জাগের গান

ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও অসম এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রে প্রচলিত একপ্রকার লোকসংগীত

জাগের গান ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গঅসম এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রে প্রচলিত একপ্রকার লোকসংগীত। অসমের ধুবড়ি জেলা, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িকোচবিহার জেলা এবং বাংলাদেশের দিনাজপুররংপুর জেলায় এই গান শোনা যায়। চৈত্রমাসে মদনচতুর্দশী উপলক্ষে জাগের গান প্রচলিত। জাগের গান মূলত দুই প্রকার – কৃষ্ণলীলা বিষয়ক কানাই-ধামালী ও অশ্লীল আদিরসাত্মক মোটাজাগের গান। এছাড়াও বীররসাত্মক গানও কখনও কখনও গাওয়া হয়ে থাকে।

বাংলা-এর সঙ্গীত
বাউল, বাংলার আধ্যাত্মিক গান
ধরন
নির্দিষ্ট ধরন
ধর্মীয় সঙ্গীত
জাতিগত সঙ্গীত
ঐতিহ্যবাহি সঙ্গীত
মিডিয়া এবং কর্মক্ষমতা
সঙ্গীত মিডিয়াবেতার

টেলিভিশন

ইন্টারনেট

উৎসব সম্পাদনা

জাগের গান উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ফাল্গুন মাসের মদন চতুর্দশী উপলক্ষে। কোনো কোনো অঞ্চলে এই উৎসব চৈত্র মাসের শুক্ল ত্রয়োদশী তিথিতেও উদযাপিত হয়ে থাকে। মাসাধিক কাল ধরে চলে এই উৎসব। ছেলেরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে মাগন করে ও গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে।

চৈত্র শুক্ল ত্রয়োদশী তিথিতে পুষ্পিত অশোকবৃক্ষের মূলে কামদেবের পূজা ও চামর ব্যজন করার শাস্ত্রীয় বিধান রয়েছে। উত্তরবঙ্গের অনেক ভদ্র পরিবারে এই কামপূজা অনুষ্ঠিত হয়। বাড়ির বাইরে দুই-তিনটি বাঁশের টুকরো মাটিতে পুতে, দুই-তিনটি দীর্ঘ কাপড়ে জড়ানো বাঁশের টুকরোর আগায় চামর দিয়ে সেই পোতা বাঁশের সঙ্গে বেঁধে কামপূজা করা হয়। রাজবংশীরাও এই কামপূজায় অংশ নেন। তবে তারা লোকালয় থেকে একটু দূরে কোনো মাঠে গিয়ে এই পূজা করেন। পূজা উপলক্ষে গীত হয় জাগের গান।

নামকরণ সম্পাদনা

জাগের গান গাওয়ার সময় মূল গায়ক হাতে চামর ধরে গান করেন এবং দোয়াররা মন্দিরা বাজিয়ে ধুয়ো ধরেন। এই গানের দ্বারা কামকে জাগরিত করা হয় বলে এর নাম জাগের গান।

প্রকারভেদ সম্পাদনা

জাগের গান মূলত তিন প্রকার।

  • মোটাজাগ
  • কানাই ধামালী বা লীলা জাগ
  • বীররসাত্মক

মোটাজাগ সম্পাদনা

মোটাজাগ অশ্লীল আদিরসাত্মক গান। তাই এই গান কারোর বাড়িতে গীত হয়না। হয় মাঠে ঘাটে। তবে জাগের গানে এই ধরনের আদিরসাত্মক গানের প্রাধান্য বিশেষভাবে লক্ষিত হয়।

কানাই ধামলী বা লীলা জাগ সম্পাদনা

কানাই ধামালী বা লীলা জাগ রাধা-কৃষ্ণের লীলা বিষয়ক গান। তবে এই লীলাগান সম্পূর্ণ লোককবিদের নিজস্ব কল্পনা। এর সঙ্গে পৌরাণিক রাধাকৃষ্ণ কাহিনির যোগ বড় একটা নেই। পালার আকারে এই গানগুলি রচিত হত। দুইজন বালককে রাধা ও কৃষ্ণ এবং একজন প্রৌঢ় ব্যক্তিকে বড়ায়ি সাজিয়ে এগুলি অভিনীতও হত। পণ্ডিতরাজ নামক জনৈক সংগ্রাহক তার পালা সংকলনে এগুলিকে রতিরাম নামক জনৈক কবির রচনা বলে উল্লেখ করেছেন। তবে সুশীলকুমার ভট্টাচার্য এই পালাগুলির রচনাবৈষম্য পর্যবেক্ষণ করে এগুলি একাধিক কবির রচনা বলে মতপ্রকাশ করেছেন। এগুলির বিষয়বৈচিত্রেও স্বতন্ত্র। “রাধার শাক তোলা” বা “কৃষ্ণের ধোরে মাছ তোলা” প্রভৃতি অভিনব বিষয় এই সব পালায় দেখা যায়। এগুলিকে সম্পূর্ণ অশ্লীলতাদোষমুক্ত বলা চলে না। তবে মোটা জাগের তুলনায় অনেক সংযত ও মার্জিত।

বীররসাত্মক সম্পাদনা

সুশীলকুমার ভট্টাচার্য এক জমিদারের পৌরুষবর্ণনাত্মক একটি বীররসাত্মক গান সংগ্রহ করেছেন। গানটি এইরূপ

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  • প্রবন্ধ উত্তরবঙ্গের জাগের গান : সুশীলকুমার ভট্টাচার্য ;

স্বদেশচর্চা লোক পত্রিকা ; আশ্বিন, ১৪১৫, (অক্টোবর, ২০০৮) ; বিষয় গ্রামীণ বিনোদন সেকাল ও একাল ; সম্পাদক : প্রণব সরকার, সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিমবঙ্গ