টেলিভিশন

এমন একটি যন্ত্র যা থেকে একই সঙ্গে ছবি দেখা ও শব্দ শোনা যায়

টেলিভিশন (সংক্ষেপে টিভি) এমন একটি যন্ত্র যা থেকে একই সঙ্গে ছবি দেখা যায় এবং শব্দও শোনা যায়। টেলিভিশন শব্দটি ইংরেজি থেকে এসেছে, মূলতঃ প্রাচীন গ্রিক শব্দ "τῆλε" (ত্যালে অর্থাৎ "দূর") এবং লাতিন শব্দ "Vision" (ভ়িসিওন্‌, অর্থাৎ "দর্শন") মিলিয়ে তৈরি হয়ে। তাই টেলিভিশনকে বাংলায় কখনও দূরদর্শন যন্ত্র বা সংক্ষেপে দূরদর্শন বলা হয়।

ব্রন এইচএফ ওয়ান, জার্মানি, ১৯৫৯
Clivia II FER858A (জার্মানি), ১৯৫৬

আবিষ্কার সম্পাদনা

গ্রিক শব্দ 'টেলি' অর্থ দূরত্ব , আর ল্যাটিন শব্দ 'ভিশন' অর্থ দেখা। ১৮৬২ সালে তারের মাধ্যমে প্রথম স্থির ছবি পাঠানো সম্ভব হয়। এরপর ১৮৭৩ সালে বিজ্ঞানী মে ও স্মিথ ইলেকট্রনিক সিগনালের মাধ্যমে ছবি পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ব্রিটিশবিজ্ঞানী জন লগি বেয়ার্ড ১৯২৬ সালে প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কার করেন এবং সাদা কালো ছবি দূরে বৈদ্যুতিক সম্প্রচারে পাঠাতে সক্ষম হন। এর পর রুশ বংশোদ্ভুত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবারগের কৃতিত্বে ১৯৩৬ সালে প্রথম টিভি সম্প্রচার শুরু করে বিবিসি। টেলিভিশন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু হয় ১৯৪০ সালে। অতপর ১৯৪৫ সালে যন্ত্রটি পূর্ণতা লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়। গত শতাব্দীর ৫০ এর দশকে টেলিভিশন গনমাধ্যমের ভূমিকায় উঠে আসে।

সম্প্রচার কৌশল সম্পাদনা

টেলিভিশনের মূল ধারণা হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে ট্রান্সমিট করা। মূলত তিনটি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সৃষ্ট হয় টেলিভিশনের আউটপুট : টিভি ক্যামেরা যার কাজ হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় সংকেতে রূপান্তর করা, টিভি ট্রান্সমিটার যার কাজ হচ্ছে এই সংকেতকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করা এবং টিভি সেট (রিসিভার) যার কাজ হচ্ছে এই সংকেত গ্রহণ করে তাকে আগের ছবি ও শব্দে রুপান্তরিত করা। সাধারনত ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়: স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র। স্থিরচিত্রের জন্য সাধারণ ক্যামেরা ও চলচ্চিত্রের জন্য মুভি/ভিডিও ক্যামেরার ব্যবহার হয়। প্রকৃতপক্ষে অনেকগুলো স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় চলচ্চিত্র। ভিডিও ক্যামেরা দ্রুত গতিতে পরপর অনেকগুলো স্থিরচিত্র (২৪ ছবি/সে) গ্রহণ করে। এই ছবিগুলোকে যখন একই গতিতে পরপর প্রদর্শন করা হয় তখন আমাদের চোখে এগুলো চলচ্চিত্র বলে মনে করে। ফ্রেমে এই দ্রুতগতিতে ছবি পরিবর্তনের কারগরি কৌশলটি আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। চলচ্চিত্রকে খুবই ধীর গতিতে দেখলে এইসব স্থিরচিত্রগুলোকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। অ্যানালগ টিভি ক্যামেরা এইসব ছবির পিক্সেলকে সাধারনত ৫২৫টি লাইনে ভাগ করে লাইন বাই লাইন বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করে। একইসাথে শব্দ তরঙ্গকে আলাদা সিগনালের মাধ্যমে প্রেরণ করে। ছবি ও শব্দের সিগনাল অ্যান্টেনা/কেবল/স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টিভি গ্রহণ করে বিশেষ পদ্ধতিতে আবার ছবি ও শব্দে রুপান্তরিত করে। টেলিভিশন হতে গামা রশ্মি নির্গত হয়।

টেলিভিশনের শ্রেণিবিভাগ সম্পাদনা

ডিসপ্লে বা প্রদর্শনীর প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে টেলিভিশনকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। যেমন : সিআরটি (CRT), প্লাজমা (Plasma), এলসিডি (LCD), এলইডি (LED) ইত্যাদি। সম্প্রচার থেকে প্রদর্শন পর্যন্ত টেলিভিশনের সম্পূর্ণ পদ্ধতিকে আবার তিনভাগে ভাগ করা যায় : এনালগ টেলিভিশন (সনাতন পদ্ধতি), ডিজিটাল টেলিভিশন (DTV) ও এইচডিটিভি (HDTV)।

এনালগ টেলিভিশন সম্পাদনা

এনালগ তথা সনাতন টিভি পদ্ধতি অর্থাৎ টিভি ক্যামেরা, ট্রান্সমিটিং সিস্টেম এবং টিভিসেট সবগুলোই কাজ করে এনালগ পদ্ধতিতে। এ ধরনের টিভিতে PAL স্ট্যান্ডার্ড ছবির পিক্সেল হয় মাত্র (720×576) 414,720 এবং ছবির aspect ratio 4 : 3 যার অর্থ স্ক্রীনে ছবির সাইজ ৪ একক প্রশস্ত ও ৩ একক উচ্চতার। অর্থাৎ ২৫ ইঞ্চি ডায়াগোনাল টিভি স্ক্রীনে ২০×১৫ ইঞ্চি হবে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা