বাণিজ্যকুঠি ইউরোপীয়দের বাণিজ্য কেন্দ্র ও পণ্যাগার। এ ধরনের কেন্দ্র থেকে ইউরোপীয় নৌবাণিজ্য কোম্পানিগুলি পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে তাদের ব্যবসায়-বাণিজ্য পরিচালনা করত। এ পণ্যাগারে জাহাজের মালামাল বাজারজাত করার জন্য মজুত রাখা হতো। এখানে রপ্তানির জন্য মালামাল সংগৃহীত ও প্রক্রিয়াজাত করা হতো। কোম্পানির ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের আবাসস্থলও ছিল এ কুঠি। বাণিজ্যকুঠির বিষয়াবলি পরিচালনা করত একটি ‘কাউন্সিল অব মার্চেন্টস’। এ কাউন্সিল প্রধানকে ফ্যাকটর নামে অভিহিত করা হতো। আমদানি পণ্য গ্রহণ ও বিক্রি এবং রপ্তানি পণ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করা ছিল ফ্যাকটরের দায়িত্ব। ফ্যাকটর স্থানীয় বানিয়াগোমস্তাদের অর্থ আগাম দিত এবং তারা অর্থ জোগান দিত স্থানীয় উৎপাদক ও পাইকারদের। এ প্রক্রিয়াকে বলা হতো বিনিয়োগ। এভাবে ‘ফ্যাকটর’ ও ‘বিনিয়োগ’ এই শব্দ দুটি ভারতে ইউরোপীয় নৌবাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডসংক্রান্ত পারিভাষিক শব্দ হয়ে ওঠে। বর্তমানে শব্দ দুটির যে প্রায়োগিক অর্থ চালু তার সঙ্গে সেকালের অর্থের মিল ছিল না। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম বাণিজ্যকুঠি ১৬৫১ খ্রিষ্টাব্দে [উড়িষ্যার বালেশ্বরে স্থাপিত হয়। পরে হুগলি, পাটনা, ঢাকা, কাসিমবাজারকলকাতায়ও এ ধরনের বাণিজ্যকুঠি গড়ে ওঠে। এসব বাণিজ্যকুঠির অধীনে অসংখ্য মফস্বল কুঠি ছিল। ইংরেজ দের আঞ্চলিক সদর দপ্তর ছিল হুগলিতে। পরে এটি কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। ফরাসিদের সদর দপ্তর ছিল চন্দননগরেওলন্দাজদিনেমার দের সদর দপ্তর যথাক্রমে চুঁচুড়াশ্রীরামপুরে ছিল। ব্যবসায়-বাণিজ্যের জন্য এগুলি ছিল ইউরোপীয়দের বসতি। নজর, পেশকাস, নিয়মিত শুল্ক ও খাজনা প্রদানের বিনিময়ে মুগল সরকারের কাছ থেকে এরা সনদ লাভ করত। সনদে বসতি স্থাপনের অধিকার সম্পর্কিত শর্তাবলির উল্লেখ থাকত। এসব বসতি কালক্রমে এক একটি কোম্পানির একান্ত সংরক্ষিত এলাকা হয়ে ওঠে।

একটি বাণিজ্যকুঠি

আরও দেখুন সম্পাদনা