বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের নির্বাহী এবং সরকার প্রধান

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে রয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ শাসিত বা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভা সম্মিলিতভাবে মহান জাতীয় সংসদে তাদের নীতি-নির্ধারণ ও কর্মপন্থা উপস্থাপন করেন। এ বিষয়গুলো তাদের রাজনৈতিক দল ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কার্যপ্রণালীর সাথেও জড়িত।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সীল
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পতাকা
দায়িত্ব
শেখ হাসিনা

৬ জানুয়ারি, ২০০৯ থেকে
সম্বোধনরীতিমাননীয়
বাসভবনগণভবন, ঢাকা
আসনপ্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তেজগাঁও, ঢাকা
নিয়োগকর্তাবাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
মেয়াদকাল৫ বছর
সর্বপ্রথমতাজউদ্দিন আহমেদ
গঠন২৬ মার্চ ১৯৭১; ৫২ বছর আগে (1971-03-26)
ওয়েবসাইটpmo.gov.bd

বাংলাদেশের বর্তমান ও চতুর্দশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অদ্যাবধি ক্ষমতাসীন রয়েছেন শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। তিনি একাধারে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় প্রধান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধান মোতাবেক বাংলাদেশে সংসদীয় পদ্ধতিতে সরকার গঠনের কথা বর্ণিত আছে। এতে সরকার প্রধান হিসেবে থাকবেন একজন প্রধানমন্ত্রী। তন্মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন জাতীয় পরিষদের সদস্যদের ভোটে। কিন্তু সামরিক অভ্যুত্থানজনিত কারণে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে সামরিক আইন জারী হয়। এরপর রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদীয় সরকার পদ্ধতি - উভয়ের সংমিশ্রণে সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটে। কিন্তু সামরিক বাহিনীর হাতেই মূলতঃ ক্ষমতা রয়ে যায়। ১৯৮০-এর দশকে পুনরায় সামরিক আইনের মাধ্যমে দেশ চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৯১ সালে পুনরায় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়। এতে রাষ্ট্রপতিকে রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীকে সরকারপ্রধান হিসেবে গণ্য করা হয়।

সেপ্টেম্বর, ১৯৯১ সালে নির্বাচনী ব্যবস্থা পরিবর্তনে সংবিধান সংশোধন করতে হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা সৃষ্টি করা হয় ও সরকারের প্রধান ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফিরিয়ে আনা হয়। এরফলে বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা মূল সংবিধানে ফিরে যায়। অক্টোবর, ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদের সদস্যগণ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আবদুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন।

কার্যালয়ের দায়িত্বাবলী সম্পাদনা

ঢাকা মহানগরীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অবস্থিত। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে সরকারের মন্ত্রণালয় হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যান্য দায়িত্বাবলীর মধ্যে রয়েছে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা এবং প্রধানমন্ত্রীকে অন্যান্য কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করাসহ গোয়েন্দা সংক্রান্ত বিষয়াবলী, এনজিও, অনুষ্ঠানের আয়োজন ইত্যাদি।

সরকার গঠন সম্পাদনা

জাতীয় সংসদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সভা। এক কক্ষবিশিষ্ট এ আইনসভার সদস্য সংখ্যা ৩৫০ জন। তন্মধ্যে ৩০০ সংসদ সদস্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। এছাড়াও ৫০ জন মহিলা সংসদ সদস্য সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরূপে গণ্য হন। সংসদ সদস্যদের মেয়াদকাল পাঁচ-বছর। সংসদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করা হয়। তারও মেয়াদকাল পাঁচ-বছর। তিনি দুই মেয়াদকালের জন্য দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত আনুষ্ঠানিক ফলাফলের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীকে মনোনীত করেন। নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রধানমন্ত্রী সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের অধিকারী দলের বা জোটবদ্ধ দলের প্রধান হয়ে থাকেন। সরকার গঠনের জন্য তাকে জাতীয় সংসদ সদস্যদের আস্থা অর্জন করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মন্ত্রিপরিষদের সদস্য নির্বাচন করা হয় এবং এ সরকারকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন প্রদান করেন। মন্ত্রীদের মধ্যে কমপক্ষে ৯০% সদস্যকে অবশ্যই জাতীয় সংসদ সদস্য হতে হয়। বাদ-বাকী ১০% মন্ত্রী সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত না-ও হতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর লিখিত অনুরোধক্রমে রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি ঘটিয়ে থাকেন।

রাজনৈতিক সঙ্কট সম্পাদনা

পূর্ব-ঘোষিত ২২ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখের সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দল তীব্র আপত্তি জানায়। তাদের মতে ক্ষমতাসীন খালেদা জিয়া সরকার ও বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নিজেদের অনুকূলে রেখেছে যা সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের পদত্যাগ দাবী করে ও ৩ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলো নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয়।[১] ঐ মাসের শেষ দিকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মইনউদ্দিন আহমেদের হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে প্রধান পরামর্শকের পদ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। এরফলে বাংলাদেশে জরুরী অবস্থা জারী করা হয়। সামরিক বাহিনী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়কের প্রধান পরামর্শক হিসেবে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদকে নিযুক্ত করা হয়। ফলশ্রুতিতে ঘোষিত সংসদীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।

বেতন ভাতা সম্পাদনা

দ্য প্রাইম মিনিস্টার'স (রেমুনারেশেন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেতন মাসে এক লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া তিনি মাসিক বাড়ি ভাড়া পান এক লক্ষ টাকা, দৈনিক ভাতা পান তিন হাজার টাকা।[২]

তালিকা সম্পাদনা

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Haroon Habib, "Polls won't be fair: Hasina" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে, The Hindu, 4 January 2007.
  2. "বাংলাদেশে মন্ত্রীরা কী সুযোগ সুবিধা পান?"বিবিসি বাংলা। ৭ জানুয়ারি ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 

আরও দেখুন সম্পাদনা