পিঠা

বাংলার একটি মিষ্টি

পিঠে বা পিঠা বাংলার নিজস্ব আদিম আভিজাত্যপূর্ণ খাদ্যদ্রব্য। এটি চালের গুঁড়ো, আটা, ময়দা, অথবা অন্য কোনও শস্যজাত গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা হয়। অঞ্চলভেদে পিঠের ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্র্য দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে সাধারণত নতুন ধান তোলার পর থেকেই পিঠা তৈরির আয়োজন করা হয়। শীতেরপৌষ পার্বণের সময় বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে পিঠে তৈরি করা হয়। পিঠে সাধারণত মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকলেও ঝাল, টক বা অন্য যে কোনও স্বাদ হতে পারে।

পিঠা
পিঠা
অন্যান্য নামপিঠে
উৎপত্তিস্থলভারতীয় উপমহাদেশ
অঞ্চল বা রাজ্যবাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, বিহার, আসাম
প্রধান উপকরণচালের গুঁড়ো অথবা ময়দা

পিঠার প্রকারভেদ সম্পাদনা

  • পাকান / তেল / পোয়া পিঠা
  • পানতোয়া
  • পুডিং
  • মালপোয়া
  • মেরা পিঠা
  • মালাই পিঠা
  • মুঠি পিঠা
  • আন্দশা
  • কুলশি
  • কাটা পিঠা
  • কলা পিঠা
  • খেজুরের পিঠা
  • ক্ষীর কুলি
  • গোকুল পিঠে
  • গোলাপ ফুল পিঠা
  • লবঙ্গ লতিকা
  • রসফুল পিঠা
  • জামদানি পিঠা
  • হাঁড়ি পিঠা
  • ঝালপোয়া পিঠা
  • ঝুরি পিঠা
  • ঝিনুক পিঠা
  • সূর্যমুখী পিঠা
  • নকশি পিঠা
  • নারকেল পিঠা
  • নারকেলের ভাজা পুলি
  • নারকেলের সেদ্ধ পুলি
  • নারকেল জেলাফি
  • তেজপাতা পিঠা
  • তেলের পিঠা
  • সন্দেশ পিঠা
  • দুধরাজ
  • ফুল ঝুরি পিঠা
  • ফুল পিঠা
  • বিবিয়ানা পিঠা
  • সেমাই পিঠা
  • চিড়ার মোয়া
  • কাউনের মোয়া
  • ঝাল মোয়া
  • ফিরনি
  • সেমাই
  • নারকেল নাড়ু
  • কালাই পুড়ি
  • সরল পিঠা
  • নকশি পিঠা

তন্মধ্যে, বিবিয়ানা পিঠাকে জামাই ভুলানো পিঠা নামেও অভিহিত করা হয়। অপূর্ব কারুকার্যখচিত এ পিঠা তৈরীতে বিবি (অর্থ - কনে)-কে অনেকরকম পারদর্শিতা কিংবা পারঙ্গমতার পরিচয় দিতে হয় বলেই এরূপ নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।[১]

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

 
বাসায় বানানো পুলি পিঠা

বাঙালীর লোক ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ। সাধারণতঃ পিঠা শীতকালের রসনাজাতীয় খাবার হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত। মুখরোচক খাদ্য হিসেবে বাঙালী সমাজে বিশেষ আদরণীয়। এছাড়াও, আত্মীয়-স্বজন ও মানুষে-মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরো দৃঢ় ও মজবুত করে তুলতে পিঠা-পুলি আয়োজনের উৎসব সবিশেষ ভূমিকা পালন করে।[২]

পিঠাঘর সম্পাদনা

 
ঢেঁকি; বাঙালি জীবনে পিঠের সাথে অঙ্গাঙ্গিক ভাবে সম্পৃক্ত

শুধুমাত্র শীতেই নয়, সারাবছর পিঠা খাবার সুযোগ রয়েছে। শহুরে ব্যস্ত জীবনে পিঠা তৈরী করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই, বেশ কিছু জায়গায় গড়ে উঠেছে পিঠাঘর। সেখানে পিঠা বিক্রী করা হয়। সাধারণতঃ অধিকাংশ পিঠাই সংখ্যা বা পিস হিসেবে বিক্রী হয়। এছাড়াও, খাবার ব্যবস্থাও রয়েছে খাদ্যরশিকদের জন্য। পাশাপাশি গায়ে-হলুদ, জন্মদিন, বিয়ে-শাদীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পিঠা সরবরাহেরও ব্যবস্থা করে থাকে পিঠাঘরগুলো।[৩]

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সম্পাদনা

পিঠার স্বাদ গ্রহণ ও জনসমক্ষে একে আরো পরিচিত করে তুলতে দিনব্যাপী অথবা সপ্তাহব্যাপী শহর-নগরে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়। ঢাকায় সাংবাৎসরিকভাবে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী, বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, আমরা ঢাকাবাসী প্রমূখ সংস্থা-সংগঠনের উদ্যোগে এ উৎসব উদযাপিত হয়ে থাকে।

সেজন্যেই পিঠাকে ঘিরে পল্লী মায়ের কোল কবিতায় বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন,

এছাড়াও, মাটির গান হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে ভাওয়াইয়া গানের। সেখানেও পিঠে বা পিঠার প্রভাব পড়েছে।[২] তেমনি একটি হলোঃ-

 
বাংলাদেশের পিঠা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক ইত্তেফাক, মুদ্রিত সংস্করণ, সম্পাদকীয়, শীতকালে পিঠা-পুলির উৎসব, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১ইং, পৃষ্ঠা-৮
  2. দৈনিক ইত্তেফাক, মুদ্রিত সংস্করণ, পৌষ এলো গো পৌষ, নগর সংস্কৃতি, ৭ জানুয়ারী, ২০১২ইং, পৃষ্ঠা-২৪
  3. কালের কণ্ঠ, এ টু জেড, এই শীতে পিঠাঘরে, মুদ্রিত সংস্করণ, পৃষ্ঠা-১৫, ৯ জানুয়ারী, ২০১২ইং

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা