বিহু ভারতের অসম রাজ্যের একটি লোকনৃত্য। অসমীয়া বিহু লোকসঙ্গীতের সুরে এই নৃত্যানুষ্ঠান হয়।

বিহু নৃত্য
'মুকুলি' (উন্মুক্ত) বিহু নৃত্য পরিবেশনা করা হচ্ছে
ধরনলোক

ইতিহাস সম্পাদনা

অসমীয়া জাতির সঙ্গে ওতঃপ্রোতঃ ভাবে জড়িত হয়ে থাকা এই নৃত্যেরসূত্রের বিষয়ে সঠিক প্রমাণ পাওয়া না গেলেও বিহু নৃত্য চুটিয়া, মরান, দেওরি, সোনোয়াল, থেঙ্গাল প্রভৃতি জনজাতির মধ্যে প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়, যারা আহোমদের আগে থেকে আসামে বসবাস করছিল। প্রায় ১৬শ (খ্রীষ্ঠাব্দ) শতকে আহোম স্বর্গদেউ রূদ্রসিংহ-এর সময় থেকে এই নৃত্যের প্রচলন আছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। প্রায় ১৬৯৪ সাল থেকে স্বর্গদেউ রূদ্রসিংহর পৃষ্ঠপোষকতায় রঙালী বিহু উপলক্ষে রংঘর-এর মজিয়াতে এই নৃত্য প্রদর্শন করা হত।[১]

 
বিহু নাচনীর চিত্র

নৃত্য, বাদ্য সম্পাদনা

 
বিহু নৃত্য

বিহু পুরুষ-মহিলা উভয়ে মিলিত হয়ে করা এক সমবেত লোকনৃত্য। পারম্পরিক বিহুগীত এবং বিভিন্ন লোকবাদ্যের সমাহার হওয়া এই নৃত্য প্রদর্শনে ঢুলীয়ার ঢোল-এর সঙ্গে মুগার মেখেলা চাদর পরে টাকুরি ঘুরিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচা নাচনীদের প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্র বলা যায়। নাচনীদের নৃত্যমুদ্রাও পুরুষ নৃত্যশিল্পীদের থেকে বেশি।

বিহুতে ব্যবহৃত কয়েকটি লোকবাদ্য হল:

  • ঢোল – বিহুর মূল অবনদ্ধ বাদ্য
  • মোষ-এর শিঙর পেঁপা বা শিঙা – মোষের শিং এবং বাঁশ দিয়ে তৈরি সুষির বাদ্য
  • গগনা – পাতলা একটি চটি বাঁশের তৈরি একধরনের হার্প (জুয়িশ হার্প) জাতীয় ঘনবাদ্য
  • বাঁশী – সুষির বাদ্য
  • বাঁশ-এর টোকা – বাঁশের তৈরি ঘনবাদ্য
  • সুতুলি – মাটির তৈরি সুষির বাদ্য
  • বীণ – একটি তন্ত্রীযুক্ত ভায়োলিনের মত একধরনের বাদ্য
  • তাল – কাঁসা, রূপো ইত্যাদি মিশ্রিত ধাতুর তৈরি ঘনবাদ্য
  • ধুতং বা জেং টকা – বাঁশ-বেতের তৈরি ঘনবাদ্য

ইত্যাদি।

প্রকার সম্পাদনা

বৃহত্তর আসামের জনগোষ্ঠীর বিবিধতা অনুযায়ী বিহু নৃত্য বিভিন্ন প্রকারের বলা যায়, যেমন দেউরী বিহু, মরান বিহু, মিচিং বিহু ইত্যাদি।[২] নৃত্যমুদ্রার কিছু বৈষম্যকে বাদ দিয়ে, সাধারণত প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী বসন্তের আগমনে রঙালী বিহুর সময়ে করা এই বিভিন্ন প্রকারের বিহু নৃত্য সমূহের একেটি উদ্দেশ্য; উলহ মালহে নববর্ষকে আগমন জানানো।

আহোমদের সময় থেকে অবিবাহিত যুবতীদের মধ্যে প্রচলিত বিহু জেং বিহু বলে পরিচিত। উজনি আসামের কিছু স্থানে এখানেও এই বিহু প্রচলিত। এই প্রথা মতে, অবিবাহিত যুবতীরা বসন্ত ঋতুতে/রঙালী বিহুতে জাক-পেতে গাছেরতলে ধরিত্রীর উর্বরতা কামনা করে আবেলি সময়ে নৃত্য গানের অনুষ্ঠান করেন। এই কথাই প্রমাণ করে এই গোষ্ঠীর মহিলাদের, সেই সময়ে মহিলা হিসাবে স্বাধীনতা কেমন ছিল; যে সময়ে হিন্দু মহিলাদের ঘরের বাইরে নৃত্যগান করায় কঠোর বাধা নিষেধ ছিল। এই মহিলারা নৃত্য গানের সময়ে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র যেমন 'টকা', 'গগনা', 'সুতুলি' ইত্যাদিও ব্যবহার করেন।

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Scholar throws light on Bihu's origin [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১২-০৬-১৪ তারিখে[
  2. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:আসামের নৃত্য