বীরভূম জেলা

পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা

বীরভূম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি জেলা। জেলাটি বর্ধমান বিভাগের অন্তর্গত সর্ব উত্তরের জেলা৷ এই জেলার সদর দফতর সিউড়ি শহরে অবস্থিত। বোলপুর, রামপুরহাটসাঁইথিয়া এই জেলার অপর তিনটি প্রধান শহর।[১][২]

বীরভূম জেলা
পশ্চিমবঙ্গের জেলা
পশ্চিমবঙ্গে বীরভূমের অবস্থান
পশ্চিমবঙ্গে বীরভূমের অবস্থান
দেশভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
প্রশাসনিক বিভাগবর্ধমান বিভাগ
সদরদপ্তরসিউড়ি
সরকার
 • লোকসভা কেন্দ্রবীরভূম, বোলপুর
 • বিধানসভা আসনসাঁইথিয়া, সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট, নলহাটি, দুবরাজপুর, ময়ূরেশ্বর, মুরারই, লাভপুর, নানুর, হাঁসন
আয়তন
 • মোট৪,৫৪৫ বর্গকিমি (১,৭৫৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৩৫,০২,৪০৪
 • জনঘনত্ব৭৭০/বর্গকিমি (২,০০০/বর্গমাইল)
 • পৌর এলাকা৪,৪৯,৪৪৮
জনতাত্ত্বিক
 • সাক্ষরতা৭০.৬৮
 • লিঙ্গানুপাত৯৫৬
প্রধান মহাসড়কজাতীয় সড়ক ১৪, জাতীয় সড়ক ১১৪, জাতীয় সড়ক ১১৪এ
গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত১৪৩০.৫ মিমি
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট

বীরভূম জেলার পশ্চিমে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের জামতাড়া, দুমকাপাকুড় জেলা এবং অপর তিন দিকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমানপশ্চিম বর্ধমান জেলা অবস্থিত।

বীরভূমকে বলা হয় "রাঙামাটির দেশ"।[৩] এই জেলার ভূসংস্থান ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলার তুলনায় একটু আলাদা। জেলাটির পশ্চিমাঞ্চল ছোটোনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ একটি এলাকা। এই অঞ্চলটি পশ্চিমদিক থেকে ক্রমশ ঢালু হয়ে নেমে এসে মিশেছে পূর্বদিকের পলিগঠিত উর্বর কৃষিজমিতে।[৪]

ইতিহাসে বীরভূম জেলায় একাধিকবার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন হয়েছে। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এই জেলার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একটি প্রতিষ্ঠান।[৫] সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সুসমৃদ্ধ এই জেলায় একাধিক উৎসবমেলা অনুষ্ঠিত হয়। শান্তিনিকেতনের পৌষমেলাজয়দেব কেন্দুলির বাউল মেলা সেগুলির মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।[৬]

বীরভূমের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। এই জেলার মোট জনসংখ্যার ৭৫% কৃষিকার্যের উপর নির্ভরশীল।[৭] জেলার প্রধান কৃষিকাজ হল তুলা চাষ ও রেশম চাষ এবং শিল্পগুলি হল তাঁত বয়ন, চালকল, তৈলবীজের কল, লাক্ষা উৎপাদন, পাথর খনি, ধাতুশিল্প ও মৃৎশিল্প[৮] বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এই জেলার একমাত্র ভারী শিল্পকেন্দ্র।[৯]

নাম-ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

"বীরভূম" নামটির সম্ভাব্য উৎস "বীরভূমি" শব্দটি; যার অর্থ "বীরের দেশ"।[১০][১১] অন্য একটি মতে, বাগদী রাজা বীর মল্লের নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়েছে। বীর মল্ল ১৫০১ থেকে ১৫৫৪ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের শাসক ছিলেন।[১০][১১] অপর পক্ষে, সাঁওতালি ভাষায় বীর শব্দের অর্থ বন; অর্থাৎ, বীরভূম শব্দের অপর অর্থ বনভূমি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।[১০][১১]

ভূগোল সম্পাদনা

 
বীরভূম জেলার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক ও পৌরসভা অঞ্চলের মানচিত্র
 
বীরভূমের মামাভাগ্নে পাহাড়

২৩° ৩২' ৩০" ও ২৪° ৩৫' ০" উত্তর অক্ষাংশ (কর্কটক্রান্তি রেখার উপরে) এবং ৮৭° ৫' ৪৫" ও ৮৮° ১' ৪০" পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত বীরভূম জেলার মোট আয়তন ৪৫৪৫ বর্গকিলোমিটার। ত্রিকোণাকার এই জেলার নিম্নস্থ বাহুটি গঠন করেছে অজয় নদ এবং এর শীর্ষবিন্দু স্থাপিত হয়েছে উত্তরে। উক্ত নদ বর্ধমান ও বীরভূম জেলার সীমানাও নির্ধারণ করেছে। ঝাড়খণ্ড রাজ্য জেলার পশ্চিম ও উত্তর সীমান্ত বরাবর প্রসারিত। পূর্বদিকে অবস্থিত মুর্শিদাবাদপূর্ব বর্ধমান জেলার কিয়দংশ।[২][৮][১০] ভৌগোলিক বিচারে এই অঞ্চল ছোটোনাগপুর মালভূমির উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত; যার ঢাল পূর্বদিকে ক্রমশ নেমে এসে পললসমৃদ্ধ গাঙ্গেয় সমতলভূমিতে এসে মিশেছে। জেলাটির পশ্চিম দিকে প্রাকৃতিকভাবে পাথুরে গঠনে তৈরী হয়েছে একমাত্র পাহাড়, মামা ভাগ্নে পাহাড় যা দুবরাজপুর শহরের সন্নিকটে অবস্থিত। বর্তমানে এটি একটি সুপরিচিত পর্যটন স্থল। বীরভূম জেলার পশ্চিমাংশ অতীতে বজ্জভূমি বা বজ্রভূমি নামে পরিচিত ছিল।[৪][১২] এই অঞ্চলটি ছিল এক ঊষর তরঙ্গায়িত উচ্চভূমি। কিন্তু জেলার পূর্বাংশ অপেক্ষাকৃত উর্বরতর। রাঢ় অঞ্চলের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই অংশটিই গাঙ্গেয় সমভূমিতে বিলীন হয়েছে। রাঢ়ের একটি অংশও বজ্জভূমির অন্তর্গত ছিল; অবশিষ্ট রাঢ়কে বজ্জভূমি থেকে পৃথক করার উদ্দেশ্যে সুহ্ম নামে অভিহিত করা হত।[৪][১২]

জলবায়ু সম্পাদনা

জেলার পশ্চিমাংশের জলবায়ু শুষ্ক ও চরম প্রকৃতির; পূর্বাংশের জলবায়ু অবশ্য অপেক্ষাকৃত মৃদু। গ্রীষ্মে তাপমাত্রার পারদ ৪০º সেন্টিগ্রেড ছাড়িয়ে যায়; আবার শীতকালে ১০º সেন্টিগ্রেডের নিচে নেমে আসে।[৮] লক্ষ্য করা গেছে যে পশ্চিমাংশের বৃষ্টিপাত পূর্বাংশের তুলনায় অধিক। বর্ষাকালে (জুন-সেপ্টেম্বর) রাজনগর ও নানুরে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথাক্রমে ১৪০৫ মিলিমিটার ও ১২১২ মিলিমিটার।[৪][১০]

বীরভূম জেলার মাসিক বৃষ্টিপাতের তালিকা [১৩]

মাস স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের
পরিমাণ (মিমি)
জানুয়ারি ৯.৭
ফেব্রুয়ারি ২৩.২
মার্চ ২৩.৩
এপ্রিল ৪০.৭
মে ৮৮.৭
জুন ২৩৪.২
জুলাই ৩২৪.৫
আগস্ট ২৯৫.৭
সেপ্টেম্বর ২৫৮.২
অক্টোবর ১০৫.৪
নভেম্বর ১৭.৫
ডিসেম্বর ৯.৪
বার্ষিক ১৪৩০.৫

নদনদী সম্পাদনা

 
বীরভূম জেলার নদ-নদী ও শহরের মানচিত্র
 
বক্রেশ্বর নদ, বীরভূম

বীরভূম জেলায় অসংখ্য নদনদী প্রবাহিত হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অজয়, ময়ূরাক্ষী (মোর), কোপাই, বক্রেশ্বর, ব্রাহ্মণী, দ্বারকা, হিংলো, চপলা, বাঁশলৈ, পাগলা নদী ইত্যাদি।[২][৮] সিউড়ির নিকট ময়ূরাক্ষী নদীতে তিলপাড়া বাঁধ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ২৪২৮ বর্গকিলোমিটার অঞ্চলে জলসেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে।[১৪] জেলার প্রায় সমস্ত নদীই ছোটোনাগপুর মালভূমিতে উৎপন্ন ও পূর্ববাহিনী। বর্ষাকালে এইসব নদীতে জলস্ফীতি ভয়ংকর আকার নেয়; কিন্তু গ্রীষ্মের শুষ্ক মাসগুলিতে এরা সংকুচিত হয়ে যায়। খরা ও বন্যার চক্রাকার আবর্তন শুধুমাত্র জীবন ও সম্পত্তি হানির কারণই হয় না, বরং তা জেলাবাসীর জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ কষ্টের মধ্যে ঠেলে দেয়।[৪][৭]

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রাগৈতিহাসিক ও প্রাচীন যুগ সম্পাদনা

 
জয়দেব কেন্দুলিতে অবস্থিত টেরাকোটা মন্দিরে রামায়ণের যুদ্ধের বর্ণনা
 
রামকিঙ্কর বেইজ নির্মিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভাস্কর্য, আমার কুটির

বর্তমানে বীরভূম নামে পরিচিত অঞ্চলটি প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই জনবসতিপূর্ণ। আউসগ্রামের পাণ্ডু রাজার ঢিবি সম্পর্কিত কয়েকটি তাম্রপ্রস্তরযুগীয় প্রত্নস্থল এই জেলায় অবস্থিত।[১৫] জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রস্তরযুগের নানা নিদর্শনও পাওয়া গেছে।[১৬]

আচারাঙ্গ সূত্র নামক একটি প্রাচীন জৈন ধর্মগ্রন্থের বিবরণী অনুযায়ী, সর্বশেষ (২৪তম) তীর্থঙ্কর মহাবীর ভ্রমণ করতে করতে এই অঞ্চলে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। উক্ত গ্রন্থে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের এই অঞ্চল বজ্জভূমিসুব্বভূমি (সম্ভবত সুহ্ম) অঞ্চলে স্থিত লাঢ়ার পথহীন দেশ নামে চিহ্নিত হয়েছে।[২][১২][১৭] কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে রাঢ় অঞ্চলে বৌদ্ধজৈনধর্মের প্রচার ছিল এই অঞ্চলের আর্যীকরণের একটি অঙ্গ।[১৮] দিব্যাবদান নামক একটি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থের ভিত্তিতে ডক্টর অতুল সুর প্রমাণ করেন যে গৌতম বুদ্ধ এই অঞ্চলের উপর দিয়েই ভ্রমণ করে পুণ্ড্রবর্ধনসমতট অঞ্চলে যান।[১৯]

রাঢ় অঞ্চল কোনো এক সময় মৌর্য সাম্রাজ্যের অঙ্গীভূত হয়। পরবর্তীকালে এই অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্য, শশাঙ্কহর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যভুক্তও হয়েছিল। হর্ষবর্ধনের সাম্রাজ্যের পতনের পর খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত পাল রাজারা এই অঞ্চল শাসন করেন। তারপর এই অঞ্চলের শাসনভার সেন রাজাদের হস্তগত হয়।[২] পালযুগে বৌদ্ধধর্ম, বিশেষত মহাযান বৌদ্ধধর্ম, এই অঞ্চলে বিকশিত হয়ে উঠেছিল।[২০] খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে চীনা পর্যটক হিউয়েন সাং তাঁর ভ্রমণ-বিবরণীতে এই অঞ্চলে তাঁর দেখা কয়েকটি মঠের বর্ণনা দিয়েছেন।[১২][১৯]

মধ্যযুগ সম্পাদনা

 
সপ্তোদশ শতাব্দীতে বীরভূমে অঙ্কিত কৃষ্ণের মথুরা ভ্রমণের দৃশ্য

খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চলে মুসলমান শাসন স্থাপিত হয়। যদিও জেলার পশ্চিমাংশে এই শাসনের প্রভাব ছিল অল্প। এই অঞ্চল মূলত বীর রাজবংশ নামে পরিচিত স্থানীয় হিন্দু শাসনকর্তাদের দ্বারা শাসিত হত।[২] তাঁদের শাসনের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় হেতমপুর, বীরসিংপুর ও রাজনগর শহরে।.[২১] তবাকৎ-ই-নাসিরি গ্রন্থকার মিনহাজ-ই-সিরাজ লখনুরকে রাঢ়ের একটি থানাহ্ তথা মুসলমান শাসনের একটি শাখা ও একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তচৌকি বলে উল্লেখ করেন। লখনুরের সঠিক অবস্থান জানা না গেলেও মনে করা হয় এটি বর্তমান বীরভূম ভূখণ্ডেরই অন্তর্গত ছিল।[২][১২]

পৌরাণিক বিবরণ অনুযায়ী বজ্জভূমির (পশ্চিম বীরভূম) অরণ্যাঞ্চল হিন্দু ও তান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপের পীঠভূমি।[১৯][২২] ঐতিহাসিক ডক্টর অতুল সুরের মতে, বজ্জভূমির জনবসতিবিরল জঙ্গলগুলি নির্জনতার কারণেই ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান পালনের আদর্শ স্থানে পরিণত হয়।[১৯] কোনো কোনো গ্রন্থকার বীরভূমকে তান্ত্রিক পরিপ্রেক্ষিতে কামকোটী নামে অভিহিত করেছেন। বজ্রযান, শাক্ত ও বৌদ্ধ তান্ত্রিকরা তন্ত্রসাধনার উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলে বহু মন্দির নির্মাণ করেন। বীরভূমে অনেকগুলি শক্তিপীঠ অবস্থিত। এগুলি হল তারাপীঠ, বক্রেশ্বর, কঙ্কালীতলা, ফুল্লরা (লাভপুরের নিকট), সাঁইথিয়া ও নলহাটি। তারাপীঠের অন্যতম প্রসিদ্ধ শক্তিউপাসক ছিলেন বামদেব, যিনি বামাখ্যাপা নামে সমধিক পরিচিত।[২৩]

আধুনিক যুগ সম্পাদনা

 
১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে অঙ্কিত জঙ্গল তরাই জেলার মানচিত্র

১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে বীরভূম নামক প্রশাসনিক জেলাটির জন্ম হয়। তার আগে এটি মুর্শিদাবাদ জেলার অংশ ছিল। ১৭৮৭ সালে সদ্য প্রতিষ্ঠিত "District Beerbhoom" বা "ডিস্ট্রিক্ট বীরভূম" ছিল বর্তমান বীরভূমের তুলনায় আকারে অনেক বড়ো একটি জেলা। ১৭৯৩ সাল পর্যন্ত "Bishenpore" বা "বিষ্ণুপুর" (বর্তমানে বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া জেলা) এই জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের আগে পর্যন্ত সাঁওতাল পরগনাও এই জেলার অন্তর্গত ছিল। অর্থাৎ, সেই সময় পশ্চিমে এই জেলার বিস্তৃতি ছিল দেওঘর পর্যন্ত। ১৮৫৫-৫৬ সালে অবিভক্ত বীরভূমের পশ্চিমাঞ্চলে সংগঠিত সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণে এই আদিবাসী-অধ্যুষিত পশ্চিমাঞ্চলটিকে জেলা থেকে বাদ দেওয়ার আশু প্রয়োজন অনুভূত হয়। তাই বিদ্রোহ দমনের পর কর্তৃপক্ষ জেলাটিকেও ভাগ করে দেন। আজও বীরভূমে এই বিদ্রোহের দুই নায়ক সিধু ও কানুকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।[২][১২]

অর্থনীতি সম্পাদনা

 
বীরভূমের গ্রাম
 
আমার কুটিরে পণ্য প্রদর্শনী

বীরভূম মূলগতভাবে একটি কৃষিনির্ভর জেলা। এই জেলার অধিবাসীদের ৭৫ শতাংশই কৃষিকাজের সঙ্গে নিযুক্ত।[৭] বীরভূমের বনভূমির মোট আয়তন ১৫৯.৩ বর্গকিলোমিটার এবং ৩৩২৯.০৫ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত হয়।[৮] মোট জনসংখ্যার ৯১.০২ শতাংশ বাস করে গ্রামাঞ্চলে।[৭] মোট ৪,৫০,৩১৩ জন কৃষিজীবির (৩,২০,৬১০ হেক্টর ভূমির ধারক) মধ্যে ৩,৫৯,৪০৪ জন প্রান্তিক কৃষক (মোট ১,৪১,৮১৩ হেক্টর জমির ধারক), ৬৩,৩৭৪ জন ক্ষুদ্র কৃষক (মোট ৯৫,১৪৪ হেক্টর জমির ধারক), ২৬,২৩৬ জন অর্ধ মধ্যবর্তী কৃষক (মোট ৭৬,৯৯৮ হেক্টর জমির ধারক), ১,২৯০ জন মধ্যম কৃষক (মোট ৬,২১৫ হেক্টর জমির ধারক) এবং ৯ জন বৃহৎ কৃষক (মোট ৪৪০ হেক্টর জমির ধারক)৷ গড়ে কৃষক প্রতি ভূমির পরিমাণ ০.৭১ হেক্টর৷ কৃষিজাত পণ্যের ওপর ভিত্তি করে বীরভূম জেলায় ৬,০৭,১৭২জন শ্রমজীবী হিসাবে নিযুক্ত৷[১৩] জেলায় উৎপন্ন খাদ্যফসলগুলির মধ্যে চাল, শুঁটি, গম, ভুট্টা, আলু ও আখ উল্লেখযোগ্য।[৭] জেলায় তেরোটি হিমঘর আছে।[৮] ২০০১-০২ সালের হিসেব অনুযায়ী বীরভূমের মোট সেচসেবিত অঞ্চল ২৭৬৩.৯ বর্গকিলোমিটার।[৭] সেচ পরিষেবা সুনিশ্চিত করার জন্য সমগ্র জেলায় পাঁচটি বাঁধ গড়ে তোলা হয়েছে। ময়ূরাক্ষী নদীর উপর ম্যাসাঞ্জোরের কানাডা বাঁধ বীরভূম-ঝাড়খণ্ড সীমানার খুব কাছে ঝাড়খণ্ডের দুমকা জেলায় অবস্থিত। ময়ূরাক্ষীর ভাটিতে তিলপাড়া বাঁধটি জেলাসদর সিউড়ির কাছে অবস্থিত।[৭]

বীরভূম কুটিরশিল্পের একটি বিশিষ্ট কেন্দ্র। সম্ভবত জেলার সর্বাধিক খ্যাতনামা কুটিরশিল্পকেন্দ্রটি হল আমার কুটির নামক এক অলাভজনক গ্রামীণ সংস্থা। বীরভূমের অন্যতম প্রধান শিল্পগুলি হল কৃষিভিত্তিক শিল্পসমূহ, বস্ত্রবয়ন, কাষ্ঠশিল্প ও চারুশিল্পকলা। শ্রীনিকেতন তার দুগ্ধ ও কাষ্ঠশিল্পের জন্য বিখ্যাত। বস্ত্রবয়ন শিল্প বীরভূমের একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্প। বিশেষত সূতি, স্থানীয় কৃষিজ তসর সিল্ক, পাটের কাজ, বাটিক, কাঁথাস্টিচ, ম্যাকরেম (গিঁটযুক্ত সুতোর কাজ), চামড়া, মৃৎশিল্প ও টেরাকোটা, শোলাশিল্প, কাঠখোদাই, বাঁশশিল্প, ধাতুশিল্প ও বিভিন্ন আদিবাসী শিল্পকলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।[৮] জেলায় মোট ৮,৮৮৩ টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। প্রধান প্রধান শিল্পগুলি হল সূতি ও রেশমচাষ ও বয়নশিল্প, চাল ও তৈলবীজ মিল, লাক্ষাচাষ, ধাতু ও মৃৎশিল্প।[৮] বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (২১০ মেগাওয়াট x ৩ + নির্মীয়মান ২১০ মেগাওয়াট X ২) জেলার একমাত্র বৃহৎ শিল্প।[৯]

সাঁইথিয়া বীরভূম জেলার ব্যবসায়িক দপ্তর এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর৷ কুটির শিল্পের কাঁচামাল ক্রয়-বিক্রয় ও শিল্পজাত দ্রব্যের বিক্রয়ের একটি বড় কেন্দ্র এই সাঁইথিয়া৷ বিপুল পরিমাণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এই শহরে, কৃষিজাত পণ্যের ওপর ভিত্তি করেই এই শহরে অর্থনীতি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ [২৪]

২০০৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের গ্রামীণ বিকাশ এবং পঞ্চায়েত রাজ মন্ত্রণালয় বীরভূম জেলাটিকে ভারতের তৎকালীন ৬৪০ টি জেলার মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া আড়াইশো টি জেলার তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছে। [২৫] এরকম পিছিয়ে পড়া জেলার তকমা প্রাপ্ত পশ্চিমবঙ্গের এগারো জেলার মধ্যে বীরভূম একটি। জেলাটি ব্যাকওয়ার্ড রিজিওন গ্রান্ট ফান্ড বা বিআরজিএফ এর আওতাভুক্ত।[২৫]

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিভাগ সম্পাদনা

 
বীরভূম জেলার মহকুমা

বীরভূম জেলা তিনটি মহকুমায় বিভক্ত: সিউড়ি সদর, বোলপুররামপুরহাট[১] সিউড়ি বীরভূমের জেলাসদর। জেলায় ২ টি মহিলা থানা ও একটি সাইবার থানা সহ মোট ২৭ টি থানা, ১৯টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, ৬টি পুরসভা ও ১৬৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে।[১][২৬] পৌরসভা এলাকা ছাড়াও প্রত্যেকটি মহকুমা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে বিভক্ত; যেগুলি আবার গ্রামীণ অঞ্চল ও সেন্সাস টাউনে বিভক্ত। সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলে সাতটি নগরাঞ্চল দেখা যায়: ছয়টিপৌরসভা ও একটি সেন্সাস টাউন[২৬][২৭] ২০০০ সালে পৌরসভার মর্যাদা পাওয়া নলহাটি এই জেলার সাম্প্রতিকতম শহর।[২৮]

২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত বীরভূম জেলা ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিভক্ত ছিল।:[২৯] নানুর (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৩), বোলপুর (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৪), লাভপুর (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৫), দুবরাজপুর (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৬), রাজনগর (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৭), সিউড়ি (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৮), মহম্মদবাজার (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৯), ময়ূরেশ্বর (বিধানসভা কেন্দ্র #২৯০), রামপুরহাট (বিধানসভা কেন্দ্র #২৯১), হাঁসন (বিধানসভা কেন্দ্র #২৯২), নলহাটি (বিধানসভা কেন্দ্র #২৯৩) ও মুরারই (বিধানসভা কেন্দ্র #২৯৪)। নানুর, রাজনগর, ময়ূরেশ্বর ও হাঁসন কেন্দ্রগুলি তফসিলি জাতির প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত।[২৯] উক্ত নির্বাচনটি পশ্চিমবঙ্গে সংসদীয় ক্ষেত্রগুলির সীমানা পুনর্নিধারণের আগে অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ও তার পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলির ক্ষেত্রে সীমানা নির্ধারণ কমিশনের সিদ্ধান্ত বলবৎ হয়েছিল।[৩০]ভারতের সাধারণ নির্বাচন, ২০০৯ নবগঠিত সংসদীয় ক্ষেত্রগুলির ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়। নবগঠিত বিধানসভা কেন্দ্রগুলির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালে।

সীমানা নির্ধারণ কমিটির সুপারিশ অনুসারে এই জেলাকে বর্তমানে ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিভক্ত করা হয়েছে:[৩১] দুবরাজপুর (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৪), সিউড়ি (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৫), বোলপুর (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৬), নানুর (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৭), লাভপুর (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৮), সাঁইথিয়া (বিধানসভা কেন্দ্র #২৮৯), ময়ূরেশ্বর (বিধানসভা কেন্দ্র #২৯০), রামপুরহাট (বিধানসভা কেন্দ্র #২৯১), হাঁসন (বিধানসভা কেন্দ্র #২৯২), নলহাটি (বিধানসভা কেন্দ্র #২৯৩) ও মুরারই (বিধানসভা কেন্দ্র #২৯৪)। দুবরাজপুর, নানুর ও সাঁইথিয়া তফসিলি জাতি প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত।[৩১] পূর্বতন রাজনগর বিধানসভা কেন্দ্রটি বিলুপ্ত হয়েছে।

দুবরাজপুর, সিউড়ি, সাঁইথিয়া, রামপুরহাট, হাঁসন, নলহাটি ও মুরারই বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের অংশ।[৩১] বিশিষ্ট চলচ্চিত্রাভিনেত্রী শতাব্দী রায় ২০০৯ সালে এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভারতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে বোলপুর, ময়ূরেশ্বর, লাভপুর ও সাঁইথিয়া বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। বর্ধমান জেলার তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রও এই সংসদীয় কেন্দ্রের অন্তর্গত।[৩১] লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের দীর্ঘকালের সাংসদ ছিলেন।

পরিবহন সম্পাদনা

পানাগড়—মোরগ্রাম সড়ক এই জেলার উপর দিয়ে প্রসারিত। সকল গ্রাম ও শহর সড়কপথের দ্বারা সংযুক্ত। জেলার মোট পাকা সড়কপথের দৈর্ঘ্য ২৪১৩ কিলোমিটার ও কাঁচা রাস্তার দৈর্ঘ্য ৪৬৭৪ কিলোমিটার। এর বিপরীতে জেলার মোট রেলপথের দৈর্ঘ্য ২০১.৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে রয়েছে ২৬.৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ আহমেদপুর-কাটোয়া ন্যারো (অধুনা ব্রড গেজ)গেজ ট্র্যাক, যার সূচনা ঘটে ১৯১৭ সালে।[৮] ১৮৬০ সালে স্থাপিত পূর্ব রেলের হাওড়া-সাহিবগঞ্জ লুপ লাইনটিও এই জেলার উপর দিয়ে প্রসারিত। নলহাটি জংশনের মাধ্যমে মুর্শিদাবাদ জেলার জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করা হয়। অন্ডাল-সাঁইথিয়া লাইনটি অন্ডালে হাওড়া-দিল্লি মেন লাইনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।[৮]

 
রাধাবিনোদ মন্দির, জয়দেব কেন্দুলি, বীরভূম

জনপরিসংখ্যান সম্পাদনা

ঐতিহাসিক জনসংখ্যা
বছরজন.ব.প্র. ±%
১৯০১৯,০২,২৮০—    
১৯১১৯,৪০,১৬২+০.৪১%
১৯২১৮,৫১,৭২৫−০.৯৮%
১৯৩১৯,৪৭,৫৫৪+১.০৭%
১৯৪১১০,৪৮,৩১৭+১.০২%
১৯৫১১০,৬৬,৮৮৯+০.১৮%
১৯৬১১৪,৪৬,১৫৮+৩.০৯%
১৯৭১১৭,৭৫,৯০৯+২.০৮%
১৯৮১২০,৯৫,৮২৯+১.৬৭%
১৯৯১২৫,৫৫,৬৬৪+২%
২০০১৩০,১৫,৪২২+১.৬৭%
২০১১৩৫,০২,৪০৪+১.৫১%
উৎস:[৩২]

১৯০১ সালে বীরভূমের জনসংখ্যা ছিল ৯০২,২৮০। ১৯৮১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২,০৯৫,৮২৯। ২০০১ সালের জনগণনা তথ্য অনুসারে এই জনসংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,০১৫,৪২২। নিম্নোল্লিখিত সারণিতে জেলার জনপরিসংখ্যান সংক্রান্ত তথ্য প্রদত্ত হল:[৩৩]

গ্রাম/শহর জনসংখ্যা পুরুষ মহিলা
মোট ৩,০১৫,৪২২ ১,৫৪৬,৬৩৩ ১,৪৬৮,৭৮৯
গ্রাম ২,৭৫৭,০০২ ১,৪১৪,০৯৭ ১,৩৪২,৯০৫
শহর ২৫৮,৪২০ ১৩২,৫৩৬ ১২৫,৮৮৪

২০০১ সালের জনগণনা তথ্য অনুসারে জেলার মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ হিন্দু। অবশিষ্ট (৩৩.০৬ শতাংশ) মূলত মুসলমান।.[৩৪] অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা জনসংখ্যার মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। ২০০১ সালের জনগণনা তথ্য অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার ২৯.৫ শতাংশ তফসিলি জাতি ও ৬.৭ শতাংশ তফসিলি উপজাতি।[৩৫]

২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনগণনা অনুসারে জেলাটির ৬২ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং ৩৭ শতাংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ বাস করেন৷ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় জেলার জনসংখ্যার ১ শতাংশ৷ [৩৬]

২০১১ খ্রিস্টাব্দ অনুসারে বীরভূম জেলার বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী [৩৬]
ধর্ম শতাংশ
হিন্দু
  
৬২.৩%
মুসলিম
  
৩৭.১%
অন্যান্য
  
০.৬%

২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনগণনা অনুসারে বীরভূম জেলার মোট জনসংখ্যা ৩৫,০২,৩৮৭ জন,[৩৭] যা লিথুয়ানিয়া রাষ্ট্রের [৩৮] বা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট রাজ্যের জনসংখ্যার সমতুল্য৷[৩৯] ঐ বছর জনসংখ্যার বিচারে ভারতের ৬৪০ টি জেলার মধ্যে বীরভূম জেলা ৮৪তম স্থান অধিকার করেছে৷ [৩৭] জেলাটির জনঘনত্ব ৭৭১ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (২,০০০ জন/বর্গমাইল)৷[৩৭] ২০০১ থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দ অবধি এই জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো ১৬.১৫ শতাংশ৷[৩৭] বীরভূম জেলার প্রতি হাজার পুরুষে ৯৫৬ জন নারী বাস করেন৷[৩৭] জেলাটির সর্বমোট সাক্ষরতার হার ৭০.৯০ শতাংশ৷[৩৭]

ভাষা সম্পাদনা

বাংলা এই জেলার সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা৷ বাঙালিরা ছাড়াও সাঁওতাল ও আরও দশটি উপজাতি এই জেলায় বাস করে। এদের মধ্যে কোড়া, মহালি ও ওঁরাও উল্লেখযোগ্য। এখানকার বাঙালিরা বাংলার স্থানীয় উপভাষায় কথা বলেন।[৪০]

বীরভূম জেলার ভাষাসমূহ ২০১১ [৪১].[৪২]

  বাংলা (৯২.৩৮%)
  সাঁওতালি (৬.০১%)
  হিন্দি (০.৯৫%)
  অন্যান্য (০.৬৬%)

সংস্কৃতি সম্পাদনা

বীরভূমের বাউলদের দর্শন ও সঙ্গীত জেলার লোকসংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও বীরভূমে অনেক কবিয়াল, কীর্তনীয়া ও অন্যান্য লোকসংস্কৃতি গোষ্ঠীর বসবাস।[৬][৪৩]

বীরভূমে অসংখ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ শান্তিনিকেতনের পৌষমেলাপৌষ মাসে আরম্ভ হয়ে এই মেলাগুলি মকর সংক্রান্তি পর্যন্ত চলে। জয়দেব কেন্দুলির মেলা অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে পালিত হয়।[৬] এই মরশুমে বিভিন্ন উৎসবও পালিত হয়।[৪৪] বীরভূমের মানুষ যাত্রা, কবিগানআলকাপের মতো লোকবিনোদন অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।[৪৫]

 
শান্তিনিকেতনে বাউলের দল

বীরভূমে অনেক কবির জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জয়দেব, চণ্ডীদাসজ্ঞানদাস[৪৫] বৈষ্ণব, শাক্তশৈবধর্মের ত্রিবেণীসংগম বীরভূমের গ্রামগুলিতে নানান গ্রামদেবতা পূজার প্রাগৈতিহাসিক প্রথা আজও বিদ্যমান।[২২][৪৬]

 
রবীন্দ্রনাথ ও সস্ত্রীক মহাত্মা গান্ধী - শান্তিনিকেতন আম্রকুঞ্জে

বীরভূমের প্রধান দ্রষ্টব্যস্থলগুলির মধ্যে অন্যতম বক্রেশ্বর, তারাপীঠপাথরচাপড়ি। জয়দেব কেন্দুলি, সুরুল ও নানুরের পুরনো মন্দিরগুলি তাদের টেরাকোটা (পোড়ামাটি) ভাস্কর্যের জন্য বিখ্যাত।[৪৭]

 
তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৈতৃক কাছারী, লাভপুর

ব্যক্তিত্ব সম্পাদনা

বীরভূমে, বিশেষত শান্তিনিকেতনে অনেক বিশিষ্ট মানুষ জন্মগ্রহণ অথবা কর্মজীবন অতিবাহিত করেছেন।[৪৮] নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাদের মধ্যে অন্যতম।[৪৮] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই জেলাকে তার বাসস্থানে পরিণত করেন। এখানেই তিনি তার প্রসিদ্ধ শিক্ষাকেন্দ্র বিশ্বভারতীর স্থাপনা করেন। অজয় নদের তীরে জয়দেব কেন্দুলিতে দ্বাদশ শতাব্দীর বিশিষ্ট সংস্কৃত কবি জয়দেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[৪৯]

নানুরে জন্মগ্রহণ করেন চতুর্দশ শতাব্দীর বিশিষ্ট কবি পদাবলিকার চণ্ডীদাস[৫০] বৈষ্ণবধর্মের প্রতিষ্ঠাতা চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রধান পার্ষদ নিত্যানন্দ স্বামী (বিখ্যাত গৌর-নিতাই যুগলের নিতাই) জন্মগ্রহণ করেন এই জেলার একচক্রা গ্রামে।[৫১] আধুনিক বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৯৮ – ১৯৭১) এই জেলার লাভপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার রচনায় বীরভূমের গণজীবনের অনেক চিত্র পাওয়া যায়।[৪৮] চৈতন্য গবেষক জয়দেব মুখোপাধ্যায় বীরভূম জেলার বোলপুরে জন্মগ্রহন করেন। বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং পাকিস্তানের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আবদুস সাত্তার ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে এই বীরভূম জেলাতেই জন্মগ্রহণ করেন৷ [৫২]বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক তথা পাকিস্তান একাডেমী অব সায়েন্সেস-এর এককালীন অধ্যক্ষ মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে বীরভূম জেলাতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷[৫৩]

উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পাদনা

বীরভূম জেলার পূর্বাংশ পশ্চিমবঙ্গের ধান-উৎপাদক অঞ্চলের অন্তর্গত। তাই এই অঞ্চলের উদ্ভিদপ্রকৃতি বাংলার ধান-উৎপাদক অঞ্চলের উদ্ভিদপ্রকৃতির মতোই। অ্যাপোনোগেটন, আল্ট্রিকুলেরিয়া, ড্রসেরা, ফিলকক্সিয়া, স্ক্রোফালারিয়াসি বা সমজাতীয় জলজ অথবা পালাস্ট্রিন প্রজাতির উদ্ভিজ্জ এখানে চোখে পড়ে।[১০][৫৪] পশ্চিমের শুষ্ক অংশে দেখা যায় ওয়েন্ডল্যান্ডিয়া, কনভলভেলাসি, স্ট্রিপা, ট্র্যাগাস, স্পেরম্যাকোসি, জিজিফাস, ক্যাপারিস এবং ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় জাত অন্যান্য উদ্ভিজ্জ।[৫৪] আম, তাল ও বাঁশ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।[৫৪] অন্যান্য গাছের মধ্যে কাঁঠাল, অর্জুন, শাল, পেয়ারা, কেন্দ ও মহুয়া গাছ চোখে পড়ে।[৫৪]

বুনো কুকুর ও গৃহপালিত পশু ছাড়া যে স্তন্যপায়ীর দেখা সবচেয়ে বেশি মেলে সেটি হল হনুমান। চিনপাই, বান্দারসোল ও চারিচার বনাঞ্চলে বুনো শুয়োর ও নেকড়ের দেখাও মেলে।[৫৪] তবে এই অঞ্চলে আর কোথাও চিতাবাঘ বা ভাল্লুকের দেখা মেলে না।[৫৪] মহুয়া গাছে ফুল ফোটার মরশুমে ঝাড়খণ্ড থেকে হাতির পাল নেমে এসে শস্য নষ্ট করে এবং জীবন ও সম্পত্তিহানির কারণ হয়ে ওঠে।[৫৪] বীরভূমে পার্বত্য ও সমতলীয় উভয়প্রকার পাখিই দেখা যায়: তিতির, পায়রা, সবুজ পায়রা, জলকুক্কুট, দোয়েল, ফিঙে, বাজ, কোকিল, তোতা ইত্যাদি এবং নানা পরিযায়ী পাখি দেখা যায়।[৫৪]

১৯৭৭ সালে শান্তিনিকতনের নিকটস্থ বল্লভপুর বনাঞ্চল একটি অভয়ারণ্য হিসাবে ঘোষিত হয়।[৫৫] এই বনাঞ্চলে অনেক অর্থকরী গাছ রোপণ করা হয়েছে এবং কৃষ্ণমৃগ, চিতল হরিণ, শিয়াল, খ্যাঁকশিয়াল ও নানা ধরনের জলচর পাখি বাস করে।[৫৫][৫৬]

শিক্ষাব্যবস্থা ও সাক্ষরতার হার সম্পাদনা

বীরভূম জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান:[৮]
মাধ্যমিক বিদ্যালয়–২৫৬
উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়–১১০
নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়–৯৫
জুনিয়র হাই মাদ্রাসা–১০
সিনিয়র মাদ্রাসা–৪
প্রাথমিক বিদ্যালয়–২৩৭
শিশুশিক্ষা কেন্দ্র–৪৯৫
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র–২৪০৭
কলেজ–১২
বিশ্ববিদ্যালয়–১
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ–২
পলিটেকনিক–১
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (আইটিআই)–১

১৯৫১ সালে স্বাধীন ভারতের প্রথম জনগণনা অনুযায়ী, বীরভূম জেলার সাক্ষরতার হার ছিল ১৭.৭৪%। ১৯৯১ সালে এই হার বেড়ে হয় ৪৮.৫৬%।[৫৭] ২০১১ সালের সর্বশেষ জনগণনা অনুযায়ী, বীরভূম জেলার সাক্ষরতার হার ৭০.৯%।[৩৭]

বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে নিরক্ষরতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। মনে করা হয়েছিল, ২০১০ সালের মধ্যে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী সকল ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে প্রেরণ করার জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য যাবতীয় চেষ্টাও করা হয়েছে।[৫৭]

জেলায় সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ১২৭টি গ্রন্থাগার, একটি বেসরকারি গ্রন্থাগার ও একটি জেলা গ্রন্থাগার রয়েছে।[৮]

খেলাধুলা সম্পাদনা

ঘরের বাইরের খেলাগুলির মধ্যে ডাংগুলি খেলা বীরভূমের সাধারণ মানুষের মধ্যে এক সময় খুব জনপ্রিয় ছিল।[৪৪] ঘরের বাইরে এবং ঘরের ভেতরে উভয় ক্ষেত্রেই বীরভূমের শিশু-কিশোরদের মধ্যে মার্বেল খেলা যথেষ্ট পরিমাণে লক্ষ্যনীয়৷ এই খেলায় একটি মারক গুলিকে আঙ্গুলের সাহায্যের সবুজ বা কালচে রঙের লক্ষ্য মার্বেলের ওর নিশানা লাগাতে হয়৷ কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ক্রিকেট এই দুই খেলার জনপ্রিয়তা অনেক কমিয়ে দিয়েছে৷

এছাড়া ক্রিকেটের সাথে সাথে ফুটবল, কাবাডিভলিবলও এই জেলায় খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।[৪৪]

জেলাটিতে পঞ্চাশ বছর আগে পর্যন্ত ডাংগুলি ও মার্বেল খেলা প্রায়শই দেখা যেত৷ বীরভূমের সর্বত্রই ঘরের বাইরের খেলাগুলির মধ্যে বর্তমানে ক্রিকেট ও ফুটবল সবচেয়ে বেশি দেখা যায়৷ জেলাসদর সিউড়ীতে একটি টেনিস কোর্টও রয়েছে, এখানে টেনিস প্রশিক্ষণ চলে৷ এছাড়া ঘুড়ি ওড়ানো, সাঁতার, ক্যারাটে প্রভৃতিও প্রচলিত৷

প্রসিদ্ধ ব্যাক্তিত্ব সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "পশ্চিমবঙ্গের জেলা, মহকুমা, পঞ্চায়েত সমিতি/ ব্লক ও গ্রাম পঞ্চায়েত নির্দেশিকা, মার্চ ২০০৮"পশ্চিমবঙ্গ। জাতীয় তথ্য কেন্দ্র, ভারত। ১৯ মার্চ ২০০৮। পৃষ্ঠা ১। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  2. "বীরভূম জেলা"। বীরভূম জেলা প্রশাসন। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ 
  3. Rahim, Kazi MB, and Sarkar, Debasish, Agriculture, Technology, Products and Markets of Birbhum District, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, pp. 157–166, Information and Cultural Department, Government of West Bengal
  4. Mukhopadhyay, Malay, Birbhum Jelar Bhougolik Parichiti, Paschim Banga, Birbhum Special issue (in Bengali), February 2006, pp. 29–32
  5. Halim, Abdul, Birbhumer Sech Byabastha O Samaj Unnayan Parikalpana Samparke, Paschim Banga, Birbhum Special issue (in Bengali), February 2006, pp. 149–155
  6. Mukhopadhyay, Aditya, Birbhumer Mela, Paschim Banga, Birbhum Special issue (in Bengali), February 2006, pp. 203–214
  7. Choudhuri, Tapan, Unnayaner Aloke Birbhum, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, pp. 59–74
  8. Mondal, Dipanwita, Ek Najare Birbhum Jela, Paschim Banga, Birbhum Special issue (in Bengali),February 2006, pp. 7–10
  9. Pramanik, Swarajit, Birbumer Ahankar: Bakreshwar Tapbidyut Kendra, Paschim Banga, Birbhum Special issue (in Bengali), February 2006, pp. 189–192
  10. O'Malley, L.S.S., "Bengal District Gazetteers - Birbhum", 1996 reprint, pp. 1-9, Govt. of West Bengal
  11. Maiti, Prakash Chandra, Birbhum in the Backdrop of Pre-history, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, pp. 15–28
  12. O'Malley, pp. 10-31,
  13. "Archived copy"। ৯ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৬ 
  14. Selim, Mohammad, Irrigation Projects in Birbhum District,Paschim Banga, February 2006, (in Bengali), Birbhum special issue, pp. 168–169
  15. Amalananda Ghosh (১৯৯০)। An Encyclopaedia of Indian Archaeology: Volume 1: Subjects. Volume 2: A Gazetteer of Explored and Excavated Sites in India। BRILL। পৃষ্ঠা 237। আইএসবিএন 9004092641 
  16. "Prehistoric tools unearthed in Bengal"। Stone Pages Archaeo News। ২০০৫-১২-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-০৪ 
  17. Ray, Nihar Ranajan, Bangalir Itihas - Adi parva, (Bengali), p. 152, Paschim Banga Nirakharata Durikaran Samiti
  18. Ray, Nihar Ranajan, p.283
  19. Bangla O Bangalir Bibartan, (An Ethno-Cultural History of Bengal) by Dr. Atul Sur, (Published by Sahityalok, Kolkata, 1986, 1994)
  20. Ghosh, Binoy, Paschim Banger Sanskriti, 1976 edition, Vol I, p. 287, Prakash Bhawan
  21. Gupta, Dr. Ranjan Kumar, The Economic Life of a Bengal District: Birbhum 1770 – 1857, pp. 2 – 9, The University of Burdwan, 1984.
  22. Mitra, Amalendu, Dr., Rarher Sanskriti O Dharma Thakur, (Bengali), pp. 90-96, Subarnarekha
  23. "Temples in Birbhum"P.C.Roy Choudhuri। Hindu Books Universe। ২০০৯-০৩-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-১৮ 
  24. http://birbhum.gov.in/munis/SNTMuni/profile.htm
  25. Ministry of Panchayati Raj (৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। "A Note on the Backward Regions Grant Fund Programme" (পিডিএফ)। National Institute of Rural Development। ৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  26. "Important Telephone Numbers"। Official website of Birbhum district। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০৫ 
  27. "Population, Decadal Growth Rate, Density and General Sex Ratio by Residence and Sex, West Bengal/ District/ Sub District, 1991 and 2001"West Bengal। Directorate of census operations। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০৫ 
  28. "Category, Year of Establishment, Area, SC, ST and total population in ULBs in West Bengal" (PDF)। Department of Municipal affairs, Government of West Bengal। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  29. "General election to the Legislative Assembly, 2001 – List of Parliamentary and Assembly Constituencies" (পিডিএফ)West Bengal। Election Commission of India। ২০০৬-০৫-০৪ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-১৬ 
  30. "Press Note - Schedule for General Elections, 2009"। Press Information Burueau, Government of India। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-১১ 
  31. "Press Note, Delimitation Commission" (PDF)Assembly Constituencies in West Bengal। Delimitation Commission। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-১৬ 
  32. Decadal Variation In Population Since 1901
  33. "Census of India 2001"Provisional population totals, West Bengal, Table 4। Census Commission of India। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-২১ 
  34. Islam, Sheikh, Birbhumer Karmasansthane Matsya, Pranisampad Ebong Paschim Banga Sankhyalaghu Unnayan O Bityanigam, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, p. 178
  35. "Himan Development Report - Birrbhum" (পিডিএফ)Religious and Caste Composition। ২০১০-০৮-০৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-০৭ 
  36. "C-1 Population By Religious Community"। Census। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৯ 
  37. "District Census 2011"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  38. US Directorate of Intelligence। "Country Comparison:Population"। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১১Lithuania 3,535,547 July 2011 est. 
  39. "2010 Resident Population Data"। U.S. Census Bureau। ১ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১১Connecticut 3,574,097 
  40. Choudhuri, Arun, Birbhumer Adivasi Samaj O Janagosthi, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, pp. 117–122
  41. http://www.censusindia.gov.in/2011census/C-16.html
  42. "DISTRIBUTION OF THE 22 SCHEDULED LANGUAGES-INDIA/STATES/UNION TERRITORIES - 2011 CENSUS" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৬ 
  43. Kundu, Chnadan, Birbhumer Baul: Swatantrer Sandhane, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, pp. 215–224
  44. Sen, Suchbrata, Birbhumer Otit O Bartaman Samajchitra, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, pp. 107–116
  45. Das, Prabhat Kumar, Birbhumer Kirtan O Jatragan, Paschim Banga, Birbhum Special issue (in Bengali), February 2006, pp. 311–319
  46. Mitra, Ajit Kumar, Birbhumer loukik Debdebi, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, pp. 321–334
  47. Sarkar, Joydeep, Paryatan Boichitre Birbhum Jela, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, pp. 197–202
  48. Ghosal, Amartya, Birbhumer Bisisto Byakti O Monishi, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, pp. 321–334
  49. O'Malley, p.131
  50. O'Malley, p. 137
  51. O'Malley, p.128
  52. "President Abdus Sattar"Bangabhaban। Government of Bangladesh। ৩ জানুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৪ 
  53. "স্ম র ণ : বিজ্ঞানী মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা"। নয়া দিগন্ত। ৩ নভেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  54. "About Birbhum: Geography"। Official website of Birbhum। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-০২ 
  55. Chhanda Das (২০০৭)। A Treatise on Wildlife Conservation in India। Daya Books। পৃষ্ঠা p.115। আইএসবিএন 8187616229। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-১৫ 
  56. "Santiniketan"। National Informatics Centre, Government of India। ২০০৯-০২-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-১৫ 
  57. Roy, Bikash, Siksha Prasare Birbhum Jela, Paschim Banga, Birbhum Special Issue, pp. 81–91

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা