পটকা মাছ বাংলাদেশের নদীতে সচরাচর পাওয়া যায়। এর সামুদ্রিক জ্ঞাতির নাম বেলুন মাছ। পটকা মাছের ৪টি বৈজ্ঞানিক নাম আছে যথা টেট্রোডন প্যাটোকা, শেলোনোডন প্যাটোকা [১], টেট্রোডন ডিসুটিডেনস্‌, এবং টেট্রোডন কাপ্পা[২] স্বগোত্রীয় টেপা মাছের বৈজ্ঞানিক নাম টেট্রাডন কুটকুটিয়া[৩] এতিহাসিকভাবে এটাকে গাঙ্গেয় জলজ প্রাণী হিসাবেই বর্ণনা করা হয়। [৪] পটকা মাছ জাপানে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সেদেশে দামি, সুস্বাদু ও অভিজাত শ্রেণির মাছ হিসাবে এর আলাদা কদর রয়েছে। পটকা মাছ তাদের ঐতিহ্যের অংশ।

Tetraodontidae
White-spotted puffer, Arothron hispidus
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
উপপর্ব: ভার্টিব্রাটা
শ্রেণী: অ্যাক্টিনোপটেরিজি
বর্গ: টেট্রাওডনটিফোরমেস
পরিবার: টেট্রাওডনটিডে
Genera

Arothron
Auriglobus
Canthigaster
Carinotetraodon
Chelonodon
Colomesus
Contusus
Ephippion
Feroxodon
Fugu
Gastrophysus
Javichthys
Lagocephalus
Liosaccus
Marilyna
Monotretus
Omegaphora
Pelagocephalus
Polyspina
Reicheltia
Sphoeroides
Takifugu
Tetractenos
Tetraodon
Torquigener
Tylerius
Xenopterus

বর্ণনা সম্পাদনা

এর দেহ প্রায় গোলাকার, মাথা চওড়া, দেহখণ্ডও চওড়া তবে লেজের ঠিক পূর্বে হঠাৎ সরু হয়ে গেছে। উপরিতল থেকে সামান্য নিচে মুখ, উভয় মাড়ীতে দুটি ছেদন দন্ত রয়েছে। এই ৪টি দাঁতের কারণেই এর বৈজ্ঞানিক নামে "টেট্রাডন" শব্দটি জুড়ে দেয়া হয়েছে। এ মাছ খেলে মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।

অবস্থান সম্পাদনা

বঙ্গোপসাগরের কাছে বিভিন্ন নদী মোহনায় পটকা মাছ খুব বেশি পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের নদীতে কম হলেও এ মাছটি সচরাচর লভ্য। তবে চীন, জাপান, ফিলিপিন্স, মেক্সিকোর আশেপাশের সমুদ্রেও দেখা মেলে এই অদ্ভুত মাছটির।

স্বভাব সম্পাদনা

এরা ঝাঁক বেঁধে চলতে পছন্দ করে। এই মাছ পানির ভেতর থেকে ডাঙায় অর্থাৎ মাটিতে তুলে আনা হলে, পেটের ভেতর বাতাস ঢুকিয়ে ফুটবল বানিয়ে ফেলে।

পটকা খেলে যা হয় সম্পাদনা

নিজের আকৃতি পরিবর্তনে সক্ষম এই মাছটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মাছটি দেখতে খুবই সুন্দর। তবে বিষাক্ত এই মাছ খেয়ে মারা গেছেন এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়।

বিষাক্ততার কারন সম্পাদনা

বাংলাদেশে এ মাছ ধরাও হয়, বিক্রিও হয়, খাওয়াও হয়। কিন্তু কীভাবে খেলে প্রাণ যাবে না, তা প্রায় কেউ জানেই না। এ মাছে রয়েছে ক্ষতিকারক টিটিএক্স (TTX) বা টেট্রোডোটোক্সিন (Tetrodotoxin) বিষ। বিষাক্ত পটকার চামড়া, যকৃত এবং ডিম্বাশয়ে সবচেয়ে বেশি বিষ থাকে। পটকার বিষ পটাশিয়াম সায়ানাইডের চেয়েও বেশি বিষাক্ত। প্রায় ১ হাজার ২০০ গুণ বেশি বিষাক্ত। একটি পটকা মাছের বিষে ৩০ জনের মৃত্যুও হতে পারে। [৫]


পটকা মাছের বিষক্রিয়া সম্পাদনা

পটকা মাছের বিষক্রিয়া সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে হয় না। কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকতে পারে আবার কারও কম থাকতে পারে। সে হিসেবে পটকা মাছ খাওয়ার ২০ মিনিট থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে বিষক্রিয়া শুরু হতে পারে। পটকা মাছ খাওয়ার পর পর নিচের উপসর্গগুলো দেখে বোঝা যাবে যে, তিনি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন কিনা- [৫]

  1. পটকা মাছ খেয়ে কিছুক্ষণ পর বিষক্রিয়ায় বমি হতে পারে বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
  2. মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা ও আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাবে।
  3. তলপেটে ব্যথা ও ডায়েরিয়া হতে পারে।
  4. শরীর অসাড় হয়ে পড়া, হাত ও পায়ের পেশি দুর্বল হয়ে নিষ্ক্রীয় হয়ে যেতে পারে।
  5. হাঁটা-চলার অক্ষমতা ও স্বাভাবিক চিন্তা প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
  6. কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে পারে।


প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পাদনা

সাধারণত এ মাছ খাওয়া বর্জন করাই সবার জন্য মঙ্গলজনক। তবে যদি কোনো কারণে কেউ মাছটি খেয়ে ফেলে এবং তার বিষক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে কী করবেন? নিম্নোক্ত উপায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারেন- [৫]

  1. যে কোন উপায়ে চেষ্টা করতে হবে বমি করানোর জন্য। এ ক্ষেত্রে গ্রামের অনেক মানুষ গোবর গুলিয়ে সে পানি রোগীকে খাইয়ে থাকেন। যাতে বমি আসে আর ভক্ষণ করা মাছ বা বিষ বেরিয়ে আসে।
  2. কাঠ কয়লা গুড়ো করে সরাসরি অথবা পানিরতে গুলে খাওয়াতে হবে। কাঠ কয়লা গুড়ো আর্ন্তজাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বিষক্রিয়া নিরাময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য হিসেবে স্বীকৃত।
  3. প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবে, যাতে বিষক্রিয়ার ফলাফল কমে আসে।
  4. চেষ্টা করতে হবে সজ্ঞান রাখার, কারণ জ্ঞান হারালে মস্তিষ্ক তার প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
  5. যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তারকে বলতে হবে লাইফ সাপোর্টে রাখতে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. এ কে আতাউর রহমানঃ ফ্রেশওয়াটার ফিশেয অব বাংলাদেশ, যুলযিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ২০০৫ (২য় সং), পৃঃ ৭০
  2. [১]
  3. এ কে আতাউর রহমানঃ ফ্রেশওয়াটার ফিশেয অব বাংলাদেশ, যুলযিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ২০০৫ (২য় সং), পৃঃ ৬৭
  4. এফ হ্যামিলটনঃ এন অ্যাকাউন্ট অফ ফিশেয ফাউন্ড ইন দ্য রিভার গ্যান্জেস এন্ড ইটস্‌ ব্রাঞ্চেস, প্রকাশকঃ আর্কিবল্ড কনস্ট্যাবল এন্ড কোম্পানী, এডিনবার্গ, ১৮২২, পৃঃ ৭।
  5. "এক পটকা মাছে ৩০ জনের মৃত্যু হতে পারে: গবেষণা"দেশরুপান্তর। ২০২০-১২-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১১ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা