পুতুলনাচের ইতিকথা

মানিক বন্দোপাধ্যায় রচিত ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত তৃতীয় উপন্যাস

পুতুলনাচের ইতিকথা বাঙালি সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা তৃতীয় উপন্যাস এবং চতুর্থ মুদ্রিত গ্রন্থ। উপন্যাসটি ভারতবর্ষ পত্রিকায় বাংলা ১৩৪১ সালের পৌষ থেকে ১৩৪২ সালের অগ্রহায়ণ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে এটি বই আকারে প্রকাশিত হয়।[১][২] উপন্যাসটিতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাজতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচয় মেলে।[১][২]

পুতুলনাচের ইতিকথা
আফসার ব্রাদার্স সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
ধরনসমাজতাত্ত্বিক উপন্যাস
প্রকাশিত১৯৩৫ -১৯৩৬

কাহিনী সংক্ষেপ সম্পাদনা

উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র গ্রামের ডাক্তার শশী। ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস নেই। গ্রামের পটভূমিতে শশী, শশীর পিতা, কুসুম-সহ অন্যান্য চরিত্রগুলোর মাঝে বিদ্যমান জটিল সামাজিক সম্পর্ক নিয়েই গড়ে উঠেছে উপন্যাসটির কাহিনী ও প্রেক্ষাপট। ক্ষয়িষ্ণু সমাজের প্রেম, বিরহ, দ্বেষ ও পারস্পরিক সহমর্মিতা কে উপজীব্য করে লেখা এই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ।[১][২]

চরিত্রসমূহ সম্পাদনা

প্রধান চরিত্র সম্পাদনা

শশী এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। সদ্য ডাক্তারি পাস করে সে গ্রামে আসে বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভিন্নতর সংস্কৃতি কিংবা সহজ ভাষায় উন্নত জীবনের সন্ধানে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু শেষমেশ সে আর প্রথাগত জীবনের বাইরে যেতে পারে না।

গ্রামীণ জীবনের প্রতিবেশ-পরিবেশের বৈচিত্র্য আর বাস্তবতার ডালপালা এমনভাবে তাকে আঁকড়ে ধরে যা ছিঁড়ে বের হওয়া শশীবাবুদের সামর্থ্যের বাইরে।

কুসুম এ উপন্যাসের নায়িকা। তার পরিচয় হলো সে তেইশ বছর বয়সি বাঁজা মেয়ে, উপন্যাসের এক চরিত্র পরাণ-এর স্ত্রী, রহস্যময়ী এবং বিচিত্ররূপিনী নারী। তার খামখেয়ালীপনা, খাপছাড়া প্রকৃতি তাকে রহস্যময়ী করে তুলেছে।

শশীর জন্য তার ‘উম্মাদ ভালোবাসা' এই উপন্যাসের শিক্ষগত সৌন্দর্য। কুসুমের স্ফুট-অস্ফুট প্রেম শেষ পর্যন্ত অন্য রূপ নেয়, অন্য মাত্রা নেয়। 'চপল রহস্যময়ী নারী, জীবনীশক্তিতে ভরপুর, অদম্য অধ্যবসায়ী কুসুম জীবনরহস্যের দূত। শশী যখন তাকে ডাকে, তখন কুসুম বলে “কাকে ডাকছেন ছোটবাবু?

অন্যান্য চরিত্র সম্পাদনা

যাদব পণ্ডিত ধার্মিক ও অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে গ্রামের মানুষের কাছে পরিচিত। অন্ধবিশ্বাসের ফাঁদে মানুষকে আটকে রেখে সে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে জানে।

"সামনের রথের দিন যাদব পন্ডিত মারা যাবে।" - এই কথা চারিদিকে ছড়িয়ে যাওয়ার পর পন্ডিতমশাইকে দেখতে পাশের গ্রামগুলো থেকে মানুষের ঢল নামে। রথের দিন ঠিকই যাদব পন্ডিত ও তার স্ত্রী পাগলদিদি মৃত্যুবরণ করেন।

[৩]

এছাড়াও এতে বিন্দু, নন্দ, কুমুদ, মতি, জয়া, বনবিহারী, নন্দলাল, যামিনী কবিরাজ ও সেনদিদির মতো নানা- রকম বাস্তব চরিত্রকে জীবনের নানা স্তর থেকে উঠিয়ে এনেছেন লেখক।

অভিযোজন সম্পাদনা

চলচ্চিত্র সম্পাদনা

২০২২ সালের মধ্যেই পশ্চিমবাংলার নির্মাতা সুমন মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায়ের 'পুতুলনাচের ইতিকথা' নিয়ে নির্মিত হচ্ছে চলচ্চিত্র।[৪] এতে অভিনয় করবেন জয়া আহসান, আবীর চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় এবং অনন্যা চট্টোপাধ্যায় প্রমূখ।[৪][৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "পুতুল নাচের ইতিকথা"সমকাল (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১৫ 
  2. "পুতুল নাচের ইতিকথা : এক বৃহদায়তন উপন্যাসের জৈবনিক বিস্তার"Odhikar। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১৫ 
  3. "পুতুল নাচের ইতিকথা - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়"www.onulikhon.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৬ 
  4. "এবার 'পুতুল নাচের ইতিকথা'য় জয়া"দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-২৪ 
  5. "মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পুতুলনাচের ইতিকথা'য় জয়া"SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-২৪