জলঘড়ি (ইংরেজি ভাষায়: Water clock, অন্য নাম: Clepsydra) জলের প্রবাহের উপর ভিত্তি করে তৈরি এক ধরনের প্রাচীন যন্ত্র যা দিয়ে সময় পরিমাপ করা হতো। উত্তর আমেরিকা এবং আফ্রিকার আদিবাসীরা অবশ্য এক সময় জলপূর্ণ নৌকা দিয়ে সময় পরিমাপ করতো। নৌকায় একটা ফুটো থাকতো, ফুটো দিয়ে জল বের হতে হতে কখন নৌকাটি ডুবে যায় তারা তারই প্রতীক্ষা করতো। তবে সবচেয়ে সাধারণ জলঘড়ি তৈরি হয় একটি জলপূর্ণ পাত্র দিয়ে। পাত্রের ছিদ্র দিয়ে জল বের হতে দেয়া হয় এবং পাত্রের ভেতরের গায়ে চিহ্নিত দাগ থেকে বোঝা যায় জল কতটুকু কমছে। জলের স্তরের মাধ্যমেই সময় নির্ধারিত হয়। এর উদ্ভাবক সম্ভবত প্রাচীন মেসোপোটেমিয়া সভ্যতার সুমেরীয়দের। প্রাচীন মিশরে খ্রিস্টপূর্ব ১৪ শতাব্দীতেও জলঘড়ি নির্মিত হতো বলে ধারণা করা হয়।

গ্রিসের এথেন্সে অবস্থিত প্রাচীন আগোরা জাদুঘরে প্রদর্শিত একটি দুই পাত্রবিশিষ্ট জলঘড়ি। উপরের পাত্রটি ৫ম শতাব্দীর মূল সংস্করণ। নিচেরটি প্রাচীন মডেল অনুযায়ী পুনর্নির্মিত।

তৃতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্দ্রিয়ার গ্রিক প্রকৌশলী ক্তিসিবিওস জলঘড়ির উন্নতি সাধন করেন। পাত্রে পানির পরিমাণ কমতে থাকলে পানি প্রবাহের গতিও কমে যায়, যে কারণে প্রাচীন জলঘড়িকে সময় পরিমাপের ধ্রুব বা আদর্শ উপায় হিসেবে ব্যবহার করা যেতো না। ক্তিসিবিওস পাত্রে যাতে সর্বদা পানির পরিমাণ সমান থাকে সে ব্যবস্থা করেন।[১] পরবর্তীতে রোমানরা একটি সিলিন্ডার তথা বেলন এবং একটি বড় জলাধারের মাধ্যমে জলঘড়ি তৈরি করে। জলাধার থেকে জল বেলনে আসে। বেলনের গায়ে লাগানো কাঁটার মাধ্যমে জল কতটুকু বৃদ্ধি পাচ্ছে তা পরিমাপ করা যায়। অনেক কাজেই জলঘড়ি ব্যবহার করা হতো, উল্লেখযোগ্য একটি ব্যবহার ছিল বক্তাদের বক্তৃতার দৈর্ঘ্য পরিমাপ। এই ষোড়শ শতাব্দীতেও জলঘড়ি ব্যবহৃত হয়েছে। গালিলেও তার পড়ন্ত বস্তুর সূত্র বিষয়ক পরীক্ষার জন্য একটি পারদের জলঘড়ি ব্যবহার করেছিলেন।[২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. The Antikythera Mechanism: World's oldest computer, Ali Mcgrath ও Stuart Clarke পরিচালিত ও প্রযোজিত একটি প্রামাণ্য চিত্র
  2. Clepsydra, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, ১৪ মার্চ ২০১৩ তারিখে সংগৃহীত