গরু বা মোষের মল অর্থাৎ গোবর (cowdung) শুকিয়ে গেলে তাকে বাংলায় বলে বলে ঘুঁটে। শুকালে গোবরের চটচটে ভাব বা গন্ধ কোনটিই থাকে না, রংও ভিজে গোবরের থেকে অনেকটা ফরসা হয়ে যায়। ঘুঁটে নানা দেশে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয় এবং নানা দেশে এর নানা নাম (যেমন dung cake, cowdung biscuits, buffalo chips)। ভারতীয় উপমহাদেশে গোবরকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহারের জন্য গোল গোল চ্যাপ্টা চাকতি হিসাবে শুকানো হয়। ঘুঁটে বলতে সাধারণতঃ এই খয়েরী রঙের চাকতিগুলিকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশে এরকম ঘুঁটে ছাড়াও আরেক রকমের ঘুঁটে তৈরি হয়। যেমন পাটখড়ি/পাটকাঠিতে গোবর মাখিয়ে শুকানো হয় এবং তার পর লাকড়ির মত ব্যবহার হয়।

পদ্মা নদীর ধারে দেয়ালের গায়ে চাকতি আকৃতির ঘুঁটে দেওয়া হচ্ছে ; রৌদ্রে শুকিয়ে গেলে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হবে।

প্রস্তুতি: ঘুঁটে দেওয়া সম্পাদনা

সাধারণতঃ নরম থাকতে থাকতে গোবরকে ঘেঁটে সমসত্ত্ব করে গোল তাল পাকিয়ে সেগুলি হাতের সাহায্যে দেওয়াল বা তেমন কোন শক্ত তলের উপর থপ থপ করে থেবড়ে দিয়ে চ্যাপ্টা করা হয়। একে বলে ঘুঁটে দেওয়া

রবীন্দ্রনাথের সহজ পাঠে আছে:

"বড় বৌ, মেজ বৌ, সেজ বৌ মিলে।
ঘুঁটে দেয় ঘরের পাঁচিলে।।"

গোবর হাওয়ার সংস্পর্শে শুকিয়ে শক্ত হয়ে ঘুঁটে হয়ে যায়। জলীয় অংশ কমে যাবার ফলে এর আয়তন সঙ্কোচন হয়। হাতে করে থেবড়ানোর জন্য ঘুঁটের বাইরের তলে হাতের তিন চার আঙুলের ছাপ থাকে। পিছনের তলটি সাধরনতঃ দেওয়ালের ন্যায় সমতল হয়। দেওয়ালগুলি এমন ভাবে বাছা হয় যাতে রোদ পড়ে ও ঘুঁটে তাড়াতাড়ি শুকায়। শুকিয়ে গেলে ঘুঁটে দেওয়াল থেকে সহজেই খসিয়ে নেওয়া যায়। কাঁচা ঘুঁটে দেওয়াল থেকে খোলার চেষ্টা করলে ভেঙে যায়। প্রায় শোকানো ঘুঁটে দেওয়াল থেকে ছাড়িয়ে নেবার পর গোছা গোছা করে রোদে রেখে আরো ভালো করে শুকানো হয়। তখন ঘুঁটে সমতল না থেকে একটু বেঁকে চুরে যেতে পারে। যে ঘুঁটে যত ভালো শুকানো হয় তা ততো সহজে জ্বালান যায়। তাই ভালো করে শুকানো ঘুঁটের কদর বেশি। একএকটি ঘুটে দেখতে বড়সড় মনে হলেও ঘুঁটে সমান আয়তনের কয়লা বা এমনকি কাঠের থেকেও অনেক হালকা।

 
কাঠিতে জড়নো ঘুঁটে শুকনো হচ্ছে দেয়ালে ঠেস দিয়ে।
 
বাংলাদেশের গ্রামে ঘুঁটে ঝুলিয়ে শুকানো হচ্ছে।

জ্বালানি সম্পাদনা

ঘুঁটে জ্বালানি হিসাবে কাজ করে কারণ গরু মোষের মলে অনেক অপরিপাচিত বা অর্ধপাচিত ঘাস ইত্যাদির কাষ্ঠল তন্তু থাকে যা সহজেই জ্বলে। এর কিছু অংশ দাউদাউ করে জ্বলে গেলেও বাকী অংশ অনেক্ষণ অবধি ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে, যাতে ভালো ধীর আঁচের রান্নাও করা যায়।

ধোঁয়া সম্পাদনা

ঘুঁটের আগুনে মাঝারি রকমের ধোঁয়া হয়। এই ধোঁয়ায় ভালোভাবে মশা তাড়ানোর জন্যও অনেকসময় ব্যবহার হয়। গ্রামবাংলায় বিশেষ করে গোয়াল ঘরে রাত্রে মশা তাড়াবার জন্য ঘুঁটের ধুনি জ্বেলে রাখার রেওয়াজ আছে।

 
বিক্রয়ের জন্য বস্তায় সাজিয়ে ঘুঁটে বহন করা হচ্ছে।

ভস্ম: ঘুঁটের ছাই সম্পাদনা

ঘুঁটের ছাই/ভস্ম (Ash) প্রায় সাদা, ঈষৎ কালচে (একে "ছাই ছাই" রং বা ash-color বলা হয়)।ঘুঁটের ছাই অনেক সময় গ্রামে দাঁত মাজার জন্য ব্যবহার হয়। খুব নরম এবং কয়লার ছাইয়ের মত শক্ত নয় (বিশেষ করে কয়লার কাঁকড় হীন) তাই দাঁতের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা কয়লার ছাইয়ের থেকে খুবই কম। কয়লার ছাই দিয়ে দাঁত মাজলে কাঁকড়ে দাঁতের এনামেল ঘষে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

ঘুঁটে সম্পর্কিত বাগধারা ও কথ্য ব্যবহার সম্পাদনা

  • "ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে" মানে নিজের অবশম্ভাবী বিপদ সম্বন্ধে অজ্ঞানতা।
  • "শুকিয়ে ঘুঁটে হওয়া" মানে খুব কড়া ভাবে শুকানো।

গ্রামবাংলায় ঘুঁটে জ্বালানি হিসাবে অত্যন্ত সহজলভ্য হলেও ঘুঁটে দেখতে অমসৃণ, এবং এটি গরুর মল দিয়ে তৈরি বলে এর অপযশ আছেই। "ঘুঁটের মেডেল" বা "ঘুঁটের মালা" ইত্যাদি অসম্মানজনক উপহার হিসাবে ব্যবহার হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা