ধর্মপাশা উপজেলা

সুনামগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা

ধর্মপাশা বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা

ধর্মপাশা
উপজেলা
ধর্মপাশায় বাউলাই নদী
ধর্মপাশায় বাউলাই নদী
মানচিত্রে ধর্মপাশা উপজেলা
মানচিত্রে ধর্মপাশা উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৪′০″ উত্তর ৯১°১′০″ পূর্ব / ২৪.৯০০০০° উত্তর ৯১.০১৬৬৭° পূর্ব / 24.90000; 91.01667 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগসিলেট বিভাগ
জেলাসুনামগঞ্জ জেলা
আসন২২৪ সুনামগঞ্জ-০১
আয়তন
 • মোট৩১০ বর্গকিমি (১২০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[১]
 • মোট১,৯৭,৫৩৫
 • জনঘনত্ব৬৪০/বর্গকিমি (১,৭০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট২৬.৪%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড২৪৫০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৬০ ৯০ ৩২
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

অবস্থান ও আয়তন সম্পাদনা

আয়তন: ৪৯৬.০৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৭´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৬´ থেকে ৯১°১১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। এই উপজেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলাবারহাট্টা উপজেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলাজামালগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলামোহনগঞ্জ উপজেলা। এটি কংশ এর শাখা নদীর তীরে অবস্থিত।

প্রশাসনিক এলাকা সম্পাদনা

ধর্মপাশা উপজেলায় বর্তমানে ৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। [২]

ধর্মপাশা থানার আওতাধীন ৬টি ইউনিয়ন:

ইতিহাস সম্পাদনা

১৬৯১ সালের দিকে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে হুগলির মহামাণিক্য দত্ত আসামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। যাত্রাপথে তিনি কালিদহ নিম্নভূমির পাশ দিয়ে যান এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিস্মিত হন। ফলে তিনি বর্তমান ধর্মপাশায় সুখাইরে একটি জায়গির ক্রয় করেন। ১৬৯৫ সালে, জমিদার মোহনলাল সুখাইর জায়গিরের মধ্যে একটি বড় প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন এবং ২০টি জলাভূমির উপর তাদের কর্তৃত্ব ছিল। মাইয়ুক চৌধুরীর জমিদারির সময় একজন ইংরেজ অফিসার বাঘ শিকারের জন্য টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়েছিলেন। ইংরেজ অফিসার তিনটি বাঘের দ্বারা বন্দী হন এবং এই খবর জমিদারের কাছে পৌঁছলে তিনি বাঘকে মুক্ত করতে গুলি করে আইন ভঙ্গ করেন। চৌধুরীকে পরে তার পরিষেবার জন্য একটি বন্দুক দেওয়া হয়েছিল। দত্ত থেকে রাই-চৌধুরী পদবি পরিবর্তনের কারণ মলয় রায় চৌধুরী ব্যাখ্যা করেছেন যে তার পূর্বপুরুষদের মধ্যে একজন সুখাইরে আসার সময় একজন দাসকে বিয়ে করেছিলেন। মহামাণিক্য দত্তের চতুর্থ বংশধর প্রতাপ রায়-চৌধুরী ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নিকটবর্তী রাজাপুরের একটি উচ্চবিত্ত মুসলিম পরিবারের একজন মহিলাকে বিয়ে করেন। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে সুখাইরের জমিদারির অর্ধেক পেয়েছিলেন এবং পরে রাজাপুরের জমিদার হন। ১৭৮৭ সালে, লাউড়ের খাসিরা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তাদের অনেক পরগণা লুণ্ঠন করে (আধুনিক ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা, রামদিঘা এবং সেলবারাসসহ) এবং ৮০০ জনকে হত্যা করে। সিলেটের ব্রিটিশ কালেক্টর রবার্ট লিন্ডসে এই এলাকায় সৈন্য পাঠান কিন্তু তারা পৌঁছানোর আগেই খাসিরা তাদের পাহাড়ে ফিরে যায়। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন, একটি ভূমিকম্পের সময় এলাকাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যার ফলে অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। ১৯২২ এবং ১৯২৩ সালের মধ্যে, সুখাইর নানকার বিদ্রোহের একটি বিশিষ্ট এলাকা হয়ে ওঠে। সেলবরাস জমিদার পরিবারের গোলাম জিলানী চৌধুরী ১৯৩০-এর দশকে আশরাফুন্নেসা চৌধুরানীকে বিয়ে করেন। তাদের ছেলে, আহমদ তৌফিক চৌধুরী, আহমদিয়া আন্দোলনে যোগদান করেন যেখানে তিনি খুদ্দাম-উল আহমদিয়ার আঞ্চলিক নেতা হন এবং পরে ময়মনসিংহে চলে যান যেখানে তিনি স্বাধীনতার পর আহমদিয়া মুসলিম জামাত বাংলাদেশের আমীর হন। ১৯৪২ সালে ধর্মপাশায় একটি থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৭ সালে বিষরা গ্রামে এক রাতে গুটি বসন্তে ৫০ জন মারা যায়। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ধর্মপাশা থানাকে উপজেলায় (উপজেলা) উন্নীত করা হয়। তিন বছর পর ধর্মপাশা উপজেলায় মধ্যনগর থানা নামে একটি দ্বিতীয় থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২১ সালের ২৬ জুলাই, খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মধ্যনগর উপজেলা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন, যা কার্যকরভাবে ধর্মপাশা উপজেলাকে হ্রাস করে। ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের গাবী গ্রামের হাবীবুর রহমান নামে একজন শিক্ষাব্যাক্তিত্ব রয়েছেন। যিনি জীবনে বাদশাগঞ্জ,নেত্রকোনার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি লিখালিখির মাধ্যমে অবসর জীবনযাপন করছেন।

জনসংখ্যা সম্পাদনা

জনসংখ্যা ১৮২৯৬৯; পুরুষ ৯৫০০৯, মহিলা ৮৭৯৬০। মুসলিম ১৪৮৮১৪, হিন্দু ৩৩১০২, বৌদ্ধ ৯২১, খ্রিস্টান ৭ এবং অন্যান্য ১২৫।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সম্পাদনা

সুখাইর জমিদার বাড়ি ও কালীমন্দির, রাজাপুর জমিদার বাড়ি, সেলবরষ জামে মসজিদ ও মহিষখলা কালীমন্দির উল্লেখযোগ্য।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সম্পাদনা

১৭৮৭ সালে আসামের দুর্ধর্ষ খাসিয়ারা এ উপজেলার সেলবরষ, রামদীঘা ও বংশীকুন্ডা পরগনায় আক্রমণ চালিয়ে বহুলোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ১৯২২-২৩ সালে সুখাইরে নানকার বিদ্রোহ সংঘঠিত হয়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পাদনা

মসজিদ ১৯২, মন্দির ১৭, গির্জা ৩, তীর্থস্থান ১।

শিক্ষা সম্পাদনা

গড় হার ২৬.৪%; পুরুষ ২৯.৬%, মহিলা ২৩.০%। এই উপজেলায় বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলো হলো-

  1. ধর্মপাশা সরকারি ডিগ্রী কলেজ
  2. ধর্মপাশা জনতা উচ্চ বিদ্যালয়
  3. ধর্মপাশা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
  4. ধর্মপাশা খয়েদ্বীচর দাখিল মাদ্রাসা
  5. বাদশাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ
  6. বাদশাগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
  7. গাবী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

স্বাস্থ্য সম্পাদনা

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৩.৫৪%, পুকুর ৫.২৫%, ট্যাপ ১.০২% এবং অন্যান্য ১০.১৯%। উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮.৫৬% (গ্রামে ৬.৯৮% ও শহরে ৩৬.৮৭%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭৬.৩৫% (গ্রামে ৭৭.৫৬% ও শহরে ৫৪.৬০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৫.০৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই। স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫।

অর্থনীতি সম্পাদনা

ধর্মপাশা উপজেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া এখান থেকে সারাদেশে মাছ সরবরাহ করা হয় এবং বিদেশেও মাছ রপ্তানি করা হয়। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৯.১০%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৫%, শিল্প ০.২৮%, ব্যবসা ৭.৩৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৭৭%, চাকরি ২.০৭%, নির্মাণ ০.২৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৪% এবং অন্যান্য ৫.৫৬%। কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.১৩%, ভূমিহীন ৪১.৮৭%। শহরে ৪৭.১৯% এবং গ্রামে ৫৮.৭৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে। প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, সরিষা, শাকসবজি। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, গম, মিষ্টি আলু, ছোলা, কাউন, খেসারি। প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, আতা, বেল, তরমুজ।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সম্পাদনা

সাহিত্য পত্রিকা: সাঁকো, প্রাণের হিসাব (অবলুপ্ত)। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান- লাইব্রেরি ২, ক্লাব ৩০০, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ১০০, খেলার মাঠ ১৫।

দর্শনীয় স্থান সম্পাদনা

টাঙ্গুয়ার হাওড়, টেকেরঘাট চুনা পাথরের পাহাড় ও নিলাদ্রীলেক ইন্ডিয়া বর্ডার।

জলাশয় সম্পাদনা

প্রধান নদী: সুরমা। টাঙ্গুয়ার হাওর, শিয়ালদিয়া বিল, পাকেরতলা বিল, ফিরাগাঙ বিল, ধরণি বিল, জালধরা বিল, ধনকুনিয়া বিল, সারদা বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পাদনা

১৮৯৭ সালে এ উপজেলায় এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে বহুলোকের প্রাণহানি ঘটে ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯৬৭ সালে উপজেলার বিশারা গ্রামে গুটিবসন্তে এক রাতে ৫০ জন লোক প্রাণ হারায়। এছাড়া ১৯৭৪ ও ১৯৮৮ সালের বন্যা এবং ২০০৪ সালের সুনামিতে ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব সম্পাদনা

বিবিধ সম্পাদনা

হাটবাজার ১৪, মেলা ১০। ধর্মপাশা, মধ্যনগর, বাদশাগঞ্জ, গাছতলা, সৈয়দপুর, চামরদানী, বংশীকুন্ডা, মহিষখলা, গোলগাঁও, সুখাইর, নতুন বাজার, গোলকপুর, জয়শ্রী এবং মহিষখলা ও কাহালা গ্রামের কালীপূজার মেলা, রামদিঘা ও গলইখালীর শিবমেলা উল্লেখযোগ্য।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে ধর্মপাশা উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১২ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫ 
  2. "ইউনিয়নসমূহ - ধর্মপাশা উপজেলা"dharmapasha.sunamganj.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ২৫ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা