পাদদেশ বস্তুকাম, পাদদেশ পক্ষপাত, পাদদেশ পূজা, অথবা পদপীড়ন হল পাদদেশ সম্পর্কে কথিত একটি যৌন আগ্রহ।[১] অন্যথায় অযৌন বস্তু বা শরীরের অযৌন অংশের ক্ষেত্রে এটি যৌন বস্তুকাম-এর সবচেয়ে সাধারণ ধরন।[২]

"দ্য কাউন্টেস উইথ দ্য উইপ" মার্টিন ভ্যান মেলি দ্বারা অঙ্কিত একটি চিত্র

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

পাদদেশ বস্তুকামকে পাদদেশ বা জুতার প্রতি কথিত একটি যৌন আগ্রহ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। সিগমুন্ড ফ্রয়েড পাদদেশ বাঁধাই-কে পাদদেশ বস্তুকামের ধরন হিসাবে বিবেচিত করেছেন।[৩] একজন পাদদেশ বস্তুকামীর জন্য, সমস্ত আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুই হল পায়ের পাতা এবং পায়ের আঙ্গুলের আকৃতি এবং আকার (যেমন দীর্ঘ পায়ের আঙ্গুল, ক্ষুদ্র পায়ের আঙ্গুল, রঞ্জিত পায়ের আঙ্গুল, উচ্চ পদধনু, পদতল ইত্যাদি।), পদালঙ্কার (যেমন পদাঙ্গুষ্ঠ, পদনূপুর ইত্যাদি।), পদ-পরিচর্চা (যেমন পদপ্রসাধন বা পদমালিশ), পদাভরন (যেমন নগ্নপদ, ফ্লিপ-ফ্লপ ইত্যাদি।), পদঘ্রাণ, এবং সংজ্ঞাবহ মিথস্ক্রিয়া (যেমন পাদদেশ আঘ্রাণ, পদলেহন, পদচুম্বন, কাতুকুতুদান ইত্যাদি।)।[৩]

আপেক্ষিক সংঘটনের হার সম্পাদনা

বস্তুকামীদের আপেক্ষিক সংঘটনের হার হিসাবে, বোলগ্না বিশ্ববিদ্যালয়-এর গবেষকরা বস্তুকামী দলের সাথে ৩৮১ টি ইন্টারনেট আলোচনা পরীক্ষা করেছেন, যার মধ্যে কমপক্ষে ৫,০০০ মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। গবেষকরা নিম্নলিখিত উপাদানের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বস্তুকামীদের সুস্পষ্টতর হিসাব করেছেন:

  • (ক) একটি বিশেষ ভক্তিবস্তু সম্পর্কে অনুরক্ত আলোচনা গোষ্ঠী সংখ্যা
  • (খ) গোষ্ঠীতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সংখ্যা; এবং
  • (গ) বার্তা বিনিময়ের সংখ্যা।

এটা সিদ্ধান্ত করা হয় যে বেশিরভাগ বস্তুকামী শরীরের অংশ বা শরীরের অংশের সঙ্গে সাধারণত সংযুক্ত এমন বস্তু সম্পর্কে কামুক ছিল (যথাক্রমে ৩৩% এবং ৩০%)। সেইসমস্ত মানুষের মধ্যে যারা ​​শরীরের অংশে অনুরক্ত, পায়ের পাতাদ্বয় এবং পায়ের আঙ্গুল সর্বাধিক সংখ্যকের পছন্দ হয়েছে, তারা নমুনাদের ৪৭%। সেইসমস্ত মানুষের (বেশিরভাগই পুরুষদের) মধ্যে যারা ​​শরীরের অংশ সংক্রান্ত বস্তুর প্রতি অনুরক্ত, তাদের ক্ষেত্রে পাদুকা (জুতা, বুট ইত্যাদি।) ছিল সবচেয়ে পছন্দের (৬৪%)।[৪][৫]

পাদদেশ বস্তুকাম শরীর সম্পর্কিত যৌন ভক্তিবস্তুর সর্বাধিক প্রচলিত ধরন।[৬][৭] ২০০৬ সালের অগাস্ট মাসে, এওএল (AOL) তাদের গ্রাহকদের দ্বারা দাখিলীকৃত অনুসন্ধান শব্দের একটি ডাটাবেস উন্মোচিত করে। শুধুমাত্র সেই বাক্যাংশ সারিতে স্থান পায় যেখানে "ভক্তিবস্তু" শব্দটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটা আবিষ্কার করা গেছে যে পায়ের পাতাদ্বয়-এর জন্যে সবথেকে বেশি সর্বজনীন অনুসন্ধান হয়েছে।[৮]

বিভাগ সম্পাদনা

পাদদেশ বস্তুকাম যৌন এবং অযৌন দুটি বিভাগে বিভক্ত। যৌন পাদদেশ বস্তুকাম হয় যখন একজন যৌন জাগরন অর্জন করে, এমনকি উত্তেজনার চরমবিন্দুতে, যখন একটি পায়ের দর্শন অথবা স্পর্শ করে। এমনকি পায়ের বর্ণন বা পরিচ্ছন্নতা জনিত কারণেও এটা হতে পারে। অযৌন ধরনের পাদদেশ বস্তুকাম যৌন জাগরনের কারণ নয়, বরং সৌন্দর্যবোধের কারণে বিশুদ্ধরূপে সুখানুভব। এটাকে একজন মানুষের সেই অনুভবের সঙ্গে তুলনা করা যায় যখন সে একটি শরীরের কোনও আকর্ষণীয় অংশ দেখে, যেমন একটি মুখ, এক জোড়া চোখ, একটি নাক, অথবা শরীরের কোনো অযৌন অংশ। তারা একটি নির্দিষ্ট পায়ের সামগ্রিক সৌন্দর্যের কদর করে। এই ধরনের বস্তুকামী যৌনতাকে মূল বিচার্য বিষয় না ধরে পাদদেশের চটকের দিক থেকে বিচার করে ক্রমিক অবস্থান স্থির করা প্রবণ হয়।[৯]

উদাহরণস্বরূপ ঘটনাবলী সম্পাদনা

স্বাস্থ্য এবং রোগ সম্পাদনা

কিছু গবেষক আশঙ্কিত যে পাদদেশ বস্তুকামের প্রতিক্রিয়া একটি যৌন সংক্রমণ রোগ যা মহামারী হিসাবে বাড়ে। ওহাইও রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে[১০] ডঃ জেমস জিয়ানিনী দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, দ্বাদশ শতকে ইউরোপে গুরুতর গনোরিয়া মহামারীর সময়কালে এবং ইউরোপের ১৬ এবং ১৯ শতকে সিফিলিস মহামারীর সময়কালে, পায়ের পাতাকে যৌন বস্তু হিসাবে গণ্য করার আগ্রহ বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছিল। ওই একই গবেষণায়, অশ্লীল সাহিত্যে পদ-ভক্তিবস্তু অঙ্কনের বারংবার ব্যবহারের ৩০ বছরের বেশি একটি ব্যবধান মাপা হয়। বর্তমান এইডস মহামারী সময়কালের সময়ে একটি সূচক বৃদ্ধি ছিল লক্ষনীয়। এইসব ক্ষেত্রে, যৌন পাদদেশ ক্রীড়া একটি নিরাপদ যৌন-বিকল্প হিসাবে দেখা হয়েছে। যদিও, গবেষকরা সূচিত করেছেন যে এই মহামারীগুলি আপেক্ষিক নারী স্বাধীনতার সময়কাল অধিক্রমিত করেছে।[১১] আরেকটি আশঙ্কার বিষয় ছিল নারীর পায়ের উপর যৌন অধিশ্রয় হল যৌন-সামাজিক সম্পর্কে একটি মহিলার আরো প্রভাবশালী অবস্থানের প্রতিফলন। (পাদদেশ ভক্তিবস্তুর প্রথম জীবিত উল্লেখ হয় রেগেন্সবার্গ-এর বেরটল্ড দ্বারা ১৯২০ সালে।)[১২]

কারণ সম্পাদনা

স্নায়ুবিজ্ঞানী ভি এস রামচন্দ্রন উপস্থাপিত করেন যে পাদদেশ বস্তুকাম পায়ের পাতা দ্বারা সৃষ্টি হয় এবং জননেন্দ্রিয় যেহেতু সোমাটোসেনসরী কোর্টেক্স-এর সন্নিহিত এলাকা দখল করে রাখে, সম্ভবত এর ফলস্বরূপ দুটির মধ্যে কিছু স্নায়বীয় বার্তালাপ ঘটে।[১৩]

অতীতের উল্লেখযোগ্য পাদদেশ বস্তুকামী সম্পাদনা

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের নামের বর্ণানুক্রম তালিকা।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্রসমূহ সম্পাদনা

  1. Hickey, Eric W. (২০০৬)। Sex Crimes and ParaphiliaPearson Education। পৃষ্ঠা 165আইএসবিএন 9780131703506 
  2. Dobson, R. (25 February 2007). "Heels are the world's No 1 fetish." The Independent
  3. Cameron Kippen (২০০৪)। "The History of Footwear – Foot Sex"। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০০৭  অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  4. Scorolli C et al.(2007) "Relative prevalence of different fetishes" in: International Journal of Impotence Research advance online publication 15 February 2007; ডিওআই:10.1038/sj.ijir.3901547. http://www.nature.com/ijir/journal/v19/n4/abs/3901547a.html retrieved March 2007
  5. Dobson, Roger (2007) "Heels are the World's No. 1 Fetish." The Independent, http://news.independent.co.uk/sci_tech/article2303022.ece ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে, accessed 29 October 2007
  6. http://abcnews.go.com/Health/rex-ryans-foot-video-not-necessarily-unhealthy/story?id=12467617
  7. Robert Evans; May 24, 20125 Scientific Explanations for Your Sexual Perversions
  8. AOL's Accidental Release of Search Data – The Sexmind of America.
  9. JESSE BERING (07 June, 2012). "The Allure of "Podophilia": Why Some People Are Really Into Feet" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ মার্চ ২০১৩ তারিখে (FSG/Scientific American)
  10. AJ Giannini et al., op. cit.
  11. Giannini, AJ; Colapietro, G; Slaby, AE; Melemis, SM; Bowman, RK (১৯৯৮)। "Sexualization of the female foot as a response to sexually transmitted epidemics: a preliminary study"। Psychological reports83 (2): 491–8। পিএমআইডি 9819924 
  12. Coulton, G. C. (1923) Life in the Middle Ages. Cambridge: Cambridge University Press
  13. "Kringelbach, Morten. Bodily Illusions"। ১৭ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  14. "Shoes As a Muse"Elle। ২ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০০৮ 
  15. Alastair Sooke (৩০ জুলাই ২০০৭)। "Lifting the lid on Warhol's Time Capsules"। London, England: The Daily Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০০৮Warhol had a serious foot fetish... 
  16. "Feet first"The Times। London। ২০ মে ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২ এপ্রিল ২০১০ 
  17. Elvis[১], SF Gate, page 3
  18. Aynesworth, H & Michaud, SG page 36-37