দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়

ভারতীয় বাঙালি কণ্ঠশিল্পী

দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় (১২ই নভেম্বর ১৯২৭ — ২৪শে ডিসেম্বর ২০১৮) ছিলেন একজন ভারতীয় সুরকার ও গায়ক, যাঁর সংগীতজীবন ছয় দশক ধরে বিস্তৃত। তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত, বাংলা মৌলিক গান এবং বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের গানের দক্ষ শিল্পী ছিলেন। তিনি ১৫০০ এরও বেশি গান রেকর্ড করেছেন, যার মধ্যে প্রায় ৮০০ টি রবি ঠাকুরের গান। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্র সংগীতের জন্য ভারত সরকারের সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি অনেক বাংলা চলচ্চিত্রতে সংগীত পরিচালনা করেছিলেন এবং জনপ্রিয় বাংলা মৌলিক গানে সুর সংযোজন করেছিলেন। ২০১৮ সালের ২৪শে ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়।

দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়
জন্ম(১৯২৭-১১-১২)১২ নভেম্বর ১৯২৭[১]
উদ্ভবভারত
মৃত্যু২৪ ডিসেম্বর ২০১৮(2018-12-24) (বয়স ৯১)
ধরনবাংলা
পেশাসুরকার, গায়ক

প্রাথমিক দিনগুলি সম্পাদনা

১৯৪৪ সালে, দ্বিজেনবাবু পেশাদার গায়ক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। ১৯৪৫ সালে তিনি মেগাফোন রেকর্ড সংস্থা থেকে প্রথম বাংলা গানের রেকর্ডিং করেছিলেন। ১৯৪৬ সাল তার জন্য অত্যন্ত ঘটনাবহুল ছিল, কারণ সেই বছর, তিনি যে কেবল আকাশবাণী (অল ইন্ডিয়া রেডিও)র (এআইআর) শিল্পী হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন তাই নয়, এইচএমভি - কলম্বিয়া রেকর্ডিং সংস্থার সাথে রেকর্ডিংও শুরু করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে, তিনি লাদাখে গিয়ে ভারতীয় সৈনিকদের গান শুনিয়ে আনন্দ দিয়েছিলেন।[২]

তিনি শ্রী সুশান্ত লাহিড়ী, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, শান্তিদেব ঘোষ, সন্তোষ সেনগুপ্ত, অনাদি ঘোষ দস্তিদার ও নীহারবিন্দু সেন সহ সংগীত বঙ্গের বিশিষ্ট শিল্পীদের কাছে সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন।[২]

পেশা হিসাবে সংগীতজীবন সম্পাদনা

মুখোপাধ্যায়কে বাংলা এবং হিন্দি চলচ্চিত্র সংগীতের সাথে পরিচয় করিয়েছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র-সংগীত সুরকার সলিল চৌধুরী। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় এবং সলিল চৌধুরীর মধ্যে বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিল চল্লিশের দশকের শেষের দিকে, আইপিটিএ তে তাঁদের যাতায়াতের মধ্য দিয়ে।[৩] এই জুটি বাঙালি শ্রোতাকে "শ্যামল বরণী ওগো কন্যা", " ক্লান্তি নামে গো ", " একদিন ফিরে যাব চলে ", " পল্লবিনী গো সঞ্চারিনী " এবং এইরকম আরো অনেক গান উপহার দিয়েছিলেন। তারা মাইকেল মধুসূদন দত্তের দুটি কবিতা ("রেখো মা দাসের মনে", "আশার ছলনে ভুলি") নিয়ে কাজ করেছিলেন এবং বিরল এবং সুন্দর সুর শুনিয়েছিলেন। পরে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় মুম্বই গিয়েছিলেন সলিল চৌধুরীর সাথে কাজ করার জন্য। সেখানে তিনি 'হানিমুন' (১৯৬০), 'মায়া' (১৯৬১), 'সপন সুহানে' (১৯৬১) এর মতো হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য লতা মঙ্গেশকরের সাথে দ্বৈত সংগীত গেয়েছিলেন এবং 'মধুমতী' চলচ্চিত্রে এককভাবে নেপথ্য সঙ্গীত গেয়েছিলেন।[২]

তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এক গায়ক ছিলেন। তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের ভাষান্তর করেছিলেন, তারঁ গান শুনে বাংলাএবং এর বাইরের মানুষেরাও রবীন্দ্রসঙ্গীতের শ্রোতা হয়ে গিয়েছিল। তিনি প্রখ্যাত বাংলা ছায়াছবিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন, এর মধ্যে ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ছোট গল্প 'ক্ষুধিত পাষাণ' (১৯৬০)। এছাড়া 'সন্ধ্যা রাগ' (১৯৭৭) ছবির জন্যেও তিনি গান গেয়েছিলেন। দুটি ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন যথাক্রমে বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ এবং পণ্ডিত রবিশঙ্কর

মুখোপাধ্যায় 'মহিষাসুর মর্দিনী' (দানবের ধ্বংস) সঙ্গীতনাটকের অংশ হিসাবে বিখ্যাত ভক্তিমূলক গান 'জাগো দুর্গা' পরিবেশন করেছিলেন। এটি আকাশবাণী (অল ইন্ডিয়া রেডিও) (এআইআর), কলকাতা দ্বারা প্রচারিত একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বেতার অনুষ্ঠান। প্রতি বছর 'মহালয়া'র শুভ দিনে বিখ্যাত শারদীয় উৎসব 'দুর্গাপূজা'র সূচনা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হয়। গত ৬০ বছর ধরে অসাধারণ জনপ্রিয়তার সাথে, এটি সমগ্র পৃথিবীতে, বাংলাভাষাভাষী সম্প্রদায়ের পরিচায়ক সুর হিসেবে স্বীকৃত এবং ভোর ৪টেতে জেগে উঠে বাঙালি দেবী দুর্গাকে এই চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে স্বাগত জানায়।[৪]

তিনি অন্যদের মধ্যে, মার্শাল জোসিপ ব্রজ টিটো (যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রপতি), সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ (ভারতের রাষ্ট্রপতি), পণ্ডিত জওহরলাল নেহ্‌রু (ভারতের প্রধানমন্ত্রী), ইন্দিরা গান্ধী (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সামনে গান গেয়েছিলেন। 'ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি'র সদস্য হিসাবে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহ যেমন পোল্যান্ড, রোমানিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, এবং যুগোস্লাভিয়া সফর করেছিলেন।

পুরস্কার সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Dwijen Mukhopadhyay's 84th birthday celebrated
  2. "Dwijen Mukherjee"। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  3. "Dwijen Mukherjee"salilda.com 
  4. "Mahalaya: Why Bengal Wakes Up at 4am to Welcome Goddess Durga with Chandipath"। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  5. Dwijen Mukherjee in Sangeet Natak Academy