পাললিক শিলা হলো এক প্রকারের শিলা যা ছোট ছোট কণা জমে এবং পরবর্তীকালে পৃথিবীর পৃষ্ঠ,সমুদ্রতল বা জলের অন্যান্য দেহের খনিজ বা জৈব কণার সিমেন্টেশন(সংযোজন) দ্বারা গঠিত হয়।

কাম্বারল্যান্ডের পাললিক শিলা।

পৃথিবীর ভূত্বকের মহাদেশগুলোর পলল শৈল আবরণ বিস্তৃত (পৃথিবীর বর্তমান স্থলপৃষ্ঠের ৭৩%)[১]),তবে পলির শিলাগুলো মোট ভূত্বকের ৮% হিসাবে অনুমান করা হয়।[২]

আগ্নেয় শিলা বহুদিন ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়কারক শক্তি,যেমন- নদী, হিমবাহ, বায়ু, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতির প্রভাবে উৎস স্থান থেকে ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত ও পরিবাহিত হয়ে কোনো সমুদ্র,হ্রদ বা নদীর তলদেশে জমা হতে থাকে। এভাবে বছরের পর বছর ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থগুলো স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় এবং চাপের ফলে জমাট বেঁধে শক্ত হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে তাকে পাললিক শিলা বলে। এই শিলার মধ্যে বালি,পলি ও কাদার ভাগ বেশি থাকে। পলি জমাট বেঁধে এটি সৃষ্টি হওয়ায় এর নাম পাললিক শিলা।

পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

1. এই শিলায় স্তরায়ন এবং কাদার চির খাওয়া দাগ লক্ষ্য করা যায়।

2.একমাত্র এই শিলাতেই জীবাশ্ম দেখা যায়।

3. এই শিলায় সচ্ছিদ্রতা ও ভঙ্গুরতা দেখা যায়।

4. এই শিলার প্রবেশ্যতা খুব বেশি।

5.ক্ষয় প্রতিরোধের ক্ষমতা বিভিন্ন রকম হয়।

6.কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভান্ডার এই শিলা।

7. কাঠিন্য আগ্নেয় শিলার থেকে কম।

8. দারণ, ফাটল বা কেলাসের গঠন থাকে না।

পাললিক শিলার গঠন সম্পাদনা

প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি বছর আগে ভূ –আন্দোলনের সময় পৃথিবীর অরণ্য ভূগর্ভে চাপা পড়ে যায় এবং ভূগর্ভের চাপ ও তাপে উদ্ভিদের কান্ডে সঞ্চিত কার্বন স্তরীভূত হয়ে কয়লায় পরিণত হয়। প্রায় ৭ থেকে ১০ কোটি বছর আগে পাললিক শিলাস্তরে নানা ধরনের প্রাণী ও উদ্ভিদ চাপা পড়ে যায়। উপরীস্তরের প্রবল চাপ ও ভূগর্ভস্থ প্রচণ্ড তাপের ফলে তাদের দেহাবশেষ হাইড্রোকার্বন ও বিভিন্ন জৈব যৌগের মিশ্রণে পরিণত হয়ে খনিজ তেলের সৃষ্টি হয়। খনিজ তেলের উপরের স্তরে প্রাকৃতিক গ্যাসের উপস্থিতি দেখা যায়। শুধুমাত্র সছিদ্র পাললিক শিলাস্তরেই খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যায়।

শব্দগত উৎপত্তি সম্পাদনা

পাললিক শিলার ইংরেজি প্রতিশব্দ sedimentary rock যা ল্যাটিন শব্দ 'sedimentum' থেকে এসেছে যার অর্থ হলো 'অধঃক্ষেপন'। পাললিক শিলা কথাটি এসেছে 'পলি' বা 'পলল' থেকে।

শিলা প্রকারভেদ সম্পাদনা

পলির উৎপত্তি অনুসারে সম্পাদনা

শিলাতেল সম্পাদনা

পাললিক শিলা স্তরে স্তরে সঞ্চিত হওয়ার সময় ফোরামিনিফেরা নামক এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র কীট পাললিক শিলাস্তরের মধ্যে চাপা পড়ে যায়। শিলাস্তরের চাপে এবং অভ্যন্তরীণ উত্তাপে তাদের দেহ নিঃসৃত নির্যাস নানা প্রকার কার্বন ও হাইড্রোজেনের দ্রবণে পরিণত হয় এবং পেট্রোলিয়াম সৃষ্টি করে। তাই কেবলমাত্র সচ্ছিদ্র পাললিক শিলাস্তরেই খনিজ তেল পাওয়া যায় এবং তাই খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম কে শিলাতেল বলে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Wilkinson, Bruce H.; McElroy, Brandon J.; Kesler, Stephen E.; Peters, Shanan E.; Rothman, Edward D. (২০০৮)। "Global geologic maps are tectonic speedometers – Rates of rock cycling from area-age frequencies"। Geological Society of America Bulletin121 (5–6): 760–779। ডিওআই:10.1130/B26457.1বিবকোড:2009GSAB..121..760W 
  2. Buchner, K & R. Grapes (২০১১)। "Metamorphic rocks"Petrogenesis of Metamorphic RocksSpringer। পৃষ্ঠা 21–56। আইএসবিএন 978-3-540-74168-8ডিওআই:10.1007/978-3-540-74169-5_2