ভি-স্যাট (VSAT= Very Small Aperture Service) হলো খুব ছোট আকারের সংযোগযন্ত্র যা দ্বিমুখী ভূ-উপগ্রহকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এর থালা আকৃতির অ্যান্টেনার ব্যাস ৩ মিটারের কম হয়, যেখানে অন্যান্য ধরনের উপগ্রহ কেন্দ্রের ব্যাস হয় প্রায় ১০ মিটারের মত। ভিস্যাট সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় বিক্রয়কেন্দ্রে ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত আদানপ্রদানের জন্য। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রতেই ১০০,০০০ এর-ও বেশি গ্যাস স্টেশন ভিস্যাট ব্যবহার করে।

২.৫ মিটারের স্যাটালাইট ডিশ অ্যান্টেনা

১৯৮৫ সালে শ্লুমবার্গার (Schlumberger) তৈল গবেষণা কেন্দ্র ও হিউস অ্যারোস্পেস (Hughes Aerospace) একসাথে পৃথিবীর প্রথম ভিস্যাট তৈরি করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তৈলকূপ ও খনন ক্ষেত্রগুলোতে মনুষ্যবহনযোগ্য যোগাযোগ যন্ত্র তৈরি করা। এখনও বিভিন্ন খনন কূপ থেকে তাৎক্ষনিক হিসাব নিকাশের জন্য তথ্য পাঠাতে ভিস্যাট ব্যবহৃত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় গাড়ি ব্যবসায়ীরা ক্রয-বিক্রয়ের হিসাব, অন্তর্যোগাযোগ, খুচরো যন্ত্রাংশের চাহিদা, সেবা তথ্য এবং দূর প্রশিক্ষনের জন্য গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে ভিস্যাট ব্যবহার করে। ফোর্ড ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ব্যবহৃত ফোর্ডস্টার নেটওয়ার্ক এমন একটি সংযোগের উদাহারন।

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র অবস্থিত ওয়াল-মার্টের দোকানগুলো থেকে ওয়াল-মার্টের ব্যবসায়িক প্রধান কেন্দ্রে পরিসংখ্যাপত্র (inventory) ও বিক্রয়ের হিসাব পাঠাতে ভি-স্যাট প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। ভি-স্যাট প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ডিরেক্টওয়ে (DirecWay) এবং স্টারব্যান্ড (StarBand), ইউরোপে Amariska, Bluestream এবং Technologie Satelitarne ইন্টারনেট সংযোগ সেবা দিয়ে থাকে। এই প্রযুক্তি পৃথিবীর সর্বত্র ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দিতে ব্যবহার হয়ে থাকে যেখানে এডিএসএল অথবা কেবল (Cable) সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়, বিশেষ করে দুর্গম ও গ্রাম এলাকায়।

বর্তমানে প্রায় সকল ভি-স্যাট ইন্টারনেট প্রটোকল (IP) ভিত্তিক এবং এর বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসের হিসাব অনুযায়ী ১০ লাখেরও বেশি ভিস্যাট কেন্দ্র রয়েছে যার মধ্যে প্রায় ৬৫০,০০০ সক্রিয় রয়েছে। বাৎসরিক ভিস্যাট সেবা কর হিসেবে ৩.৮৮ বিলিয়ন ডলার এবং টিডিএমএ (TDMA) ও ডিএএমএ (DAMA) যন্ত্র বিক্রয় থেকে আরও ৭৪৬.৯ মিলিয়ন ডলার অর্জিত হয়। (তথ্যসূত্র: www.comsys.co.uk).

ভি-স্যাট-এর গঠনপ্রকৃতি সম্পাদনা

অধিকাংশ ভি-স্যাট নেটওয়ার্ক নিম্নবর্ণিত যে কোনো একটি গঠন রীতি অনুযায়ী তৈরি হয়।

  • তারকা আকৃতি (star topology): একটি কেন্দ্রীয় আপলিঙ্ক সাইট যেমন নেটওয়র্ক অপারেশন সেন্টার (এনওসি) ব্যবহার করে উপগ্রহের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করা হয়।
  • চক্র আকৃতি (Mesh topology): প্রতিটি ভিস্যাট টার্মিনাল হাব হিসেবে কাজ করে এবং উপগ্রহের মাধ্যমে অন্যান্য টার্মিনালে তথ্য পাঠায়। এ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় আপলিঙ্ক সাইটের প্রয়োজনীয়তা কমে।
  • মিশ্র গঠনরীতি: তারকা ও চক্র আকৃতির সমন্বয়ে যে নেটওয়ার্ক গঠিত হয়। এ পদ্ধতিতে কয়েকটি কেন্দ্রীয় আপলিঙ্ক সাইট থাকে যার প্রতিটি থেকে ভিস্যাট টার্মিনাল বের হয়ে তারা আকৃতির নেটওয়ার্ক গঠন করে। প্রতিটি তারা এবং প্রতিটি তারার প্রতি প্রান্ত আবার চক্র আকারেও সংযুক্ত থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রে দেখা যায় একটি তারার প্রতিটি প্রান্ত একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং প্রতিটি প্রান্তই হাবের মত কাজ করে। নেটওয়ার্কের খরচ কমাতে এবং কেন্দ্রীয় আপলিঙ্ক সাইটের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদানের পরিমাণ কমাতে এরূপ বিভিন্ন গঠননীতি অবলম্বন করা হয়।

তারা আকৃতির নেটওয়ার্ক ব্রডব্যান্ড ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়।