কার্লোস জুয়ান ফিনলে (ডিসেম্বর ৩, ১৮৩৩ - আগস্ট ২০, ১৯১৫) ছিলেন একজন কিউবান চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী। তিনি পীতজ্বরের উপর গবেষণা করা প্রথমদিককার বিজ্ঞানীদের মধ্যে একজন।

কার্লোস ফিনলে
কার্লোস ফিনলে
জন্ম(১৮৩৩-১২-০৩)৩ ডিসেম্বর ১৮৩৩
মৃত্যু২০ আগস্ট ১৯১৫(1915-08-20) (বয়স ৮১)
জাতীয়তাকিউবান
মাতৃশিক্ষায়তনজেফারসন মেডিকেল কলেজ
পরিচিতির কারণমশাপীতজ্বর গবেষণা

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা সম্পাদনা

ফিনলের আসল নাম জুয়ান কার্লোস ফিনলে ওয়াই বেরিস। বংশগতির দিক থেকে তিনি ফরাসি ও স্কটিশ বংশদ্ভুত ও কিউবার পোয়ের্তো প্রিন্সিপেতে (বর্তমান কামাগুয়ে) জন্মগ্রহণ করেন। তার নামের শিরোনাম “কার্লোস জুয়ান” তার পরবর্তী জীবনে যুক্ত হয়েছিলো। ১৮৫৩ সালে তিনি পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় জেফারসন মেডিকেল কলেজে যোগদান করেন। ১৮৫৫ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন, এবং হাভানাপ্যারিস থেকে তার শিক্ষা সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে তিনি হাভানায় স্থায়ী হন ও সেখানে চিকিৎসা চর্চা করতেন।

পেশাগত কর্মজীবন সম্পাদনা

১৮৭০-এর দশকের পুরোটা সময় গবেষণা করার পর অবশেষে ১৯০০-এর দিকে তিনি তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছেন। ১৮৮১ সালে তিনিই প্রথম তত্ত্ব দেন যে, পীতজ্বরের বাহক হলো এক ধরনের মশা। এই ধরনের মশা কোন পীতজ্বরে আক্রান্ত মানুষকে কামড় দেয় ও পরবর্তীকালে এটি একটি চক্রানুপাতিক হারে সুস্থ মানুষের মাঝেও ছড়িয়ে পরে।[১] এক বছর পর ফিনলে আবিষ্কার করেন এডিস প্রজাতির একধরনের মশাই পীতজ্বরের জন্য দায়ী। তার তত্ত্বের উপর নির্ভর করে পরবর্তীকালে মশার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও সাথে সাথে রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।

তার অনুমান পরবর্তীকালে ১৯০০ সালে প্রায় ২০ বছর পর ওয়াল্টার রিড কমিশন দ্বারা সফলভাবে প্রমাণিত হয়। ফিনলে ১৯০২ থেকে ১৯০৯ সাল পর্যন্ত কিউবার প্রধান স্থাস্থ্য কর্মকর্তা ছিলেন। যদিও ইতিহাসে ডা. রিডকে পীতজ্বর দমনের জন্য অনেক বেশি কৃতিত্ত্ব দেওয়া হয় কিন্তু ডা. রিড নিজে এই রোগের ধারক বের করা ও নির্মূলের জন্য ফিনলেকে কৃতিত্ত্ব দিয়েছেন। ডা. রিড প্রায়ই তার বিভিন্ন নিবন্ধে ফিনলের গবেষণার উদ্ধৃতি দিতেন।[২]

ডা. ফিনলে ছিলেন হাভানার রয়্যাল একাডেমি অফ মেডিকেল, ফিজিকাল ও ন্যাচারাল সাইন্সের একজন সদস্য। তিনি ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ ও ইংরেজি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারতেন এবং ল্যাটিন পড়তে পারতেন। তার আগ্রহ ছিলো সর্বত্র ও তিনি কুষ্ঠব্যাধি, কলেরা, মাধ্যাকর্ষণ ও উদ্ভিদ রোগ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে নিবন্ধ লিখেছেন। কিন্তু তার প্রধান আগ্রহ ছিলো পীতজ্বরে ও তিনি এ বিষয়ের উপর ৪০টি নিবন্ধ লিখেছেন।

সম্মাননা সম্পাদনা

তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সাতবার চিকিৎসাবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেও একবারও এই পুরস্কার পাননি।[৩] ১৯০৮ সালে তাকে ন্যাশনাল অর্ডার অফ দ্য লিজিয়ন অফ অনার অফ ফ্রান্স উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

ফিনলেকে সম্মান জানিয়ে হাভানা শহরের মারিয়ানো পুরসভায় ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জের আদলে এল ওবেলিস্কো নামক এক সৌধ বর্তমান। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে তার সম্মানে একটি কিউবার ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়।[৪] পানামা সিটিতে ফিনলের একটি মূর্তিও রয়েছে। এছাড়া ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইউনেস্কো তার নামে কার্লোস জে. ফিনলে অণুজীববিজ্ঞান পুরস্কার চালু করেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

ফিনলে হাভানা, কিউবায় তার বাড়িতে গুরুতর স্ট্রোক থেকে মারা যান।

পদটীকা সম্পাদনা

  1. Carlos Juan Finlay (presented: August 14, 1881 ; published: 1882) "El mosquito hipoteticamente considerado como agente de trasmision de la fiebre amarilla" (The mosquito hypothetically considered as an agent in the transmission of yellow fever) Anales de la Real Academia de Ciencias Médicas, Físicas y Naturales de la Habana, 18 : 147-169. Available on-line in English at:
  2. Pierce J.R., J, Writer. 2005. Yellow Jack: How Yellow Fever Ravaged America and Walter Reed Discovered its Deadly Secrets. John Wiley and Sons. আইএসবিএন ০-৪৭১-৪৭২৬১-১
  3. Crosby, M.C. 2006. The American Plague: The Untold Story of Yellow Fever, The Epidemic That Shaped Our History. Berkley Books. আইএসবিএন ০-৪২৫-২১২০২-৫
  4. "Cuba - Mosquito"। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৩ 

তথ্যসূত্র সম্পাদনা