নাগা মরিচ, মরিচের একটি প্রজাতি, যা প্রচণ্ড ঝালের কারণে সমধিক পরিচিত। অন্যান্য আরো বহু নামে পরিচিত হলেও কখনও কখনও কামরাঙা মরিচ, বোম্বাই মরিচ ইত্যাদি নামে পরিচিত। পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমে একে অনেক সময়ই, হয়তো ভুল করে[১], ভূত জলোকিয়া বা ভূত মরিচ বলা হয়ে থাকে এর প্রচণ্ড ঝালের কারণে।[২][৩][৪] স্কোভিল (Scoville: ঝাল পরিমাপের মানদণ্ড) অনুযায়ী এর মান ১০+++।

নাগা মরিচ (Naga jolokia chili)
তরতাজা নাগা মরিচ
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Asterids
বর্গ: Solanales
পরিবার: Solanaceae
গণ: Capsicum
প্রজাতি: C. chinense, C. frutescens
উপপ্রজাতি: C. c. cultivar Naga Jolokia
ত্রিপদী নাম
Capsicum chinense 'Naga Jolokia

নাগা মরিচ হলো এশিয়ার বাংলাদেশ এবং নিকটবর্তী ভারতের উত্তর-পূর্বাংশের আসাম রাজ্যের হাইব্রিড বা মিশ্র প্রজাতি।[৫][৬] এটি ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ডমণিপুরে, এবং বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে জন্মায়। এটি শ্রীলঙ্কার গ্রামাঞ্চলেও জন্মায়, যেখানে এটি নাই মিরিচ (Nai Mirris: Cobra Chilli) নামে পরিচিত। প্রথমদিকে এটা একটা সন্দেহ ছিলো যে, নাগা কি Capsicum frutescens[৭] নাকি Capsicum chinense মরিচ, কিন্তু পরবর্তিতে ডিএনএ পরীক্ষা নিশ্চিত করে যে, এটি একটি দ্বিপ্রজাতির মধ্যকার মিশ্র প্রজাতি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে C. chinense গোত্রের, যাতে কিছুটা C. frutescens জিন রয়েছে।[৮] ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস নাগা মরিচকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, যা টাবাসকো  সস (Tabasco sauce) থেকে ৪০১.৫ গুণ বেশি ঝাল।[৯] এবং এর থেকে আরো ঝাল ' ' ' Carolina Reaper ' ' '

বিভিন্ন নাম সম্পাদনা

বাংলাদেশে এই মরিচকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে। সিলেট অঞ্চলে একে নাগা মরিচ বলা হলেও ঢাকাসহ অন্যান্য অনেক স্থানে একে বোম্বাই মরিচ বা ফোটকা মরিচ বলা হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও এর নাম কামরাঙা মরিচ[১০]

ব্যবহার সম্পাদনা

নাগা মরিচ এর অনন্য ঘ্রাণ এবং ঝালের জন্য সমাদৃত। কাঁচা সবুজ পুষ্ট নাগা-মরিচ ঝালের জন্য খাবারের সাথে খাওয়া হয়ে থাকে। এমনকি রাস্তাঘাটে নানান ঝাল পদের খাবার যেমন মুড়ি, চানাচুর, ফুচকা ইত্যাদি তৈরি ও পরিবেশনে কুঁচি কুঁচি করে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও রান্না ও বেশ কিছু মুখরোচক খাবার, যেমন- আচারে এ মরিচ ব্যবহৃত হয়।

নাগা মরিচের পাকা দশার চেয়ে কাঁচা অবস্থায়ই খাওয়া হয়। কাঁচা অবস্থায় থাকা অনন্য ঘ্রাণ পাকলে পাওয়া যায় না, এবং ঝালের পরিমাণ অসহ্য হয়ে ওঠে। নাগা মরিচ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। মুখে ঘা হওয়া প্রতিরোধ করে থাকে এ মরিচ।

চাষ সম্পাদনা

সাধারণত নাগামরিচের চারা বাড়ির উঠোন, ঘরের কোণ, অথবা টবে রোপন করা হয়। লোকজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অল্প কয়েকটি গাছই যথেষ্ট। তবে বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে এর বাণিজ্যিক চাষও করা হয়ে থাকে। নাগামরিচ অন্যান্য ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। [১১] বেশ কিছু এলাকায় লেবু গাছের ফাঁকে ফাঁকে এ মরিচের চারা রোপন করে একসাথে চাষ করা হয়। শীত কিংবা গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমেই নাগামরিচের চাষ করা যায়। সঠিক পরিচর্যা পেলে একেকটি নাগা মরিচ গাছ থেকে পুরো মৌসুমে দুই শতাধিক পর্যন্ত মরিচ পাওয়া যায়।

বীজ থেকে গাছে ফলন আসতে আড়াই থেকে তিন মাস সময় প্রয়োজন হয় এ গাছের। বীজ বপনও সহজ। ১০-১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নরম ছায়াযুক্ত মাটিতে ফেললেই এর চারা গজিয়ে ওঠে। গাছে ফুল আসার ১৫ দিন পরেই মরিচ আহরণ করা যায় গাছ থেকে। গাছে বেশিদিন রাখলে ঝাল বেড়ে যায়। চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। মাটিতে পিএইচ এর মান ৫.৫-৭০ পর্যন্ত থাকা উচিত। [১২] তবে মরিচ গাছের জন্য ভাল সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। [১৩]

ডরসেট নাগা সম্পাদনা

ডরসেট নাগা বাংলাদেশের মূল নাগা মরিচের একটি উপজাত।[১৪] ২০০৭ সালে ডরসেট নাগার ঝালের মাত্রা সবুজ মরিচের ক্ষেত্রে ৬৬১,৪৫১ SHUs থেকে শুরু করে ২০০৯ সালে কাটা পাকা মরিচের ক্ষেত্রে ১,০৩২,৩১০ SHUs পর্যন্ত।[১৫] বিবিসির গার্ডেনার্স ওয়ার্ল্ড টেলিভিশন প্রোগ্রাম ডরসেট নাগার ঝালের মাত্রা পরিমাপ করে আরও অনেক বেশি পেয়েছে। বিবিসির গার্ডেনার্স ওয়ার্ল্ড টেলিভিশন প্রোগ্রাম ডরসেট নাগার জন্য তাপমাত্রা অনেক বেশি রেকর্ড করেছে। ২০০৬ প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে বিবিসির গার্ডেনিং দল ডরসেট নাগা সহ বেশ কয়েকটি মরিচের জাত নিয়ে একটি ট্রায়াল চালিয়েছিল। ঝালের মাত্রা পরিমাপ করেছিল ওয়ারউইক এইচআরআই, এবং ডরসেট নাগার ঝালের মাত্রা পাওয়া গেছিলো ১,৫৯৮,২২৭ SHUs যা ওই সময়ের অন্যতম সর্বোচ্চ ঝালের মাত্রা।[১৬][১৭]

 
ঢাকার একটি বৃক্ষ মেলায় টবে লাগানো বোম্বাই মরিচ

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "The Asian Age - Enjoy the difference"। www.asianage.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-২১ 
  2. "''Ghost Chili'' Scares Off Elephants"। News.nationalgeographic.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৪-১১ 
  3. http://news.google.com/newspapers?id=LJYeAAAAIBAJ&sjid=SIYEAAAAIBAJ&pg=6393,9014&dq=ghost-chili&hl=en
  4. Ritter, Peter (২০০৭-০২-২২)। "6,000 Years of Red Hot Chili Peppers"। TIME। ২০১০-১২-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৪-১১ 
  5. Shaline L. Lopez (২০০৭)। "NMSU is home to the world's hottest chile pepper"। ২০০৭-০২-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০২-২১ 
  6. "'Ghost chile' burns away stomach ills - Diet & Nutrition - MSNBC.com:"। Associated Press। ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৮-০৫ 
  7. Mathur R; ও অন্যান্য (২০০০)। "The hottest chile variety in India" (PDF)Current Science79 (3): 287–8। 
  8. Paul W. Bosland and Jit B. Baral (২০০৭)। "'Bhut Jolokia'—The World's Hottest Known Chile Pepper is a Putative Naturally Occurring Interspecific Hybrid" (পিডিএফ)Horticultural Science42 (2): 222–4। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. "New World Champ - The World's Hottest Chile Pepper"। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-২৯ 
  10. BonikBarta। "সীমানা ছাড়িয়ে সুগন্ধি নাগা মরিচ"সীমানা ছাড়িয়ে সুগন্ধি নাগা মরিচ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৯ 
  11. "শ্রীমঙ্গলের ৯৫ হেক্টর জমিতে নাগা মরিচ চাষ"banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৯ 
  12. Learning, Agriculture (২০২০-০৪-১৯)। "নাগা মরিচ চাষ পদ্ধতি (১ মাসেই ভালো ফলন পাওয়া যাবে)"Agriculturelearning (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৯ 
  13. "নাগা মরিচ চাষ পদ্ধতি, ফলন হবে ১ মাসেই"Nari Barta (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৮-২৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৯ 
  14. "Some Like It Hot: Dorset's Ultra-Hot Chillies"। ১৯ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১০ 
  15. "Dorset Naga"। Dorset Naga। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৭-২০ 
  16. "Some Like It Hot: Dorset's Ultra-Hot Chillies"। ১৯ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১০ 
  17. "Gardening: 20 October 2006"bbc.co.uk। London: BBC। ২০ অক্টোবর ২০০৬। Gardeners' World's hottest chillies। ১৭ জানুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১২