পেন্সিল শার্পনার একটি সরল যন্ত্র যার মাধ্যমে কাঠপেন্সিল চোখানো হয়।[১] এর সাহায্যে কাঠপেন্সিলের উপরিভাগের কাঠাবরণটি ক্রমশ: ছিলে গ্রাফাইটের শিসটি বের করা হয়। শার্পনারের গহ্বরে পেন্সিলের মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে হাত দিয়ে পেন্সিলটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চোখানো হয়।

একটি ম্যানুয়াল প্রিজম শার্পনার
সেলুলোজ সির্কাম্লদ্বারা জারিত বায়েগ্রেড থেকে তৈরি প্রিজম পেন্সিল শার্পনার

ইতিহাস সম্পাদনা

পেন্সিল আবিষ্কারের পর থেকে পেন্সিল কাটতে ছুরিই ব্যবহার করা হত। আর কাঠমিস্ত্রিরা তাদের পেন্সিল কাটার জন্য ব্যবহার করতেন একটা লোহার পাতের মধ্যে ব্লেড দিয়ে তৈরি এক ধরনের যন্ত্র। এই যন্ত্রকেই একটু অদল বদল করে ফ্রান্সের গণিতের অধ্যাপক বার্নাড ল্যাসিকম ১৮২৮ সালে প্রথম পেন্সিল কাটার তৈরি করলেন, যার ফ্রেঞ্চ প্যাটেন্ট নম্বর ছিল ২৪৪৪।[২] এই যন্ত্রটি প্রচুর পরিমাণে তৈরির জন্য তিনি সরকারি অনুমতিও পেয়ে যান। এই যন্ত্রটি ছিল এমনই যাতে পেন্সিল কাটার সময় একটুও ব্লেডটা নড়বে না। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় সেটি। ১৮৪৭ সালে থেরি ডেস এস্টওয়াক্স তৈরি করলেন আরও একধরনের সার্পনার।

পেন্সিল সার্পনার আবিষ্কারের পর থেকে বিভিন্ন কোম্পানি নানা রকম সার্পনার তৈরি করতে শুরু করে। ১৮৮৬ সাল থেকে গাল্ড অ্যান্ড কুক নামক কোম্পানিটি জেম পেন্সিল সার্পনার নামে একধরনের কাটার তৈরি করত। যা এখনকার সার্পনারের মতো মোটেই দেখতে ছিল না। তবু ১৯১৮ সাল পর্যন্ত এটি সবার কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিল। পারফেক্ট পেন্সিল পয়েন্টার নামের কোম্পানিটিও ১৮৯০ সালে একধরনের স্টিলের সার্পনার তৈরি করে। এটিও খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।

সময়ের সাথে সাথে কার্যকারিতা আর প্রয়োজন অনুযায়ী পেন্সিলের শিষ সরু মোটা করতে নানা ধরনের সার্পনার তৈরি হতে থাকে। ১৮৫৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সার্পনার তৈরি করেন অল্টার কে ফস্টার।[৩] তিনি একটা গোল ব্লেড ফিট করে দিলেন একটা বক্সের মধ্যে। আর সেই ব্লেডের সঙ্গে জুড়ে দিলেন একটি হ্যান্ডল, যেটা ঘোরালে ব্লেডটা ঘুরতে থাকবে আর তার মধ্যে পেন্সিল দিলে সুন্দরভাবে কাটা হয়ে যাবে। ১৮৭০ সাল পর্যন্ত এইরকম যন্ত্রই পেন্সিল কাটার জন্য ব্যবহার হত সেদেশে। এই রকম যন্ত্রটি যদি বিদ্যুতে চালানো যায় কেমন হয়, এমনই ভাবতে ভাবতে ১৯১৭ সালেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আবিষ্কার হল বৈদ্যুতিক পেন্সিল সার্পনার। তবে এর আগে বিভিন্ন দেশে নানারকম সার্পনার তৈরি ও ব্যবহার শুরু হয়ে যায়।

মে ২০১১-এ যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও রাজ্যের পর্যটন দপ্তর সাবেক মন্ত্রী রেভারেন্ড পল জনসন, যিনি ২০১০ সালে মারা যান, তার সংগৃহীত শতাধিক পেন্সিল সার্পনার দিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাবেক এই সেনানী তার দক্ষিণপশ্চিম ওহাইওর কার্বন হিলের ছোট্ট বাড়িতে তিন হাজার চারশো’র বেশি সার্পনারের বিশাল এক সংগ্রহ গড়ে তুলে ছিলেন। তার এই সংগ্রহের বাতিক শুরু হয় ১৯৮০’র দশকে যখন তার স্ত্রী তাকে কয়েকটি পেন্সিল সার্পনার উপহার দেন। জনসন তার সংগ্রহগুলোকে কয়েকটা ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ছিলের যেমন- বিড়াল, ক্রিসমাস এবং ডিজনিল্যান্ড। তার সবচেয়ে পুরনো সার্পনারটি ছিল ১০৫ বছর পুরনো।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Gerry Coughlan; Martin Hughes (২০০৭)। Irish Language and Culture। Lonely Planet। পৃষ্ঠা 74। আইএসবিএন 978-1-74059-577-3 
  2. "20 Things You Didn't Know About... Pencils", Discover magazine, মে ২০০৭, সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-৩০ 
  3. "Handheld Pencil Sharpeners"। ১৮ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০১১ 
  4. “New home for Ohio man's pencil sharpener 'museum’” at sacbee.com[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা