তার সামাজিক রাজনৈতিক চিন্তাধারা সমগ্র রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সম্মান অর্জন করে। তার যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো অনেকের জীবনেই প্রভাব ফেলে এবং আজকের ভারতে দলিতদের আর্থসামাজিক অবস্থার উত্তরণে আইনি এবং অন্যান্য সাহায্য প্রদানে সাহায্য করে। তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ ভাবধারা তাকে স্বাধীন ভারতের প্রথম আইন-মন্ত্রী হতে ও সংবিধান খসড়া কমিটির সভাপতি হওয়ার পথে সহায়তা করে । তিনি একাগ্রভাবে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও ধর্মীয় কট্টরপন্থী সাম্প্রদায়িক তথাকথিত হিন্দু সমাজকে সমানভাবে সমালোচনা করেন। তার হিন্দু নিন্দা ও বর্ণ প্রথা তাকে বিতর্কিত করে তুলে, যদিও তার বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার বিষয়টি ভারতে বৌদ্ধ দর্শন ও বিদেশে পুনর্জাগরণের সৃস্টি করে।

আম্বেদকরের রাজনৈতিক মতাদের্শ দলিত রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, যার প্রচারণা এবং কর্মীরা, ভারতজুড়ে, বিশেষত মহারাষ্ট্রে সক্রিয় ছিল । তার অনুপ্রেরণায় দলিত বৌদ্ধ আন্দোলন ভারতের অনেকাংশে বৌদ্ধ দর্শনের পুনর্যৌবন লাভ করে। ১৯৫৬ সালের নাগপুরের অনুষ্ঠানের সাথে তাল মিলিয়ে দলিত কর্মীরা বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ ধর্মান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন।

কিছু পণ্ডিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত অন্ত্যজদের মতে, ব্রিটিশরা তাদের প্রতি নিরপেক্ষ ছিল, ব্রিটিশ নীতিমালা অব্যাহত থাকার দরুন অনেক কুসংস্কার দূর করা সম্ভব হয়েছিলো। এই ধরনের সহমত ব্যক্ত করেন জ্যোতিরাও ফুলে সহ অনেক সমাজকর্মী । বর্তমানে ভারতে আম্বেদকর কর্তৃক প্রদত্ত সংরক্ষিত প্রাতিষ্ঠানিক আসনগুলো ছিল সেকেলে ও অযাচিত। অবশ্য এই ধরনের বক্তব্যকে দলিত সংঘ দ্বারা সবসময় অস্বীকৃত হয়। তারা একে ভারতের হিন্দু সমাজ কর্তৃক অস্পৃশ্য ও দলিত বিরোধী বক্তব্য বলে মনে করেন।

১৯৯০ দশকের শেষ দিকে, হাঙ্গেরী-রোমানীরা তাদের নিজস্ব অবস্থার সাথে ভারতের দলিতদের অবস্থার তুলনা করে। আম্বেদকরের আদর্শে তারা বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলো।.[১৭]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে সম্পাদনা

 
১৯৯০ সালে প্রকাশিত আম্বেদকরের এক রুপির স্মারক মুদ্রা

আম্বেদকর নামটি উৎপীড়িত ও দীর্ঘমেয়াদী শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠে। “জয় ভীম” নামটি সমগ্র ভারতে বৌদ্ধদের কাছে প্রশংসিত হয়ে উঠে।[১৮] তার জীবনী ও দর্শনের উপর কতিপয় চলচ্চিত্র, নাটক এবং সাহিত্য বিষয়ক লেখা তৈরি হয়। ২০০০ সালে, জব্বার প্যাটেল পরিচালিত তার জীবনী নির্ভর ইংরেজি চলচ্চিত্র (পরে হিন্দি ও অন্য ভারতীয় ভাষায় অনূদিত) ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর[১৯] ভারতীয় নামের তারকা অভিনেতা মম্মত্ত এই চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি স্পন্সর করেন ইন্ডিয়াস ন্যাশনাল ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং মিনিষ্ট্রি অব সোস্যাল জ্যাস্টিস। ছবিটি বহু বিতর্কের অবতারণার মধ্য দিয়ে মুক্তিলাভ করে। আম্বেদকর চরিত্রের জন্য মম্মত্ত সেরা অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে লাভ করেন। ডেভিড ব্লান্ডেল, ইউসিএলএ নৃতত্ত্বের অধ্যাপক এবং মানবজাতিতত্ত্ববিদ এরাইজিং লাইট নামের একটি ধারাবাহিক ঘটনাবহুল চিত্র ভারতের সামাজিক সমৃদ্ধির জন্য নির্মাণ করেন। এরাইজিং লাইট হচ্ছে আম্বেদকরের জীবনী ও ভারতের উন্নতির উপর একটি চলচ্চিত্র। রাজেশ কুমার লিখিত এবং অরভিন্দ গর পরিচালিত নাটকআম্বেদকরগান্ধী” ইতিহাসের দুই ব্যক্তিত্ব মহাত্মা গান্ধী ও ভীমরাও আম্বেদকরকে তুলে ধরা হয়।[২০]
আম্বেদকর যখন ছোট ছিলেন, আম্বেদকরের বাবা রামজী চাইতেন যেন ভীমরাও যেন সংস্কৃত ভাষা শেখেন এবং সেই জন্য তাকে মুম্বাইয়ের এলিফিনস্টোন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। দলিত থাকায় তিনি তা পাঠে অস্বীকৃতি জানান। এটা জেনে পুনের ৮৪ বছর বয়স্ক বৈদিক পণ্ডিত প্রভাকর জোশি “ডঃ বি আর আম্বেদকর”এর উপর ২০০৪ সালে একটি জীবনী লেখেন। জোশি এর জন্য মহারাষ্ট্র সরকার কর্তৃক মহাকবি কালিদাস পুরস্কার লাভ করেন। কিছু শিক্ষক ছাত্র ভীমরাও-এর প্রতি যে অবিচার করেছিলেন গ্লুকোমার সাথে যুদ্ধ করতে করতে, তার প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ বয়বৃদ্ধ জোশি ১৫৭৭ শ্লোকের “ভীমায়ন” রচনা করেন।[২১]
লখনৌতে বিএসপি নেতা মায়াবতী ডঃ বি আর আম্বেদকর সামাজিক পরিবর্তন স্থল নির্মাণ করেন। আম্বেদকরের জীবনী ও উদ্ধৃতি দিয়ে চৈত্যটি নির্মাণ করা হয়। গ্রেট ব্রিটেন হোটেল (সরাইখানা), ৪৪৭ চার্চ স্ট্রিট, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়ার সামনে, ডঃ আম্বেদকরের প্রতিকৃতি শোভা পায়।[২২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Some Facts of Constituent Assembly"Parliament of India। National Informatics Centre। সংগ্রহের তারিখ 20011-04-14On 29 August, 1947, the Constituent Assembly set up a Drafting Committee under the Chairmanship of Dr. B.R. Ambedkar to prepare a Draft Constitution for India  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  2. Michael (1999), p. 65, notes that "The concept of Ambedkar as a Bodhisattva or enlightened being who brings liberation to all backward classes is widespread among Buddhists." He also notes how Ambedkar's pictures are enshrined side-to-side in Buddhist Vihars and households in Indian Buddhist homes.
  3. Frances Pritchett। "youth"। Columbia.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৭ 
  4. Jaffrelot, Christophe (২০০৫)। Ambedkar and Untouchability: Fighting the Indian Caste System। New York: Columbia University Press। পৃষ্ঠা 2আইএসবিএন 0-231-13602-1 
  5. Pritchett, Frances। "In the 1890s" (PHP)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-০২ 
  6. Frances Pritchett। "Waiting for a Visa, by Dr. B. R. Ambedkar"। Columbia.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৭ 
  7. "Bhim, Eklavya"। www.outlookindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৭ 
  8. Pritchett, Frances। "In the 1900s" (PHP)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-০২ 
  9. Pritchett, Frances। "In the 1930s" (PHP)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-০২ 
  10. Pritchett, Frances। "In the 1940s" (PHP)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-০২ 
  11. "Was Demonetisation Really Ambedkar's Idea?"The Wire। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১৭ 
  12. Ambedkar, Bhimrao Ramji (১৯৪৬)। "Chapter X: Social Stagnation"Pakistan or the Partition of India। Bombay: Thackers Publishers। পৃষ্ঠা 215–219। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০৮ 
  13. Pritchett, Frances। "In the 1950s" (PHP)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-০৮-০২ 
  14. "Online edition of Sunday Observer – Features"। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০১১ 
  15. B. R. Ambedkar (১৯৭৯), Dr. Babasaheb Ambedkar, writings and speeches, Bombay: Education Dept., Govt. of Maharashtra, ওএল 4080132M 
  16. "Riddle In Hinduism"। Ambedkar.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৭ 
  17. "Magazine / Land & People : Ambedkar in Hungary"। Chennai, India: The Hindu। ২০০৯-১১-২২। ২০১০-০৪-১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৭-১৭ 
  18. Jamnadas, K.। "Jai Bhim and Jai Hind" 
  19. ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে Dr. Babasaheb Ambedkar (ইংরেজি)
  20. P.ANIMA (২০০৯-০৭-১৭)। "A spirited adventure"। Chennai, India: The Hindu। ২০১১-০১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-১৪ 
  21. [১]
  22. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুন ২০১১ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা