মুর্শিদাবাদের নবাব

মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর বা মুর্শিদাবাদের নবাব পশ্চিমা আভিজাতিক মর্যাদার অনুরূপ বাংলার একটি বংশগত খেতাব ছিল। তারা ছিলেন বাংলার প্রাক্তন নবাবদের সরাসরি বংশধর যারা বাংলার কার্যত শাসক ছিলেন এবং এর ধন ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ছিলেন। হাসান আলী মীর্জা এর সূচনা করেন। ১৯৬৯ সালে ওয়ারিশ আলী মীর্জার মৃত্যুর পর খেতাবটি স্থগিত রাখা হয় ও পরে বিলুপ্ত হয়। আগস্ট ২০১৪ সালে ভারতীয় সর্বোচ্চ আদালত রায় দেয় যে তার ভাগ্নে আব্বাস আলী মীর্জা মুর্শিদাবাদের নবাবের একজন উপযুক্ত উত্তরাধিকারী।[২]

মুর্শিদাবাদের নবাব
সূচনার তারিখ১৮৮২
প্রথম খেতাবধারীহাসান আলী মীর্জা
সর্বশেষ খেতাবধারীওয়ারিশ আলী মীর্জা
বর্তমান খেতাবধারীআব্বাস আলী মীর্জা (দাবিকারী)[১]
বিলুপ্তির তারিখ১৯৬৯
আসনহাজারদুয়ারী প্রাসাদ
ওয়াসেফ মঞ্জিল

ইতিহাস সম্পাদনা

 
হাজারদুয়ারী প্রাসাদ মুর্শিদাবাদের খেতাবি নবাবদের আসন ছিল।

মুর্শিদাবাদের নবাব উপাধিটি বাংলার নবাবদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল, কেননা তারা মুর্শিদাবাদ শহরে বসবাস করত যেটি বাংলার নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলার শেষ খেতাবপ্রাপ্ত নবাব নাজিম নবাব মনসুর আলী খানের সময় পর্যন্ত উপাধিটি বাংলার নবাবের পাশাপাশি সমার্থকভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। তার শাসনামলে মুর্শিদাবাদের নিজামত ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ১৮৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নবাব মুর্শিদাবাদ ছেড়ে ইংল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। ১৮৮০ সালে বাংলার নবাব উপাধি বিলুপ্ত হয়।[৩] ১৮৮০ সালের অক্টোবরে তিনি ব্রিটিশ রাজের আদেশের বিরুদ্ধে তার মামলার আবেদন জানাতে বোম্বে যান, কিন্তু সেটা অমীমাংসিত ছিল। তাই ১ নভেম্বর ১৮৮০ সালে নবাব তার বড় ছেলে হাসান আলী মীর্জার স্বার্থে তাকে উত্তরাধিকার করে নিজের সম্মান ও খেতাব ত্যাগ করে পদত্যাগ করেন।[৩] মীর্জা ও তার বংশধররা কেবল মুর্শিদাবাদের নবাব উপাধিতে পরিচিত ছিলেন এবং তখন থেকে তারা সেই আভিজাতিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হোন।[৪]

নবাব মনসুর আলী খানের পদত্যাগের পর মুর্শিদাবাদের নবাবগণ নবাব নাজিমদের স্থলাভিষিক্ত হন।[৫][৩][৬] নবাব বাহাদুরগণ প্রকাশ্যে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে যেকোনো পর্যায়ে ক্ষমতা ব্যবহার করা বন্ধ করে দেন।[৫] তারা জমিদারের মর্যাদায় নিযুক্ত হন। তারা একটি ধনী ভারতীয় পরিবার হয়ে আমলা ও সেনা কর্মকর্তা জন্ম দেয়। যাইহোক, বাংলায় তাদের রাজনৈতিক প্রভাব ঢাকার নবাবদের দ্বারা স্থিমিত হয়ে যায়। মুর্শিদাবাদের নবাব পরিবারের সদস্যরা পাকিস্তান আন্দোলনের অংশ ছিলেন। ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় র‍্যাডক্লিফ রেখা মুর্শিদাবাদ জেলাকে পাকিস্তানে দেওয়ায় হাজারদুয়ারী প্রাসাদে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু ১৭ আগস্টে দুই দেশ অঞ্চল বিনিময়ের পর স্পষ্ট হয় যায় যে জেলাটি ভারতীয় অধিরাজ্যের অধীনে পড়বে। এটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে ফেলে প্রাসাদের উপরে ভারতীয় তেরঙ্গা উত্তোলন করা হয়।[৭] পরিবারের একজন সদস্য ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানের গভর্নর-জেনারেলপ্রথম রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৫৯ সালে ওয়াসেফ আলী মীর্জা তৃতীয় নবাব বাহাদুর হয়ে আসেন।[৮] তার স্থলাভিষিক্ত ওয়ারিশ আলী মীর্জা হন যিনি ১৯৬৯ সালে মারা যান।[৯] তিনি তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে যান। তার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ চলে আসে কারণ তিনি তার বড় ছেলে ওয়াকিফ আলী মীর্জাকে অমুসলিম মেয়ে বিয়ে করার জন্য উত্তরাধিকার থেকে বাদ দেন। ওয়ারিশ আলী তার জীবদ্দশায় নিজ উত্তরাধিকারী প্রতিষ্ঠার জন্য কোন পদক্ষেপ নেননি। তার এই ইচ্ছা বিতর্কিত ছিল।[১০] ভারত সরকার ১৯৭১ সালে রাজকীয় পরিবারের জন্য বিশেষাধিকার প্রত্যাহার করে।[১১][১০]

নবাবের তালিকা সম্পাদনা

মুর্শিদাবাদের নবাবগণ দ্বারা বাংলার নবাব পরিবার প্রতিস্থাপিত হয়েছে।[৫][৩] ওয়ারিশ আলী মীর্জা সর্বশেষ নবাব ছিলেন যিনি আইনত এই উপাধি ধারণ করেন। আব্বাস আলী মীর্জা ওয়ারিশ আলীর বৈধ উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি পান। এই উপাধি বর্তমানে শুধুমাত্র কার্যত ও যেকোনো আইনি প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।[১১]

চিত্র নাম জন্মকাল রাজত্বকাল মৃত্যুকাল
  সৈয়দ হাসান আলী মীর্জা
سید حسن علی میرزا
২৫ আগস্ট ১৮৪৬ ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৮২ – ২৫ ডিসেম্বর ১৯০৬ ২৫ ডিসেম্বর ১৯০৬[৬]
  সৈয়দ ওয়াসেফ আলী মীর্জা
سید واصف علی میرزا
৭ জানুয়ারি ১৮৭৫ ডিসেম্বর ১৯০৬ – ২৩ অক্টোবর ১৯৫৯ ২৩ অক্টোবর ১৯৫৯[১২]
  সৈয়দ ওয়ারিশ আলী মীর্জা
سید وارث علی میرزا
১৪ নভেম্বর ১৯০১ ১৯৫৯ – ২০ নভেম্বর ১৯৬৯ ২০ নভেম্বর ১৯৬৯[১০]
বিতর্কিত/স্থগিত (২০ নভেম্বর ১৯৬৯ – ১৩ আগস্ট ২০১৪)[৯][১৩]
  সৈয়দ আব্বাস আলী মীর্জা
سید عباس علی میرزا
আনু. ১৯৪২ ১৩ আগস্ট ২০১৪ (বৈধ উত্তরাধিকারী ঘোষিত)

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Mahato, Sukumar (২০ আগস্ট ২০১৪)। "Murshidabad gets a Nawab again, but fight for assets ahead"The Times of India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৮ 
  2. The Times of India (২০ আগস্ট ২০১৪)। "Murshidabad gets a Nawab again, but fight for assets ahead"। সংগ্রহের তারিখ ১২ মার্চ ২০১৫ 
  3. "Murshidabad History – Feradun Jah"Murshidabad.net। ৮ মে ২০১২। ২ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১২ 
  4. Sir George Watt (১৯৮৭)। Indian Art at Delhi 1903: Being the Official Catalogue of the Delhi Exhibition 1902–1903। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 4। আইএসবিএন 978-81-208-0278-0 
  5. "Murshidabad History – The Nawabs and Nazims"। Murshidabad.net। ৮ মে ২০১২। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১২ 
  6. "Hassan Ali Mirza's succession"Murshidabad.net। ৮ মে ২০১২। ২ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১২ 
  7. "Nawabs' Murshidabad House lies in tatters"The Times of India। ৫ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৬On 15 August 1947, the Radcliffe Award allotted the district of Murshidabad to Pakistan and the flag of Pakistan was hoisted at the Hazarduari Palace but within two days the two dominions exchanged with Khulna, which is now in Bangladesh, and then the flag of India was hoisted at the grand palace on 17 August 1947. 
  8. E. W. R. Lumby (১৯৫৪)। The Transfer of Power in India, 1945-7। George Allen and Unwin। পৃষ্ঠা 232। ওসিএলসি 5413266 
  9. Mahato, Sukumar (২০ আগস্ট ২০১৪)। "Murshidabad gets a Nawab again, but fight for assets ahead"The Times of India। ২৬ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০১৫ 
  10. "Murshidabad History – Waresh Ali"murshidabad.net। ২৪ আগস্ট ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১২ 
  11. "Twenty Sixth Amendment to the Indian Constitution"। Indiacode.nic.in। ২৮ ডিসেম্বর ১৯৭১। ৬ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৭ 
  12. Company, East India (১৮০৭)। Papers Presented to the House of Commons Concerning the Late Nabob of the Carnatic (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 118। 
  13. "Portrait of an accidental Nawab"The Times of India। ২২ আগস্ট ২০১৪। ২৩ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০১৫ 

আরও পড়ুন সম্পাদনা

  • চৌধুরী, মৌমিতা (১৭ জানুয়ারি ২০২১)। "Mir of the Metaphor"দ্য টেলিগ্রাফ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০২৪