টিক্কা খান

পাকিস্তানি জেনারেল

টিক্কা খান (উর্দু: ٹکا خان) (জন্ম ফেব্রুয়ারি ১০,১৯১৫ - মৃত্যু মার্চ ২৮, ২০০২) মার্চ ১৯৭২ থেকে মার্চ ১৯৭৬ পর্যন্ত পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে অপারেশন সার্চলাইট চলার সময় তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক ছিলেন। টিক্কা খান বৃটিশ ভারতীয় সামরিক একাডেমি, দেহরাদুন থেকে ১৯৩৫ সালে কমিশন লাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বার্মাভারতের বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধে সক্রিয় হন। এ সময় দুই বছরেরও অধিক সময় টিক্কা খান যুদ্ধবন্দী থাকার পর পলায়নে সক্ষম হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টিক্কা খান দেরাদুনে সামরিক একাডেমিতে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভারত বিভাগের সময় মেজর পদে টিক্কা খান পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন।

টিক্কা খান
ٹِکّا خان
পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্নর
কাজের মেয়াদ
৯ ডিসেম্বর ১৯৮৮ – ৬ আগস্ট ১৯৯০
রাষ্ট্রপতিগোলাম ইশক খান
প্রধানমন্ত্রীবেনজির ভুট্টো
পূর্বসূরীসাজ্জাদ হোসেন কোরেশী
উত্তরসূরীমিয়া মহাম্মাদ আজাহার
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা
কাজের মেয়াদ
১ মার্চ ১৯৭৬ – ৪ জুলাই ১৯৭৭
রাষ্ট্রপতিফজল ইলাহী চৌধুরী
প্রধানমন্ত্রীজুলফিকার আলী ভুট্টো
পূর্বসূরীগোলাম ওমর
উত্তরসূরীমেজর জেনারেল (অব.) রাও ফরমান আলী
সেনাবাহিনী প্রধান (পাকিস্তান)
কাজের মেয়াদ
৩ মার্চ ১৯৭২ – ১ মার্চ ১৯৭৬
পূর্বসূরীলেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান খান
(পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে)
উত্তরসূরীজেনারেল জিয়াউল হক
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর
কাজের মেয়াদ
৬ এপ্রিল ১৯৭১ – ৩১ আগস্ট ১৯৭১
রাষ্ট্রপতিইয়াহিয়া খান
পূর্বসূরীলেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান
উত্তরসূরীআব্দুল মোতালেব মালিক
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মটিক্কা খান
(১৯১৫-০২-১০)১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১৫[১]
কল্লর সায়েদা, রাওয়ালপিন্ডি জেলা, পাঞ্জাব, পাকিস্তান
মৃত্যু২৮ মার্চ ২০০২(2002-03-28) (বয়স ৮৭)
রাওয়ালপিন্ডি
সমাধিস্থলওয়েস্টরিজ গোরস্থান, রাওয়ালপিন্ডি
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয় (১৯১৫-২০০২)
পাকিস্তান (১৯৪৭–২০০২)
রাজনৈতিক দলপাকিস্তান পিপলস পার্টি (১৯৭৬-১৯৯০)
বেসামরিক পুরস্কার হিলাল-ই-কায়েদে আজম
সিতারা-ই-পাকিস্তান
হিলাল-ই-ইমতিয়াজ
সামরিক পরিষেবা
ডাকনাম'বাংলাদেশের কসাই'[২]
শাখা ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী (১৯৩৫-১৯৪৭)
 পাকিস্তান সেনাবাহিনী (১৯৪৭-১৯৭৬)
কাজের মেয়াদ১৯৩৫-১৯৭৬
পদ জেনারেল
ইউনিট২য় ফিল্ড রেজিমেন্ট, গোলন্দাজ বাহিনী
কমান্ডইস্টার্ন কমান্ড
৪র্থ কোর
২য় কোর
৮ম পদাতিক ডিভিশন, রান অব কচ্ছ
১৫ পদাতিক ডিভিশন, শিয়ালকট
যুদ্ধদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫
সামরিক পুরস্কার হিলাল-ই-জুরাত (এইচজে)
সার্ভিস নম্বরপিএ-১২৪

সামরিক জীবন সম্পাদনা

টিক্কা ১৯৩৫ সালে ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন পান। ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ রেজিমেন্টে তিনি ২য় লেফটেন্যান্ট হয়েছিলেন। বিভিন্ন ফিল্ড রেজিমেন্টে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা অভিযানেও তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার সময় তার পদবি ছিলো মেজর।

স্বাধীন পাকিস্তানে নবগঠিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ রেজিমেন্টে টিক্কা বিভিন্ন ফিল্ড গোলন্দাজ রেজিমেন্টে বদলী হন, এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে দুটি গোলন্দাজ রেজিমেন্টের অধিনায়কত্বও করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ব্রিগেডিয়ার হন এবং সেনা সদরে বদলি হন, এরপর গোলন্দাজ ব্রিগেডের অধিনায়কত্ব এবং ১ কোর সদর দপ্তরে স্টাফ কর্মকর্তা হিসেবে বদলি হন; মেজর জেনারেল হন ১৯৬২ সালে, এবং একটি ডিভিশনের অধিনায়ক হন, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫তে টিক্কা ছিলেন ৮ম ডিভিশনের অধিনায়ক, এরপর ১৯৬৬ সালে তিনি ১৫তম ডিভিশনের অধিনায়ক হন। এরপর তিনি সেনা সদরে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হন এবং ১৯৬৯ সালে তাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান এবং টিক্কা ৪র্থ কোরের অধিনায়ক হন।

১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত টিক্কা ৪র্থ কোরের অধিনায়ক ছিলেন, এরপর তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকাস্থিত পূর্বাঞ্চলীয় সেনাদল (বা ইংরেজিতে ইস্টার্ন কমান্ড)-এ অধিনায়ক হিসেবে বদলি হন; যদিও এখান থেকে খুব দ্রুত তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে ২য় কোর-এর অধিনায়ক হিসেবে বদলি হন; ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ তারিখে তিনি পূর্ণ জেনারেল পদে উন্নীত হন এবং সেনাপ্রধান হন।

বাংলাদেশে ও বেলুচিস্তানে নিষ্ঠুর ভূমিকা সম্পাদনা

টিক্কা খান ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান সামরিক শাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বালুচিস্তানের মত নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালিদের ওপরও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর সামরিক হামলা পরিচালনা করেন, যেজন্য তাকে "বাংলাদেশের কসাই" বলা হয়।[৩][৪][৫] ১৯৭৩ সালে নিষ্ঠুরতার সাথে বালুচিস্তানে বিদ্রোহ দমনের নামে হত্যাযজ্ঞ চালনার জন্য "বেলুচিস্তানের কসাই" হিসেবে টিক্কা খান কুখ্যাতি অর্জন করেন।[৬][৭][৮]

অবসর সম্পাদনা

১৯৭৬ সালে অবসর গ্রহণের পর পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো সরকার টিক্কা খানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়। জেনারেল জিয়াউল হকের অবৈধ ক্ষমতাগ্রহণের সময়[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ভূট্টো ও টিক্কা, দু'জনকেই বন্দী করা হয়। ১৯৭৯ সালে ভূট্টোকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পর টিক্কা খান পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এর মহাসচিব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৮৮ সালে বাহাওয়ালপুর বিমানধ্বসে জিয়াউল হকের মৃত্যুর পর টিক্কা খান পাঞ্জাবের রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। ১৯৯০ সালে বেনজির ভূট্টোর সরকারের পতনের পর টিক্কা খান অবসর গ্রহণ করেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

দীর্ঘদিন রোগভোগের পর ২০০২ সালে টিক্কা খান মারা যান।

সূত্র সম্পাদনা

  1. General Tikka Khan's Headstone (Headstone in graveyard)। Army Graveyard, Rawalpindi, Pakistan। ২০১১। 
  2. "Gen. Tikka Khan, 87; 'Butcher of Bengal' Led Pakistani Army"Los Angeles Times। ৩০ মার্চ ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৭ 
  3. Butcher Of Bengal- Gen. Tikka Khan, 87; 'Butcher of Bengal' Led Pakistani Army - Los Angeles Times
  4. BBC News | SOUTH ASIA | Pakistan's 'Butcher of Bengal' dies
  5. 'Butcher of Bengal' dies - CNN[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. Lionel Baixas (২০০৮-০৬-২১)। "Khan (1917-2002), General Tikka"। Online Encyclopedia of Mass Violence। ২০১৩-১২-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-১৭ 
  7. Aurangzaib Alamgir (2012 Nov/Dec)। "Pakistan's Balochistan Problem: An Insurgency's Rebirth"। World Affairs। ২০১৩-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2013-07-17  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  8. Col (retd) Anil Athale (২০০৬-০৮-২৯)। "Is Balochistan another Bangladesh?"। Rediff India Abroad। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৭-১৭ 
  • দ্য সেপারেশন অব ইস্ট পাকিস্তান,হাসান জহির, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৪।
  • উইটনেস টু সারেন্ডার, সিদ্দিক সালিক, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৭৭।