আজমিরীগঞ্জ উপজেলা

হবিগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা

আজমিরীগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। এই উপজেলা হবিগঞ্জ জেলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত।

আজমিরীগঞ্জ
উপজেলা
মানচিত্রে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা
মানচিত্রে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩৩′৪″ উত্তর ৯১°১৫′৬″ পূর্ব / ২৪.৫৫১১১° উত্তর ৯১.২৫১৬৭° পূর্ব / 24.55111; 91.25167 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগসিলেট বিভাগ
জেলাহবিগঞ্জ জেলা
আয়তন
 • মোট২২৩.৯৮ বর্গকিমি (৮৬.৪৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৯৯,২৪০[১]
সাক্ষরতার হার
 • মোট৩৬%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৩৩৬০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৬০ ৩৬ ০২
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

অবস্থান ও আয়তন সম্পাদনা

“ভাটি অঞ্চলের রাজধানী” হিসেবে খ্যাত আজমিরীগঞ্জ উপজেলা[২] বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত। এই উপজেলাকে ঘিরে রয়েছে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলার অন্যান্য উপজেলা। এর উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলা, পূর্বে বানিয়াচং উপজেলা, দক্ষিণে বানিয়াচং উপজেলাকিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলা এবং পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলা

 
আজমিরিগঞ্জ-হবিগঞ্জ হাইওয়ে

ইতিহাস সম্পাদনা

১৯০৭ সালে আসাম সরকার এর অধীনে আজমিরীগঞ্জ থানায় পরিণত হয়। ১৯৮৩ সালে আজমিরীগঞ্জ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। শহরটিতে বেশ কয়েকটি কাঠামোগত সুন্দর বাড়ি রয়েছে, যা ১৮০০ সালের আগে থেকেই ছিল, ত্রিপুরার মহারাজা দ্বারা এইগুলির অর্থায়ন করা হয়েছিল। এই উপজেলার জলসুখাতে রয়েছে অনেক জমিদার বাড়ি। যার ধ্বংসাবশেষ এখনো রয়েছে। গোপীনাথ আখড়াকে কেন্দ্র করে এই উপজেলা থেকেই ঘাটুগানের উৎপত্তি হয়েছিল বলে সিলেটের ইতিবৃত্ত গ্রন্থ থেকে জানা যায়।

নামকরণ সম্পাদনা

আযদাম> আজমার্দীন> আয়েজমাদাম> আবদাবাদ> আজমিরীগঞ্জ

উপমহাদেশের বিশ্ববিখ্যাত সুফী সাধক সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতী আজমিরী (রহ:)র সুযোগ্য প্রতিনিধি কুতুবে রব্বানী হযরত শাহ সুফী আলহাজ্ব হাফিজ খাজা সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক চিশতী (রহ:) প্রায় দেড় শতাব্দী পূর্বে আজমির শরীফের প্রতিনিধি হিসাবে এ প্রাচীন জনপদে পবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসারের লক্ষে সুদূর ভারত হতে হিজরত করে তশরীফ এনেছিলেন। তার পবিত্র প্রচারনায় এবং অসাম্প্রদায়িক পবিত্র বাণীর প্রভাবে ধীরে ধীরে জনসাধারণ দ্বীন ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় লাভ করে এবং সর্বসাধারণ তাকে আজমিরী বাবা বলে অভিহিত করেন। পরবর্তী সময়ে আজমিরী বাবা কুতুবে রব্বানী আউলিয়ায়ে কামিল হযরত শাহ সুফী আলহাজ্ব খাজা হাফিজ সৈয়দ মোহাম্মদ ইসহাক চিশতী (র:) এর পবিত্র স্মৃতির স্মরণে সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এ উপজেলার নাম আজমিরীগঞ্জ নামকরণ করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে আজমিরীগঞ্জ সম্পাদনা

আজমিরীগঞ্জের বদলপুর অপারেশন ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি একটি বিশাল সাফল্য। বদলপুরে শত্রুসেনারা দাস পার্টির প্রতিরোধের মুখে পাকসেনারা শক্তি বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়। গুলি ছোড়ার জন্য হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয়। ১৬ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাপাকবাহিনীদের মধ্যে দীর্ঘ আঠারো ঘণ্টার সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে দাস পার্টির কমান্ডার জগৎজ্যোতি দাস বীর বিক্রম শহীদ হয়। এছাড়া, পাকবাহিনী নির্দোষ ১১ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে।

প্রশাসনিক এলাকা সম্পাদনা

 
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ

আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম আজমিরীগঞ্জ থানার আওতাধীন।[৩]

পৌরসভা:
ইউনিয়নসমূহ:

ভূপ্রকৃতি সম্পাদনা

 
কুশিয়ারা নদী

হাওর বেষ্টিত ভাটি বাংলার একটি জনপদ এই আজমিরীগঞ্জ। যার পশ্চিম পাশ ঘেষে বয়ে গেছে সুরমা-কুশিয়ারার মিলিত স্রোত কালনি-কুশিয়ারা- ভেড়ামোহনা। বছরের অর্ধেক সময় জলমগ্র থাকে অধিকাংশ এলাকা। দোআশ ও এটেল মাটি

সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

ভাষা সম্পাদনা

এখানে ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার মতই, তবুও কিছুটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। এখানে সিলেটি ভাষার সাথে সাথে বিভিন্ন আদিবাসীদের প্রচলিত ভাষাও প্রচলিত রয়েছে।

উৎসব সম্পাদনা

প্রতি বৎসর ওরশ, বৈশাখী, মেলা,নৌকা বাইছ অনুষ্ঠিত হয়।

খেলাধুলা সম্পাদনা

অতিতে হাডুডু, দারাগুড়ি,ননদাই,কানামাছি,খেলার রেওয়াজ ছিল। বর্তমানে ক্রিকেট ও ফুলবল খেলার প্রচলন আছে।

জনসংখ্যার উপাত্ত সম্পাদনা

২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী,আজমিরীগঞ্জের জনসংখ্যা ৯৯,২৪০ জন (প্রায়)।জনসংখ্যার পুরুষ ৫০,১৬০ জন (প্রায়) (৫১.১১%) এবং নারী ৪৯,০৮০ জন (প্রায়) (৪৮.৮৯%)।

জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪৪৩ জন।

শিক্ষা সম্পাদনা

আজমিরীগঞ্জের শিক্ষার হার ৩৬%।এখানে ৫৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,৮ টি উচ্চ বিদ্যালয়,১ টি দাখিল মাদ্রাসা,২ টি কলেজ রয়েছে। ১৯৭৫ সালে মিয়াধন মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,আজমিরীগঞ্জ ও ১৮৭৬ সালে জলসুখা কৃষ্ণ গোবিন্দ পাবলিক হাইস্কুল ও ৯৩০ সালে আজমিরীগঞ্জ এমালগামেটেড বীরচরণ(এ.বি.সি.) সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এবং ১৯২০ সালে শিবপাশা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

অর্থনীতি সম্পাদনা

আজমিরীগঞ্জ এর প্রধান প্রাকৃতিক সম্পদ হলো মাছ ও ধান। এ উপজেলায় রয়েছে বৃহৎ ফিশ ইন্ড্রাসট্রিস। এ উপজেলার মানুষ মূলত ধান ও মাছের উপর নির্ভরশীল।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব সম্পাদনা

  • জগৎজ্যোতি দাস (১৯৪৯-১৯৭১), স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
  • স্বামী গহনানন্দ (১৯১৬-২০০৭),সনাতন ধর্মগুরু, রামকৃষ্ণ মিশন এর ১৪শ তম প্রেসিডেন্ট।
  • মরহুম হাফিজ উদ্দিন আফাই (১৯৭৭-১৯৮০-১৯৮০) ইং সালে পর্যন্ত টানা তিন বার আজমিরীগঞ্জ ১ নং সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন । তিনি ততকালীন সময় বাংলাদেশে সেরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান স্থান অর্জন করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্টপতি তাঁকে সেরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদকে পুরস্কৃত করেন । পরবর্তী তিনি আজমিরীগঞ্জ উপজেলা পরিষদে (১৯৮৫-১৯৮৯) ইং সাল পর্যন্ত টানা ২ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ও বাংলাদেশ সরকারে সেরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদকের স্থান অর্জন করেন ।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার (জুন ২০১৪)। "এক নজরে আজমিরীগঞ্জ"বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি ও বেসিস। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "আজমিরীগঞ্জ পৌরসভা গঠনের দশ বছরেও নির্বাচন হয়নি"দৈনিক যুগান্তর। ৩০ জুন ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  3. "ইউনিয়নসমূহ - আজমিরীগঞ্জ উপজেলা"ajmiriganj.habiganj.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ৩ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা