কালো সোমবার (১৯৮৭)

১৯৮৭ সালের ১৯ অক্টোবরের শেয়ার বাজার ধ্বস

কালো সোমবার (ইংরেজি: Black Monday) হচ্ছে বিশ্ব-ব্যাপী শেয়ার বাজার-এর ধ্স সম্পর্কিত প্রচলিত বহুল-ব্যবহৃৎ ও সবচেয়ে পরিচিত শব্দ; যা মূলতঃ ১৯৮৭ সালে বিশ্ব-ব্যাপী সংঘটিত শেয়ারের মূল্য সূচকের ধ্বসকে বোঝায়। এটি হংকং হতে শুরু করে ইউরোপ পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র হয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত হয়; তবে ভিন্ন সময় অঞ্চলের কারণে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড অঞ্চলে এটি "কালো মঙ্গলবার" হিসাবে পরিচিত।[১][২]

এফটিএসই ১০০ সূচক (১৯ জুলাই ১৯৮৭ হতে ১৯ জানুয়ারি ১৯৮৮)।
ডো জনস্ শিল্প গড় সূচক (১৯ জুলাই ১৯৮৭ হতে ১৯ জানুয়ারি ১৯৮৮)।

মূল্য ধ্বস সম্পাদনা

১৯৮০'এর দশক-এ বিশ্ব-ব্যাপী শেয়ার বাজারের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং এক-ই সঙ্গে বৃদ্ধি পেতে থাকে এর সূচক-এর মান-ও। এই সময়-এ বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারে বিভিন্ন-ভাবে মূল্য-সংশোধন করা হলে-ও বিনিয়োগ-কারীদের আগ্রহ এবং বিশ্ব-ব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির কারণে শেয়ারসমূহের মূল্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।

১৯৮৭ সালের ১৯ অক্টোবর বিশ্ব-ব্যাপী শেয়ার বাজারে এক অভাবনীয় ধ্বস নামে; যা মূলত হংকং-এর শেয়ার বাজার হেংসেং থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বরাবর পশ্চিম দিকে ধেয়ে ইউরোপকে আঘাত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ব্যাপক ধ্স নামায়। ডো জনস্ শিল্প গড় সূচক এক-দিন সর্বোচ্চ ৫০৮.৩২ পয়েন্টে (১,৭৩৮.৭৪ থেকে) নামিয়ে দেয়; শতকরা হিসাবে যা ২২.৬১ ভাগ হ্রাস পায়।[৩]

১৯ অক্টোবর ১৯৮৭ সম্পাদনা

১৯৮৭ সালের ১৯ অক্টোবর হংকং-এ হয় ধ্বস-এর সূচনা, সূচক পড়ে যায় ৪৫.৫%। ধেয়ে চলে তা আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বরাবর পশ্চিম দিকে। সামান্য ধরাশয়ী হয় এশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপ। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপ থেকে আবার শুরু হয় ধ্বংস-লীলা; প্রধান শিকার স্পেন(৩১%) এবং যুক্তরাজ্য (২৬.৪%)। ধ্বস না-থেমে এগিয়ে চলে যুক্তরাষ্ট্র অভিমূখে এবং ধ্বস নামায় ২২.৬% আর কানাডায় (২২.৫%)। এরপর-ও তা না-থেমে ছুটে চলে এবং চূড়ান্তভাবে ধ্বসিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া (৪১.৮) আর নিউজিল্যান্ডের (৬০%) বাজারকে(ব্লাক টুইজ'ডে)!!! আর এসব বাজার পুনরায় ব্লাক মান'ডে-এর পূর্বের অবস্থায় আসতে বেশ কয়েক বছর সময় নেয়; যেমনঃ কানাডা-তে প্রায় আড়াই বছর লেগে যায়!

বিশ্ব-ব্যাপী পুরো অক্টোবর মাস জুড়ে চলা এই ধ্বস-এ সবচেয়ে কম-ক্ষতিগ্রস্ত হয় অস্ট্রিয়ান শেয়ার বাজার (১১.৪%)এবং সর্বোচ্চ হংকং (৪৫.৮%)। বিশ্বের প্রদান ২৩ টি শিল্পোন্নত দেশের মধ্যে ১৯ টি দেশের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে সূচক ২০%-এর-ও বেশি পড়ে গেছে এই-সময়ে!

শেয়ারের মূল্য ধ্বসের কারণ সম্পাদনা

১৯৮০'এর দশক-এ বিশ্ব-ব্যাপী শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার হার বৃদ্ধি পায় এবং সেই সঙ্গে নতুন নতুন কোম্পানী যুক্ত হতে থাকে এখানে। ফলে বৃদ্ধি পেতে থাকে এর সূচক-এর মান-ও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হতে ১৯৮৭ সালের মধ্যে নিউ ইয়র্ক-এ শেয়ার বাজার ২৩ গুন বেশি আয় করে এবং এই সময়-এ ১৪.৫ গুন মূল্য বৃদ্ধি ঘটে।

বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারে এই প্রতিক্রিয়া দেখা গেলে-ও এর-মূল কারণ আজও অজ্ঞাত। প্রধান যে-সব কারণ এই ক্ষেত্র ধারণা করা হয় তার মধ্যে রয়েছেঃ

  • কম্পিউটার বেজড প্রোগ্রাম-এর কারণে;
  • অতি-মূল্যায়িত শেয়ার;
  • তারল্য-সংকট;
  • গুজব ও জুয়াড়ীদের কারসাজি;
  • ইউরোপ ও আমেরিকার বন্ড মার্কেট-এর পতন;
  • জার্মানীর মুদ্রানীতির পরিবর্তনে যুক্তরাস্ট্রের চাপ-প্রয়োগ;
  • জি-৭ ভূক্ত শিল্পোন্নতদেশ-গুলোর মধ্যকার অর্থনৈতিক টানাপোড়ন;
  • যুক্তরাস্ট্র কর্তৃক ইরানি জাহাজ আক্রমণ প্রভৃতি।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Share Price Index, 1987–1998"। ২৫ মে ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  2. "Commercial Framework: Stock exchange, New Zealand Official Yearbook 2000."Statistics New Zealand। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  3. Browning, E.S. (২০০৭-১০-১৫)। "Exorcising Ghosts of Octobers Past"The Wall Street Journal। Dow Jones & Company। পৃষ্ঠা C1–C2। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

  • US History Encyclopedia.
  • Fadiman, Mark. Rebuilding Wall Street: After the Crash of '87, Fifty Insiders Tell About Putting Wall Street Together Again. Englewood Cliffs, N.J.: Prentice Hall, 1992.
  • Metz, Tim. Black Monday: The Catastrophe of October 19, 1987, and Beyond. New York: Morrow, 1988.