বিম্‌সটেক

দক্ষিন ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহ নিয়ে গঠিত আঞ্চলিক জোট
(বিমসটেক থেকে পুনর্নির্দেশিত)

বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল এন্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন (অর্থাৎ "বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে বহুখাতীয়, কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা উদ্যোগ") বা সংক্ষেপে বিম্‌সটেক দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কয়েকটি দেশকে নিয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক জোট। ১৯৯৭ সালের ৬ জুন, ব্যাংককে - বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কাথাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠকে একটি নতুন আন্তঃআঞ্চলিক জোট সৃষ্টি করা হয় এবং সভায় অংশগ্রহণকারী মূল আলোচকদের দেশের নামের অদ্যাক্ষর অনুযায়ী এই জোটের নাম দেয়া হয় - BIST-EC (Bangladesh, India, Sri Lanka & Thailand Economic Cooperation).[১][২]

বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল এন্ড ইকনমিক কোঅপারেশন
(বিম্‌সটেক)
মানচিত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিমসটেকের সদস্যদেশগুলি
মানচিত্রে দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিমসটেকের সদস্যদেশগুলি
সদস্যপদ
নেতৃবৃন্দ
• সভাপতি
   নেপাল
(২০১৪ সালের ৪ মার্চ থেকে)
প্রতিষ্ঠাজুন ৬, ১৯৯৭
ওয়েবসাইট
www.bimstec.org

প্রসংগত, মিয়ানমার এই প্রারম্ভিক সভায় পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নেয়। পরবর্তীতে, ২২ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালের প্রথম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে মিয়ানমারকে পূর্ণ সদস্য হিসেব গ্রহণ করা হয়। মিয়ানমারের সদস্য হিসেবে যোগদানের পর সংগঠনের নামটি কিছুটা পরিবর্তন করে BIMST-EC করা হয়। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের ২য় বৈঠকে নেপালকে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেয়া হয়। পরবর্তীতে, ২০০৩ সালে নেপাল ও ভুটান কে সংগঠনটির পূর্ণ সদস্যের পদ প্রদান করা হয়।

২০০৪ সালের ৩১ জুলাই, সংগঠনের প্রথম আনুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনে, নেতৃবৃন্দ সংগঠনটির নাম পরিবর্তনের পক্ষে মত দেন এবং সংগঠনটির পরিবর্তিত নামটি দাঁড়ায় - BIMSTEC বা Bay of Bengal Initiative for Multi-Sectoral Technical & Economic Cooperation.[৩][৪]

বিমসটেকের সদর দপ্তর বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত। ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্ভোধন করেন।

বিমসটেকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বঙ্গোপসাগর উপকূলের দেশগুলির মধ্যে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পারিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করা। ব্যবসা, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, পর্যটন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, মৎস্য সম্পদ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পোশাক ও চামড়া শিল্পসহ আরো অনেকগুলি ক্ষেত্র বিমসটেকের মূল উদ্দেশ্যভুক্ত।

বিমসটেকের অগ্রাধিকারভুক্ত ক্ষেত্র সম্পাদনা

বিমসটেক আঞ্চলিক সহযোগীতার জন্য ১৪ টি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ৬টি ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৯৯৮ সালের ১৯ নভেম্বরের ২য় মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে নির্ধারন করা হয়। বিমসটেকের অগ্রাধিকারভুক্ত ক্ষেত্রগুলি নিম্নরূপ :

বাংলাদেশের প্রধান ভূমিকায় ব্যবসা ও বাণিজ্য খাতে সহযোগিতা।

ভারতের মুখ্য ভূমিকায় পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সহযোগিতা।

♦ প্রাকৃতিক সম্পদ (Energy) খাতের সহযোগিতায়, মিয়ানমার

♦ পর্যটন খাতের সহযোগিতায়, ভারত

♦ প্রযুক্তি খাতে, শ্রীলঙ্কা

♦ মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে, থাইল্যান্ড

২০০৫ সালের মন্ত্রী পর্যায়ের ৮ম বৈঠকে কতিপয় নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র উন্মোচন করা হয়। অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলি ৬ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৪টিতে দাঁড়ায়। এই পরবর্তী ৮টি খাতের প্রথম ৭টি ২০০৪ সালের বিমসটেক প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে আলোচিত হয়।

♦ কৃষি খাতে সহযোগিতা, মিয়ানমারের প্রধান ভূমিকায়।

♦ জনস্বাস্থ্য, থাইল্যান্ড

♦ দারিদ্র্য দূরীকরণ, নেপাল

♦ সন্ত্রাস প্রতিরোধ (Counter Terrorism) ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবেলা, ভারত

♦ পরিবেশ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ভারত

♦ সংস্কৃতি, ভুটান

♦ জনসংযোগ / বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ, থাইল্যান্ড

♦ জলবায়ু পরিবর্তন এর ক্ষেত্রে সহযোগিতায় বাংলাদেশের নেতৃত্বে।

সভাপতিত্ব সম্পাদনা

বিমসটেক সভাপতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলির নামের অদ্যাক্ষরের অগ্রক্রম নীতি অনুসরণ করে। তাই, বিমসটেকের সভাপতিত্ব পর্যায়ক্রমিকভাবে আরম্ভ হয় বাংলাদেশ কে দিয়ে। বাংলাদেশ ১৯৯৭-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিমসটেকের সভাপতিত্ব করে। এর পর ভারত ২০০০ সালে, মিয়ানমার (২০০১-২০০২), শ্রীলঙ্কা (২০০২-২০০৩), থাইল্যান্ড (২০০৩-২০০৫), বাংলাদেশ (২০০৫-২০০৬)। এর মধ্যে ভুটান সভাপতিত্ব করা হতে স্বেচ্ছায় নিবৃত থাকে। তারপর পর্যায়ক্রমে আবারো ভারত (২০০৬-২০০৯) বিমসটেকের সভাপতিত্ব করে। ২০০৯ সালে মিয়ানমার ১২তম মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে পুনরায় সভাপতিত্ব গ্রহণ করে এবং ২০১১ সালের ১৩ তম মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক পর্যন্ত সভাপতিত্বের দায়িত্ব পালন করে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে নেপাল ২০১৪ সালের ৪ মার্চ নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করে।

শ্রীলঙ্কার নাগরিক সুমিত নাকান্ডালা বিমসটেকের প্রথম মহাসচিব। [৫]

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সাথে সম্পর্ক সম্পাদনা

২০০৫ সাল থেকেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বিমসটেকের উন্নয়ন সহযোগীর ভূমিকা পালন করে আসছে। এই সম্পর্কের সূত্রপাত হয়, এডিবি কর্তৃক, বিমসটেক সদস্য দেশগুলির মধ্যেকার পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বিষয়ক একটি গবেষণাপত্র তৈরির প্রেক্ষিতে। এডিবির এই গবেষণাপত্রের শিরোনাম ছিল বিমসটেক ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড লজিস্টিক স্টাডি (BIMSTEC Transport Infrastructure & Logistic Study, BTILS) অর্থাৎ "বিমস্টেক পরিবহন অবকাঠামো ও পণ্যস্থানান্তর গবেষণা")। গবেষণা প্রতিবেদনটিকে আরও বিশদ মন্তব্য প্রদানের জন্য সদস্যদেশগুলিকে প্রদান করা হয়। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিমসটেকের পরবর্তী সহযোগিতার খাতসমূহ নির্ধারণ করা হয়।

বিমসটেক সেন্টার সম্পাদনা

থাইল্যান্ডের ফুকেত শহরে ২০০৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিমসটেকের ৬ষ্ঠ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সদস্য রাষ্ট্রগুলি কারিগরি সহায়তা সুব্যবস্থা (Technical Support Facility বা TSF) স্থাপনের ব্যপারে একমত হন। মন্ত্রীদের সম্মিলিত ঘোষণায় বলা হয়, এই কারিগরি সহায়তা সুব্যবস্থা বিমসটেকের বিভিন্ন অংশের কার্যাবলীর সমন্বয় সাধনে বিমসটেক বিশেষজ্ঞ দল (BIMSTEC Working Group বা BWG) হিসেবে কাজ করবে। একই সাথে পরীক্ষামূলকভাবে দুই বছরের জন্য বিমসটেক চেম্বার অফ কমার্সের কার্যাবলীর সমন্বয় সাধনের দায়িত্বও দেয়া হয় এই বিশেষজ্ঞ দলের উপর। মন্ত্রীদের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করেন বিমসটেকের একদল জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, যারা ২০০৩ সালে একটি বৈঠকে মিলিত হয়ে সমন্বয় পদ্ধতির উপর আলোচনা করে। একই বিষয়ে মন্ত্রীদের হাতে ছিল, ESCAPE এর পরামর্শক ডেভিড ওল্ডফিল্ডের তৈরি একটি খসড়া প্রতিবেদন যার শিরোনাম ছিল - "Toward Setting Up a BIMSTEC Technical Support Facility & Permanent Secretariat : Considerations & Options"। এই খসড়াতে, ব্যাংককেই বিমসটেকের TSF টি স্থাপন করার সুপারিশ করা হয়।

২০০৮ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত বিমসটেকের ২য় শীর্ষ সম্মেলনে একটি স্থায়ী সচিবালয় গঠনের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এরই মাঝে থাইল্যান্ড, বিমসটেক কেন্দ্রের জন্য এক বছর মেয়াদী চুক্তির সময়কাল বাড়িয়ে নেয় (জুন ২০০৭ - মে ২০০৮)। পরবর্তীতে, থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুনরায় এই সময়সীমা আরো এক বছরের জন্য (১লা জুন ২০০৮ থেকে ৩১শে মে ২০০৯ পর্যন্ত) বাড়িয়ে নেয়।

বিমসটেক সম্মেলনসমূহ সম্পাদনা

তারিখ আয়োজক দেশ আয়োজক শহর
১ম ৩১ জুলাই ২০০৪   থাইল্যান্ড ব্যাংকক
২য় ১৩ নভেম্বর ২০০৮   ভারত নয়াদিল্লী
৩য় ৪ মার্চ ২০১৪   মিয়ানমার নেপিডো
৪র্থ ৩০ আগস্ট ২০১৮     নেপাল কাঠমুন্ডু>"BIMSTEC Summit"Bay of Bengal Initiative for Multi-Sectoral Technical and Economic Cooperation। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬ </ref>
৪র্থ ২০১৭     নেপাল কাঠমুন্ডু[৬]

বিমসটেক+আসিয়ান সামিট সম্পাদনা

দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সংগঠন সম্প্রতি "বিমসটেক ও আসিয়ান সামিট" আয়োজনের পরিকল্পনা করে,যদিও এটি এখনো৷ বেশ আলোচিত নয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Haidar, Suhasini (১৫ অক্টোবর ২০১৬)। "BIMSTEC a sunny prospect in BRICS summit at Goa"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৬ 
  2. "BRICS Summit 2016: BIMSTEC members have economic opportunities to share, said Narendra Modi - The Economic Times"The Economic Times। সংগ্রহের তারিখ ১৬ অক্টোবর ২০১৬ 
  3. "Bay of Bengal Initiative for Multi-Sectoral Technical and Economic Cooperation"। Intellectual Network for the South। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. See for a detailed historical account of the founding and evolution of BIST-EC and BIMST-EC e.g. Michael, Arndt (2013). India's Foreign Policy and Regional Multilateralism (Palgrave Macmillan), pp. 145-163.
  5. "Third BIMSTEC Summit Declaration"। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৪ 
  6. http://www.narendramodi.in/bimstec-leaders-retreat-2016-outcome-document-532768